বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের নেপথ্যে-
গতকাল দুপুর সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সারা দেশ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ বিতরণের কাজে নিয়োজিত হাইভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক সাব-স্টেশন বিকল হয়ে পড়ায় জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয় বলে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়। তবে একটি সাব-স্টেশনের ত্রুটির কারণে এত বড় বিপর্যয়ের ঘটনায় বিস্মিত খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিডে এমন ত্রুটির কারণে বিপর্যয় হতে পারে- কিন্তু এত দীর্ঘ সময়ের ব্ল্যাক আউট অতীতে হয়নি। একটি সাব-স্টেশনের কারণে পুরো দেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় পেছনে নিম্নমানের যন্ত্রপাতিকে দায়ী করেছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ। গতকাল তিনি মানবজমিনকে বলেন, ভারত থেকে পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না পাওয়া জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে না। সার্কিট ব্রেকারের মান ঠিক থাকলে একটি সাব-স্টেশন বিকল হলেও বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল থাকার কথা। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে জাতীয় গ্রিড ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক রুহুল কুদ্দুস জানান, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সময় গতকাল সকাল ১১টা ২৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে হঠাৎ করেই ভেড়ামারা সাব-স্টেশনে টেকনিক্যাল ক্রটি দেখা দেয়। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়ার সময় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ ছিল। পরে ঢাকা থেকে কেন্দ্রটি চালু করার নির্দেশ দেয়া হলে আমরা চালু করি। বর্তমানে ৩নং ইউনিট চলছে। কিন্তু কোনভাবেই জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাব-স্টেশনে টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে সারা দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বিকল হয়ে পড়ে। জাতীয় গ্রিড ফেল করায় সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নেমে আসে। সাব-স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, সকাল থেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চলছিল। শুক্রবারও ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বেলা সাড়ে ১১টায় লাইন বিকল হয়ে পড়ে। সারা দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রও একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জাতীয় গ্রিড লাইন ফেল করে দেখা দেয় চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়। তিনি জানান, জাতীয় গ্রিডে ভারতীয় বিদ্যুৎ সংযোগ আবার স্থাপনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে। ভারতের বহরমপুরের সঙ্গে সংযোগ লাইন পরীক্ষা করে ত্রুটিগুলোর সমাধান করে বিকাল ৪টা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু হয়। সাব-স্টেশনে কর্মরত একজন প্রকৌশলী বলেন, ভারতের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় আমদানি করা বিদ্যুৎ আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ২৩০ কিলো ভোল্ট। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ভোল্টেজ না পাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে ভেড়ামারার সাব-স্টেশন। সূত্র জানায়, গতকাল সকালে যখন বিদ্যুৎ আমদানি চলছিল, তখন ভোল্টেজের কারণেই বন্ধ হয়ে যায় সাব-স্টেশন। একে একে বাংলাদেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক রুহুল কুদ্দুস জানান, ৬০ মেগাওয়াটের ৩টি ইউনিটই সচল করা হয়েছে। ৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেয়ার পরও লাইন বেশিক্ষণ থাকছে না। কিছুক্ষণ পর সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ লাইন এখন ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। এ কারণে সহসা বিদ্যুৎ সমস্যা কাটছে না। আস্তে আস্তে এটা কাটিয়ে উঠতে হবে।
No comments