রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান -জাতিসঙ্ঘের খসড়া প্রস্তাব
জাতিসঙ্ঘের এক নতুন খসড়া প্রস্তাবে
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘সমতাভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার
প্রদানের’ আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিগত পরিচয়ের জন্য মিয়ানমার সরকার
রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব শর্তারোপ করেছে রোহিঙ্গা মুসলমানেরা তা প্রত্যাখ্যান
করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রণীত খসড়া প্রস্তাবটি গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা
এপির হস্তগত হয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে মিয়ানমার যে তৎপরতা
চালাচ্ছে তা পরিবর্তন করতে দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ হিসেবে এ প্রস্তাব
প্রণয়ন করা হয়েছে। মিয়ানমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন
অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে জাতিসঙ্ঘ এ পদক্ষেপ গ্রহণ করল। চলতি মাসের মাঝামাঝি
সময়ে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্ব
নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। বহুদশক ধরে চলা নিবর্তনমূলক সেনা শাসনের নিগড় থেকে
বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টারত বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু দেশ
মিয়ানমারের জন্য ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমস্যাটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে
পরিণত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং দেশটিতে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী এ মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তার সব অধিকার থেকে মিয়ানমার বঞ্চিত করেছে। বৌদ্ধ ভিুদের নেতৃত্বে বৌদ্ধদের হামলায় শত শত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন জীবন ভয়ে ও এক লাখ ৪০ হাজার বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং দেশটিতে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী এ মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তার সব অধিকার থেকে মিয়ানমার বঞ্চিত করেছে। বৌদ্ধ ভিুদের নেতৃত্বে বৌদ্ধদের হামলায় শত শত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন জীবন ভয়ে ও এক লাখ ৪০ হাজার বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
>>থাইল্যান্ডে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা ব্যাংককে মিয়ানমার দূতাবাসের বাইরে পোস্টার হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার সময় একজন পুলিশকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় : ইন্টারনেট
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালী’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করতে চাচ্ছে। তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদের শনাক্ত করতে মিয়ানমার সরকার তাদের এ পরিচিতি গ্রহণে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। অথচ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা দেশটিতে বসবাস করে আসছেন। এতে রোহিঙ্গারা কার্যত রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে এবং কোনো দেশই তাদের গ্রহণ করতে চায় না। মিয়ানমার সরকার মূলত রোহিঙ্গাদের চিরতরে নির্মূল করার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন রাখাইন বা আরাকান রাজ্যে বসবাস করে। মিয়ানমারের সাবেক জেনারেল ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ‘রাখাইন অ্যাকশন প্লান’ এ রোহিঙ্গাদের কেবল নাগরিকত্ব লাভের অযোগ্যই ঘোষণা করা হয়নি উপরন্তু তাদের গ্রেফতার ও দেশ থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কমিটির কাছে প্রস্তাবটি এখন পেশ করা হবে। এটি অবশ্য একটি বাধ্যবাধকতাহীন প্রস্তাব। তবে প্রস্তাবটির পক্ষে বিপুল ভোট মিয়ানমারের কাছে এ বার্তা দেয়া হবে, আন্তর্জাতিক জনমত তাদের পক্ষে নয়। কমিটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত মিয়ানমারের কূটনীতিক শুক্রবার ফোনে বলেন, ‘ প্রস্তাবটির ব্যাপারে মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি।’
ওবামা সফরে আসছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা চলতি মাসে মিয়ানমার সফরের পরিকল্পনা করেছেন। প্রেসিডেন্টের এই সফরের আগে আগে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারকে অবজ্ঞা করার কারণে মিয়ানমারের প্রভাবশালী এক পার্লামেন্ট সদস্য ব্যবসায়ীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ওবামা প্রশাসন।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের বর্তমান নি¤œক সদস্য অঙ থাঙ দেশটির গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিরোধিতা করছেন।
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিদেশী সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দফতরের প্রধান অ্যাডাম জুবিন বলেছেন, মিয়ানমার ইতিবাচক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারকে সচেতনভাবে অবজ্ঞা করে অঙ থাঙ সহিংসতা, দমন ও দুর্নীতিকে দীর্ঘায়িত করছেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অঙ থাঙের কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তার সাথে কোনো ধরনের লেনদেন না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাংকও যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের সাথে লেনদেন এড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি পরিচালক জন সিফটন বলেছেন, অঙ থাঙের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অতীতের দমন-পীড়নে তার ভূমিকা এবং বর্তমানে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাভের জন্য সরকারি পদের অপব্যবহার যার মধ্যে ভূমি আত্মসাৎ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও জোরপূর্বক শারীরিক শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
ওবামার সফরের আগে এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ওয়াশিংটন এই বার্তা দিতে চায় যে মিয়ানমার রূপান্তরের ধারায় যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট নয়, কারণ সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্কিত অনেক অভিজাত রূপান্তরের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, বলেন সিফটন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিয়েন সিয়েনের সাথে ফোনালাপে রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলিম এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রার জন্য জাতীয় অস্ত্রবিরতির প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
No comments