সামুদ্রিক গ্যাস উত্তোলনে বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ যে প্রাকৃতিক গ্যাসের মালিক হয়েছে তা হতে পারে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় মজুত। কিন্তু বিদেশী কোম্পানিগুলো এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে। বাংলাদেশে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। প্রশাসনে রয়েছেন অদক্ষ কর্মকর্তা। এ সব কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলো এ খাতে এগিয়ে আসছে না। বাংলাদেশও কাউকে এক্ষেত্রে উজ্জীবিত করতে পারছে না। সম্প্রতি অনলাইন বিজনেস ভ্যাঙ্কুভার এ খবর দিয়েছে। ‘ফরেন কোম্পানিজ লিয়ারি অব বাংলাদেশজ গ্যাস ফিল্ডস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন জোনাথন ম্যানথর্প। এতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ গ্যাসফিল্ডগুলোর মীমাংসার মাধ্যমে মালিক হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে উন্নয়ন কাজে বিদেশী কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের এ খাত থেকে নিজেদের দূরে রাখছে। এর কারণ উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ। মিয়ানমার তার রাখাইন উপকূলে ও ভারত তার মহানদী উপকূলে যে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে তাতে বাংলাদেশের এ খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করায় ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ যে গ্যাস ক্ষেত্রের মালিক হয়েছে তাতে কমপক্ষে ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত আছে বলে ধারণা করা হয়। এর ফলে এটি হবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় গ্যাসের মজুতাগার। ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে রয়েছে বাংলাদেশী গ্যাসের সহ প্রবেশের সুবিধা। বাংলাদেশ তার ১১টি উপকূলীয় ব্লকের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ২০১২ সালে। তখন মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। তবে গভীর সমুদ্রে অবস্থিত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর জন্য কোন দরপত্র জমাই পড়ে নি। গত বছর জুলাইয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে যে রায় হয়েছে তা-ও তেমন উৎসাহব্যঞ্জক নয়। ওই সময় রায়ে বিরোধ নেই বঙ্গোপসাগরের উত্তরাঞ্চলে এমন বিশাল একটি এলাকার মালিক হয় বাংলাদেশ। এপ্রিলে জাতীয় তেল বিষয়ক কোম্পানি পেট্রোবাংলা সমুদ্র উপকূলে তেলের ব্লকের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তখন গভীর সমুদ্রে মাত্র তিনটি ব্লকের জন্য দরপত্র জমা দেয় যৌথভাবে স্ট্যাটওয়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো ফিলিপস। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের কারণে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে নিরুৎসাহিত করছে। এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় কয়েক শ’ মানুষ নিহত হন। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মধ্যে এখনও সম্পর্ক ঘোলাটে। সহজেই তা আরও সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ। এখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো খাদ্য ও জ্বালানির মতো ইস্যুতে গড়ে তুলেছে ভর্তুকি দেয়ার একটি রীতি। একই সঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচকে ১৭৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬ নম্বরে। এমনকি যখন সিস্টেম কাজ করেও তখন ভর্তুকির সামান্য অংশই যথাযথ স্থানে পৌঁছে। এ জন্য তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের অবকাঠামো উন্নয়নে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করছে না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো তাদের হিসাবে দেখছে, বাংলাদেশ সরকার, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিশেষজ্ঞ বা প্রশিক্ষিত ব্যক্তির অভাব। ওই রিপোর্টের শেষের দিকে বলা হয়েছে, এখন বাংলাদেশ সরকারকে বুঝতে হবে যে, জনগণকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনতে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। তবে এ সব সম্পদের উন্নয়ন করার মতো দক্ষতা নেই বাংলাদেশের। যারা এক্ষেত্রে ভাল বা দক্ষ তাদের খুঁজে নেয়া উচিত।
No comments