দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক -নাগরিক ঐক্যের অবস্থান কর্মসূচি
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে জাতীয় ঐক্য গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা বলেছেন, দুর্নীতির মূল উৎস খুঁজে বের করতে হবে। যারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় তাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিক কাজ হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হবে। কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুর্নীতিবিরোধী এ অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশে রূপ নেয়। গতকালের এই সমাবেশ থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হলেও পুলিশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি দেয়।
এছাড়া আগামী জুন মাসের আগে আরেকটি সমাবেশ ও গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয় নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে গণস্বাস্থ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যে পুলিশ মানুষকে রাস্তা পার হওয়া শেখায় সেই পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে অনুমতি দেয় না। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। দেশে গণতন্ত্রের নামে ভাওতাবাজি করা হয়। এখানে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন হয় না।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কারা দুর্নীতি করে আর কারা করে না- সে বিষয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেক দুর্নীতিবাজকে টেলিভিশনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়। তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতির মহরত শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসময় বিহারি ও হিন্দুদের বাড়ি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। ’৭২-এ বিদেশ থেকে আসা রিলিফের কাপড় বিক্রি করে অনেকে কোটিপতি হয়েছেন। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দুর্নীতি হয় না। আমাদের সব উন্নয়ন কাজ দুর্নীতির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে পরিমাণ বিদেশী সাহায্য এসেছে তা দিয়ে বাংলাদেশের সমান দু’টি দেশকে সমৃদ্ধ করা যেতো। দেশের ৮০ শতাংশ সম্পদ দুর্নীতিই গ্রাস করে ফেলছে। সাধারণ মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১লা জানুয়ারি থেকে যারা দুর্নীতি করবে তাদের নাম দেয়ালে চক দিয়ে লিখে রাখা হবে। সরকারি আমলা থেকে শুরু করে সব দুর্নীতিবাজদের নাম সাধারণ মানুষ প্রচার করে বেড়াবে। এভাবে আন্দোলন চলবে। নতুন প্রজন্মকে অভিনব মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে হবে। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে টাকা ছাড়া কাজ হয়। যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর যাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল জনগণ তাদের কাছেই বেশি আঘাত পেয়েছে। দুর্নীতির মূলে আঘাত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ সচিবদের প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে লুটপাট করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সরকারকে বিশ্বদুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ’৯০-এ কামরুল হাসান এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে এরশাদকে বিশ্ববেহায়া বলেছিলেন। ২০১৪ সালে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই সরকারকে বিশ্বদুর্নীতিবাজ ঘোষণা দিচ্ছি। যে সরকার ভোটার ছাড়া নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় বাংলাদেশে। অথচ এই দেশে পানি পেতেও ঘুষ দিতে হয়। আমার বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব প্রতিষ্ঠান এখন দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের সবই আছে কাগজ-কলমে। কিন্তু ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। এই দুর্নীতি দূর করতে না পারলে রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের চেয়েও কয়েক গুণ সম্পদশালী দেশ ঘুষের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। সার্টিফিকেটে দুর্নীতি, প্রশ্নপত্রে দুর্নীতি, নির্বাচনী দুর্নীতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুদক এখন দুর্নীতির প্রসারে কাজ করছে। একদল ক্ষমতায় এলে অন্য দলের দুর্নীতির বিচার শুরু করে। সরকারি দলে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিচার প্রথমে করার দাবি জানান তিনি।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তার আশপাশের সবাই চাটুকার। আর এখন তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন তার দলের সবাইকে টাকা দিয়ে কেনা যায়। তার মানে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের লোকেরাই তাকে দুর্নীতির মধ্যে ঘিরে রেখেছেন। দুর্নীতি আজ সমাজে দুর্গন্ধে পরিণত হয়েছে। এটা সব মানুষকে আক্রান্ত করছে। এর থেকে বাংলাদেশের পতাকাকে রক্ষা করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পিডব্লিউডি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেখাশোনা করে। অথচ সেখানে সমাবেশ করতে হলে নাকি পুলিশের অনুমতি লাগে। আজকাল দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেও পুলিশের অনুমতি লাগে। পুলিশ বলছে, উপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। উপর যে কত উপরে সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আগামীকাল (শনিবার) ওয়ার্কার্স পার্টি সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করবে। এর আগে আওয়ামী লীগ অনুমতি পেয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদক্ষেপের ভূমিকার সমালোচনা করে মান্না বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ফেসবুক বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেননি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় সব রাজনৈতিক দল অঙ্গীকার করেছিল যে স্বৈরাচারদের কাউকে দলে নেয়া হবে না। কিন্তু ওই সময়ের প্রায় অর্ধেক সুবিধাভোগীকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুনর্বাসন করেছে। কোন আবেগ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেননি দাবি করে মান্না বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইটা হবে দীর্ঘস্থায়ী। দুর্নীতিবাজ মানে শুধু আর্থিক দুর্নীতিবাজ নয়। রাজনীতিকে যারা কলুষিত করে তারাও দুর্নীতিবাজ। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা নতুনভাবে নির্বাচন দিতে বলেন তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজাতে বলেন না। তার মনে করেন কোন রকম একটা নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যেতে পারবেন। তারা কর্মসূচি দেন কিন্তু রাজপথে থাকেন না। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন না। ক্ষমতায় থাকতে সরকার নতুন করে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিচ্ছে দাবি করে মান্না বলেন, পুলিশের ও র্যাবকে দুর্র্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে এ সরকার।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যে দল ক্ষমতায় থাকে আইন করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়। নিজেদের লোকদের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য নতুন নতুন আইন করে। কুইক রেন্টাল ও রেন্টালের নামে সরকারের লোকেরা লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। অথচ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) এম এ মান্নান বলেন, গত ১০ বছরে দেশের বাজেট থেকে সরকারি দলের লোকেরা ৫ লাখ কোটি টাকা লুট করেছে। জাতীয় সম্পদের ৫০ শতাংশ লুট হয়ে গেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার কোষাধ্যক্ষ আলী জাফর প্রমুখ। কর্মসূচিতে কিশোরগঞ্জ, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।
এছাড়া আগামী জুন মাসের আগে আরেকটি সমাবেশ ও গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয় নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে গণস্বাস্থ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যে পুলিশ মানুষকে রাস্তা পার হওয়া শেখায় সেই পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে অনুমতি দেয় না। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। দেশে গণতন্ত্রের নামে ভাওতাবাজি করা হয়। এখানে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন হয় না।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কারা দুর্নীতি করে আর কারা করে না- সে বিষয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেক দুর্নীতিবাজকে টেলিভিশনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়। তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতির মহরত শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসময় বিহারি ও হিন্দুদের বাড়ি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। ’৭২-এ বিদেশ থেকে আসা রিলিফের কাপড় বিক্রি করে অনেকে কোটিপতি হয়েছেন। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দুর্নীতি হয় না। আমাদের সব উন্নয়ন কাজ দুর্নীতির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে পরিমাণ বিদেশী সাহায্য এসেছে তা দিয়ে বাংলাদেশের সমান দু’টি দেশকে সমৃদ্ধ করা যেতো। দেশের ৮০ শতাংশ সম্পদ দুর্নীতিই গ্রাস করে ফেলছে। সাধারণ মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১লা জানুয়ারি থেকে যারা দুর্নীতি করবে তাদের নাম দেয়ালে চক দিয়ে লিখে রাখা হবে। সরকারি আমলা থেকে শুরু করে সব দুর্নীতিবাজদের নাম সাধারণ মানুষ প্রচার করে বেড়াবে। এভাবে আন্দোলন চলবে। নতুন প্রজন্মকে অভিনব মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে হবে। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে টাকা ছাড়া কাজ হয়। যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর যাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল জনগণ তাদের কাছেই বেশি আঘাত পেয়েছে। দুর্নীতির মূলে আঘাত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ সচিবদের প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে লুটপাট করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সরকারকে বিশ্বদুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ’৯০-এ কামরুল হাসান এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে এরশাদকে বিশ্ববেহায়া বলেছিলেন। ২০১৪ সালে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই সরকারকে বিশ্বদুর্নীতিবাজ ঘোষণা দিচ্ছি। যে সরকার ভোটার ছাড়া নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় বাংলাদেশে। অথচ এই দেশে পানি পেতেও ঘুষ দিতে হয়। আমার বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব প্রতিষ্ঠান এখন দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের সবই আছে কাগজ-কলমে। কিন্তু ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। এই দুর্নীতি দূর করতে না পারলে রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের চেয়েও কয়েক গুণ সম্পদশালী দেশ ঘুষের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। সার্টিফিকেটে দুর্নীতি, প্রশ্নপত্রে দুর্নীতি, নির্বাচনী দুর্নীতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুদক এখন দুর্নীতির প্রসারে কাজ করছে। একদল ক্ষমতায় এলে অন্য দলের দুর্নীতির বিচার শুরু করে। সরকারি দলে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিচার প্রথমে করার দাবি জানান তিনি।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তার আশপাশের সবাই চাটুকার। আর এখন তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন তার দলের সবাইকে টাকা দিয়ে কেনা যায়। তার মানে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের লোকেরাই তাকে দুর্নীতির মধ্যে ঘিরে রেখেছেন। দুর্নীতি আজ সমাজে দুর্গন্ধে পরিণত হয়েছে। এটা সব মানুষকে আক্রান্ত করছে। এর থেকে বাংলাদেশের পতাকাকে রক্ষা করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পিডব্লিউডি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেখাশোনা করে। অথচ সেখানে সমাবেশ করতে হলে নাকি পুলিশের অনুমতি লাগে। আজকাল দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেও পুলিশের অনুমতি লাগে। পুলিশ বলছে, উপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। উপর যে কত উপরে সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আগামীকাল (শনিবার) ওয়ার্কার্স পার্টি সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করবে। এর আগে আওয়ামী লীগ অনুমতি পেয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদক্ষেপের ভূমিকার সমালোচনা করে মান্না বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ফেসবুক বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেননি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় সব রাজনৈতিক দল অঙ্গীকার করেছিল যে স্বৈরাচারদের কাউকে দলে নেয়া হবে না। কিন্তু ওই সময়ের প্রায় অর্ধেক সুবিধাভোগীকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুনর্বাসন করেছে। কোন আবেগ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেননি দাবি করে মান্না বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইটা হবে দীর্ঘস্থায়ী। দুর্নীতিবাজ মানে শুধু আর্থিক দুর্নীতিবাজ নয়। রাজনীতিকে যারা কলুষিত করে তারাও দুর্নীতিবাজ। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা নতুনভাবে নির্বাচন দিতে বলেন তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজাতে বলেন না। তার মনে করেন কোন রকম একটা নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যেতে পারবেন। তারা কর্মসূচি দেন কিন্তু রাজপথে থাকেন না। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন না। ক্ষমতায় থাকতে সরকার নতুন করে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিচ্ছে দাবি করে মান্না বলেন, পুলিশের ও র্যাবকে দুর্র্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে এ সরকার।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যে দল ক্ষমতায় থাকে আইন করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়। নিজেদের লোকদের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য নতুন নতুন আইন করে। কুইক রেন্টাল ও রেন্টালের নামে সরকারের লোকেরা লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। অথচ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) এম এ মান্নান বলেন, গত ১০ বছরে দেশের বাজেট থেকে সরকারি দলের লোকেরা ৫ লাখ কোটি টাকা লুট করেছে। জাতীয় সম্পদের ৫০ শতাংশ লুট হয়ে গেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার কোষাধ্যক্ষ আলী জাফর প্রমুখ। কর্মসূচিতে কিশোরগঞ্জ, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।
No comments