সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
ছেচল্লিশ
নদীমাতৃক এ দেশে নৌকা ছিল মানুষের সাধারণ বাহন। সড়কপথে সাধারণত গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হতো। রাজপুরুষ বা সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনে প্রচলিত ছিল ঘোড়া বা হস্তীটানা রথ। প্রাচীন মৃৎফলক দেখে বোঝা যায়, সে যুগে গরুর গাড়ি দেখতে বর্তমান সময়ের মতোই ছিল।
প্রাচীন সূত্রের সাক্ষ্য অনুযায়ী, সেকালে মানুষ সেলাইবিহীন বস্ত্র পরায় অভ্যস্ত ছিল। সাধারণ পুরুষ ও রমণীরা যথাক্রমে ধুতি ও শাড়ি পরত। অবস্থাপন্ন পুরুষরা গায়ে জড়াত চাদর ও নারীরা ব্যবহার করত ওড়না। প্রাচীন ফলকচিত্র থেকে বোঝা যায়, অনেক মনোযোগের সঙ্গে কেশবিন্যাসে অভ্যস্ত ছিল
বাঙালি রমণী। এলোকেশী রমণীদের সংখ্যা ফলকচিত্রে খুব অল্প ছিল। বেশিরভাগ রমণী চমৎকার খোঁপা বাঁধত। বাঙালি পুরুষদের মধ্যে বাবরি চুল রাখার রীতি ছিল, যা এলিয়ে পড়ত ঘাড়ের ওপর। সধবা মেয়েরা কপালে টিপ ও মাথায় সিঁদুর পরত। তারা সিঁদুর দিয়ে ঠোঁটও রাঙাত। চন্দনগুঁড়া, জাফরান, মৃগনাভি ইত্যাদি প্রসাধন ও সুগন্ধি ব্যবহারের রীতি প্রচলিত ছিল। প্রাচীনকালে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই অলংকার পরার রীতি দেখা যায়। দুল, আংটি, গলার হার, বলয়, রাজুবন্দ ইত্যাদি নানারকম অলংকার ব্যবহারের সাক্ষ্য রয়েছে ফলকচিত্রে।
প্রাচীন বাংলায় নানারকম খেলাধুলা ও আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা ছিল। খেলার মধ্যে পাশা ও দাবা খুব জনপ্রিয় ছিল। প্রিয় অনুষ্ঠান ছিল নাচ, গান আর অভিনয়। পুরুষরা অংশগ্রহণ করত ব্যায়াম, লাঠিখেলা আর মল্লযুদ্ধে। দুর্গা, কালী ইত্যাদি বড় পূজার পাশাপাশি লোকজ জীবনে রকমারি পূজা ও উৎসবের প্রচলন ছিল। এসব পূজার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বকর্মা পূজা, শীতলা, মনসা, বনদুর্গা, চণ্ডী, ষষ্ঠী, শিব পূজা, রথযাত্রা, অষ্টমী স্নান, ধর্মঠাকুরের পূজা, চড়ক পূজা, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান, বিভিন্ন মঙ্গল অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
এ যুগে মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন ছিল গরুর গাড়ি ও নৌকা। খাল বিলে চলার জন্য ভেলা ও ডোঙা ব্যবহার করা হতো। মানুষ সাঁকো দিয়ে পার হতো ছোট ছোট খাল। মালামাল পরিবহনের জন্য বিভিন্ন আকার ও নামের নৌকা ছিল। অবস্থাপন্ন মানুষ বড় বড় পানসি ও ডিঙি নৌকায় চলাচল করত।
কৃষিপ্রধান এ দেশে বাংলার বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করত। পালযুগে মানুষ সুখে থাকলেও সেন যুগে সাধারণ মানুষের জীবন তেমন সুখের ছিল না। এ সময় ব্রাহ্মণ শাসক শ্রেণীর হাতেই ছিল সব ক্ষমতা। শাস্ত্রজ্ঞান চর্চার অধিকারও ব্রাহ্মণদের হাতেই কুক্ষিগত ছিল। ব্রাহ্মণদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অর্থাৎ শূদ্র ও অন্তঃজ শ্রেণীর মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। শেষদিকে সেন রাজাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিল। লক্ষণ সেনের মহিষী বল্লভা ও বল্লভার ভাই কুমার দত্ত সাধারণ মানুষের ওপর অনেক অত্যাচার করত বলে সমকালীন সূত্রে জানা যায়।
বৌদ্ধ রাজা পালদের হাত থেকে সিংহাসন কেড়ে নিয়েছিল সেন বংশের রাজারা। সে সময় থেকেই বৌদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর নেমে আসে দুর্দশা। ব্রাহ্মণদের প্রভাবে সাধারণ হিন্দু সমাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। প্রাচীন বাংলার শেষ পর্যায়ে এই বিশৃংখল অবস্থায় মুসলিম সমাজের ভিত্তি গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মুসলিম অধিকারের মধ্য দিয়ে বাংলায় সূচনা হয় মধ্যযুগের। আর এ যুগে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির চেহারাও পাল্টে যায়।
নদীমাতৃক এ দেশে নৌকা ছিল মানুষের সাধারণ বাহন। সড়কপথে সাধারণত গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হতো। রাজপুরুষ বা সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনে প্রচলিত ছিল ঘোড়া বা হস্তীটানা রথ। প্রাচীন মৃৎফলক দেখে বোঝা যায়, সে যুগে গরুর গাড়ি দেখতে বর্তমান সময়ের মতোই ছিল।
প্রাচীন সূত্রের সাক্ষ্য অনুযায়ী, সেকালে মানুষ সেলাইবিহীন বস্ত্র পরায় অভ্যস্ত ছিল। সাধারণ পুরুষ ও রমণীরা যথাক্রমে ধুতি ও শাড়ি পরত। অবস্থাপন্ন পুরুষরা গায়ে জড়াত চাদর ও নারীরা ব্যবহার করত ওড়না। প্রাচীন ফলকচিত্র থেকে বোঝা যায়, অনেক মনোযোগের সঙ্গে কেশবিন্যাসে অভ্যস্ত ছিল
বাঙালি রমণী। এলোকেশী রমণীদের সংখ্যা ফলকচিত্রে খুব অল্প ছিল। বেশিরভাগ রমণী চমৎকার খোঁপা বাঁধত। বাঙালি পুরুষদের মধ্যে বাবরি চুল রাখার রীতি ছিল, যা এলিয়ে পড়ত ঘাড়ের ওপর। সধবা মেয়েরা কপালে টিপ ও মাথায় সিঁদুর পরত। তারা সিঁদুর দিয়ে ঠোঁটও রাঙাত। চন্দনগুঁড়া, জাফরান, মৃগনাভি ইত্যাদি প্রসাধন ও সুগন্ধি ব্যবহারের রীতি প্রচলিত ছিল। প্রাচীনকালে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই অলংকার পরার রীতি দেখা যায়। দুল, আংটি, গলার হার, বলয়, রাজুবন্দ ইত্যাদি নানারকম অলংকার ব্যবহারের সাক্ষ্য রয়েছে ফলকচিত্রে।
প্রাচীন বাংলায় নানারকম খেলাধুলা ও আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা ছিল। খেলার মধ্যে পাশা ও দাবা খুব জনপ্রিয় ছিল। প্রিয় অনুষ্ঠান ছিল নাচ, গান আর অভিনয়। পুরুষরা অংশগ্রহণ করত ব্যায়াম, লাঠিখেলা আর মল্লযুদ্ধে। দুর্গা, কালী ইত্যাদি বড় পূজার পাশাপাশি লোকজ জীবনে রকমারি পূজা ও উৎসবের প্রচলন ছিল। এসব পূজার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বকর্মা পূজা, শীতলা, মনসা, বনদুর্গা, চণ্ডী, ষষ্ঠী, শিব পূজা, রথযাত্রা, অষ্টমী স্নান, ধর্মঠাকুরের পূজা, চড়ক পূজা, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান, বিভিন্ন মঙ্গল অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
এ যুগে মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন ছিল গরুর গাড়ি ও নৌকা। খাল বিলে চলার জন্য ভেলা ও ডোঙা ব্যবহার করা হতো। মানুষ সাঁকো দিয়ে পার হতো ছোট ছোট খাল। মালামাল পরিবহনের জন্য বিভিন্ন আকার ও নামের নৌকা ছিল। অবস্থাপন্ন মানুষ বড় বড় পানসি ও ডিঙি নৌকায় চলাচল করত।
কৃষিপ্রধান এ দেশে বাংলার বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করত। পালযুগে মানুষ সুখে থাকলেও সেন যুগে সাধারণ মানুষের জীবন তেমন সুখের ছিল না। এ সময় ব্রাহ্মণ শাসক শ্রেণীর হাতেই ছিল সব ক্ষমতা। শাস্ত্রজ্ঞান চর্চার অধিকারও ব্রাহ্মণদের হাতেই কুক্ষিগত ছিল। ব্রাহ্মণদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অর্থাৎ শূদ্র ও অন্তঃজ শ্রেণীর মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। শেষদিকে সেন রাজাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিল। লক্ষণ সেনের মহিষী বল্লভা ও বল্লভার ভাই কুমার দত্ত সাধারণ মানুষের ওপর অনেক অত্যাচার করত বলে সমকালীন সূত্রে জানা যায়।
বৌদ্ধ রাজা পালদের হাত থেকে সিংহাসন কেড়ে নিয়েছিল সেন বংশের রাজারা। সে সময় থেকেই বৌদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর নেমে আসে দুর্দশা। ব্রাহ্মণদের প্রভাবে সাধারণ হিন্দু সমাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। প্রাচীন বাংলার শেষ পর্যায়ে এই বিশৃংখল অবস্থায় মুসলিম সমাজের ভিত্তি গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মুসলিম অধিকারের মধ্য দিয়ে বাংলায় সূচনা হয় মধ্যযুগের। আর এ যুগে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির চেহারাও পাল্টে যায়।
No comments