চটকদার আয়োজন দাম আকাশছোঁয়া
পহেলা রমজান থেকে বাজারে উঠেছে চটকদার ইফতারি। রকমারি ইফতারির দামও আকাশছোঁয়া। গতকাল রাজধানীর ইফতারি বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এ তথ্য। পুরান ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারে নতুন নতুন পদ যোগ হয়েছে এবারের ইফতারে। তবে দাম বেড়েছে প্রায় সব আইটেমের। বেইলি রোডের ইফতার বাজারেও পাওয়া গেছে একই চিত্র। রাজধানীর ফুটপাথের ইফতারির দোকানগুলোতেও দেখা গেছে দাম বাড়ার চিত্র। চকবাজার ইফতারির বাজার ঘুরে দেখা গেছে সুতি কাবাব (খাসি) বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়, গরুর সুতি কাবাব ৫০০ টাকায় যা গতবার ছিল ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। এছাড়া দাম বেড়েছে কবুতরের রোস্ট, কোয়েলের রোস্ট, আস্ত মুরগির রোস্ট, খাসির রানের রোস্ট। খেজুর গতবার যেটি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এবার সেটির দাম ২০০ টাকা আর ৬০ টাকারটা ১২০ টাকা কেজি। এদিকে রোজাদারদের স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাজারগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল চকবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৫ শতাধিক ইফতারির দোকান বসেছে এলাকায়। এসব দোকানে আছে শতাধিক ইফতারি সামগ্রী। দুপুর ১২টা থেকেই শাহী মসজিদের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাস্তার মাঝখানেই সারি সারি দোকান। শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতো বেশি ইফতার সামগ্রী নিয়ে আর কোথাও বাজার বসে না। বাজার ঘুরে দেখা গেলো বিশাল শিকের সঙ্গে জড়ানো সুতি কাবাব, জালি কাবাব, শাকপুলি, টিকা কাবাব, ডিমচপ, কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাও, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, খাসির রানের রোস্ট, দইবড়া, মোল্লার হালিম, নূরানি লাচ্ছি, পনির, বিভিন্ন ধরনের কাটলেট, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, ছানামাঠা, কিমা পরাটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, বেগুনি, আলুর চপ, ডিম পোয়া, জালি কাবাব, পিঁয়াজু, আধাকেজি থেকে ৫ কেজি ওজনের শাহী জিলাপিসহ নানা পদের খাবার সাজিয়ে বসে পড়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া আতা-আনারস-বিলেতি গাব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ফল, পিঠা-পায়েস, মিষ্টিসহ ইফতারের নানা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আচার সামগ্রী।
বড় বাপের পোলায় খায়: ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়, ধনী-গরিব সবায় খায়, মজা পাইয়া লইয়া যায়। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এমন হাঁক-ডাক প্রায় প্রতিটি দোকানেই। এ আইটেমের পাশাপাশি রয়েছে রকমারি মুখরোচক ইফতারের পসরা। চকের ইফতার বাজারের একটি জনপ্রিয় আইটেম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। যার হাত দিয়ে এ আইটেমটির উৎপত্তি তিনি হলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা দাতা মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ। যিনি কামেল মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বরাবরই ছিলেন একজন ভোজনরসিক মানুষ। তিনি নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করতে জানতেন। ৭০ থেকে ৭৫ বছর আগে তিনিই প্রথম খাবারটি তৈরি করে এখানে বিক্রি শুরু করেন।
বটপাতার ডালায় করে তিনি বিক্রি করতেন ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। বংশানুক্রমে তার ছেলে জানে আলম থেকে সালেকিন মিয়ার হাত পেরিয়ে এখন চলছে সেন্টু মিয়ার যুগ। সেন্টু মিয়া বলেন, আমি এ কাজ করছি প্রায় ৩২ বছর ধরে। পাকিস্তান আমলে এর নাম ছিল শিক চূড়ার ভর্তা। স্বাধীন বাংলাদেশে এর নাম হয় বড় বাপের পোলায় খায়।’ তিনি বলেন, এটি তৈরিতে ডিম, গরুর মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনা মরিচ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, মুরগির গিলা-কলিজা, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, চিড়া, ডাবলি, বুটের ডাল, মিষ্টি কুমড়াসহ ২০ পদের খাবার আইটেম ও ১০-১২ ধরনের মসলা প্রয়োজন। একটি পিতলের বড় থালায় সব কিছু দুই হাতে ভালভাবে মাখিয়ে তারপর ঠোঙ্গায় করে বিক্রি করা হয়। সেন্টু বলেন, তিনি ছোট থাকতে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর দাম ছিল প্রতি কেজি ৩২ টাকা। এ বছর দাম ধরা হয়েছে ৩৬০ টাকায়। গত বছরও একই দাম ছিল। তবে তার আগের বছর এর দাম ছিল ৩০০ টাকা। তবে এ পরিবার ছাড়াও প্রায়ই সব ব্যবসায়ীই এখন তৈরি করছে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’।
বিক্রেতারা জানান এখানে যেসব ইফতারি সামগ্রী আনা হয় তা তৈরি করতে বিভিন্ন আইটেম লাগে। বর্তমান ওই সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ইফতারির দামও বেড়েছে। তবে লাভ আগের মতোই রয়েছে। চক বাজার সার্কুলার রোডের নাজিম উদ্দিনের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে মিষ্টি সামগ্রী। তার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে শাহী জিলাপি। যেগুলোর একেকটির ওজন ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত। এগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা করে। গতবার এর দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি। দইবড়ার দাম ১২০ টাকা কেজি। সিদ্দিকুর রহমানের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নানান পদের আচার। তিনি বিক্রি করছেন জলপাই, ত্রিফলা, আম, তেতুল, বরই, চালতার আচার, আমের কাসন্দি ইত্যাদি। প্রতিটি প্যাকেট বিক্রি করছেন ২০ টাকা করে। তাল, বেশম, চিনি দিয়ে তৈরি বিশেষ প্রকারের তালের রসডুবি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। আলু, গাজর, পেঁপে, পুদিনা পাতা, ধনিয়া, কাঁচামরিচ দিয়ে তৈরি পাকুরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬ টাকা করে। ফলের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ও বাঙি, দেশী আতা, আনারস। এছাড়া শসা, ধনেপাতা, ছোলা, বুট, শিঙ্গাড়া, সমুচা, নিমকি, আলুর চপ, ঘুগনি, মুড়ি, চানাচুরসহ মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তো আছেই। চক বাজারের ইফতার বিক্রেতা রমিজ উদ্দীন জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে এ ব্যবসা করে আসছে তার পরিবার। তিনি নিজে চকবাজারে ইফতার বিক্রি করছেন ৩৫ বছর ধরে। অন্যবারের মতো এবারো ভাল বিক্রি হবে বলেই তার আশা।
বেইলি রোডে যতো আয়োজন: রমজান মাসে পুরান ঢাকার চকবাজারের নাম শুনলে মুখে জল আসে। সেখানে রকমারি ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। বেইলি রোডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাহারি আইটেমে তাদের পসরা সাজিয়েছেন। দুপুরের পর থেকেই ইফতার কেনাবেচা শুরু হয়। বিকাল হতে হতে ভিড়ও বাড়ে। বেইলি রোড়ে সবচেয়ে বড়ো ইফতারের বাজার ক্যাপিটাল কনফেকশনারী। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তারা ১০০ আইটেমের আয়োজন করেছে। মাংসের পদের মধ্যে আছে গরুর চপ, খাসির চপ, খাসির আস্ত রানের রোস্ট, খাসির কাচ্চি, মুরগির রোস্ট, ফ্রাই, দোপিয়াজি, মগজ ভুনা, সুতি কাবাব, শিক কাবাব, টিক্কা, জালি কাবাব, রেশমি কাবাবসহ হরেক রকমের কাবাব। তাছাড়াও রয়েছে ইলিশ মাছের পোলাও, ফিরনি, জিলাপি, হালিম, দইবড়া, মাছের কাচ্চি, টানা পরটা, লটা, পনির পরটা, বোরহানি। অধিকাংশ পদ গতবারের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ক্যাপিটাল কর্তৃপক্ষ। পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পরিবেশন করার লক্ষ্য নিয়ে ইফতারের হরেক রকম আইটেম নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন জেরিনস ফ্রেশ ফুড। তাদের আইটেমের মধ্যে রয়েছে চিকেন ফিংগার স্টিক পিস প্রতি ২০ টাকা, চিকেন খারাগি ৩০ টাকা, চিকেন সামলিক ১০০ টাকা, জালি কাবাব ২০ টাকা, বাদশা রোল ৫০ টাকা, প্রণবল ৩৫ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, চিকেন তন্দুরি কোয়াটার ১২০ টাকা, লুচি ২৫ টাকা, ছোলা কারি প্যাকেট ৪০ টাকা, জিলাপি কেজি ২০০ টাকা ও বুন্দিয়া ১৮০ টাকা। জেরিনস ফ্রেশ ফুডের স্বাত্বাধিকারী সৈয়দা জেরিন ইয়াসমিন বলেন, মানুষের ক্রয় সীমার কথা চিন্তা করে দাম ঠিক করা হয়েছে। কোন আইটেমের দাম বাড়ানো হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। ফখরুদ্দিন ইফতারি বাজারে রয়েছে অর্ধশতাধিক পদ। তাদের কাচ্চি বিরিয়ানি, গরুর তেহারি, হালিম, বোরহানি, কাবাব, দইবড়া, লটা, পরটা বেশ সমাদৃত। হক কনফেকশনারিতে আয়োজন করা হয়েছে অর্ধশতাধিক পদের। ইফতারি স্বাদের বিভিন্নতা আনতে রয়েছে বিদেশী খাবারের দোকান।
ফুটপাতেও বেশি দাম: নিম্নবিত্ত মানুষদের ইফতারের প্রধান ভরসা ফুটপাতের দোকান। কিন্তু স্বস্তি নেই সেখানেও। নিত্যপণ্যের লাগামহীন উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে ফুটপাতের ইফতার সামগ্রীর দোকানগুলোতে। ইফতার সামগ্রীর মূল্য নিয়ে চলছে কারসাজি। কে কতো বেশি দামে বিক্রি করে বেশি মুনাফা করবেন এ নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। দামের মিল নেই কোন দোকানেই। কোথাও দাম বেশি আবার কোথাও কিছুটা কম। রাজধানীর ফার্মগেট, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েণ্টে ঘুরে ফুটপাতের ইফতার ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। ফার্মগেট ও কাওরান বাজারের বেশ কিছু ইফতার সামগ্রীর দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১শ’ টাকা কেজিতে। এছাড়া বুরিন্দা ১শ’ (কোথাও ১২০), ছোট আকারের জিলাপি ১শ’ নিমকি ১শ’, মুড়ি ৬০ থেকে ১শ’ টাকা করে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বাজাগুলোতে বিভিন্ন আকারের আলুর চপ ৩-৫, বেগুনি ৩-৫, পিয়াজু ৩-৫, সমুচা ৫-১০, শিঙ্গাড়া ৫-১০ কাবাব ১০-১৫ ভেজিটাবল রোল ১০-১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় একই দামে ইফতার বিক্রি করছেন শাহবাগ, পল্টন ও গুলিস্তানের ইফতার বিক্রেতারা। শাহবাগ আজিজ মার্কেট এলাকার ফুটপাতে ইফতার কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামাল মিয়া বলেন, ৩ টাকার পিয়াজু হয়েছে ৫ টাকা। ৪৫ টাকার মুড়ি কিনেছি ৬০ টাকা কেজি। কাওরান বাজারের মসজিদ মার্কেটের নিচতলার ইফতার দোকানদার মো. মইনুদ্দিন মিয়া জানান, গতবারের চাইতে ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে। গত রমজানে তিনি ছোলা বিক্রি করেছেন ৮০ টাকা। এবার তা ১শ’ টাকায় বিক্রি করছেন। ৫০ টাকার ঘুগনি বুট বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজিতে। মইনুদ্দিন বলেন, আলুর চপ, পিয়াজু, বেগুনি এগুলো বিক্রি করেছিলেন ৪ টাকা প্রতি পিস। তিনি বলেন, এবার নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে। বেগুন হয়েছে ১শ’ টাকা কেজি। ৮০ টাকার খোলা সয়াবিন হয়েছে ১২০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।
বড় বাপের পোলায় খায়: ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়, ধনী-গরিব সবায় খায়, মজা পাইয়া লইয়া যায়। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এমন হাঁক-ডাক প্রায় প্রতিটি দোকানেই। এ আইটেমের পাশাপাশি রয়েছে রকমারি মুখরোচক ইফতারের পসরা। চকের ইফতার বাজারের একটি জনপ্রিয় আইটেম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। যার হাত দিয়ে এ আইটেমটির উৎপত্তি তিনি হলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা দাতা মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ। যিনি কামেল মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বরাবরই ছিলেন একজন ভোজনরসিক মানুষ। তিনি নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করতে জানতেন। ৭০ থেকে ৭৫ বছর আগে তিনিই প্রথম খাবারটি তৈরি করে এখানে বিক্রি শুরু করেন।
বটপাতার ডালায় করে তিনি বিক্রি করতেন ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। বংশানুক্রমে তার ছেলে জানে আলম থেকে সালেকিন মিয়ার হাত পেরিয়ে এখন চলছে সেন্টু মিয়ার যুগ। সেন্টু মিয়া বলেন, আমি এ কাজ করছি প্রায় ৩২ বছর ধরে। পাকিস্তান আমলে এর নাম ছিল শিক চূড়ার ভর্তা। স্বাধীন বাংলাদেশে এর নাম হয় বড় বাপের পোলায় খায়।’ তিনি বলেন, এটি তৈরিতে ডিম, গরুর মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনা মরিচ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, মুরগির গিলা-কলিজা, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, চিড়া, ডাবলি, বুটের ডাল, মিষ্টি কুমড়াসহ ২০ পদের খাবার আইটেম ও ১০-১২ ধরনের মসলা প্রয়োজন। একটি পিতলের বড় থালায় সব কিছু দুই হাতে ভালভাবে মাখিয়ে তারপর ঠোঙ্গায় করে বিক্রি করা হয়। সেন্টু বলেন, তিনি ছোট থাকতে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর দাম ছিল প্রতি কেজি ৩২ টাকা। এ বছর দাম ধরা হয়েছে ৩৬০ টাকায়। গত বছরও একই দাম ছিল। তবে তার আগের বছর এর দাম ছিল ৩০০ টাকা। তবে এ পরিবার ছাড়াও প্রায়ই সব ব্যবসায়ীই এখন তৈরি করছে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’।
বিক্রেতারা জানান এখানে যেসব ইফতারি সামগ্রী আনা হয় তা তৈরি করতে বিভিন্ন আইটেম লাগে। বর্তমান ওই সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ইফতারির দামও বেড়েছে। তবে লাভ আগের মতোই রয়েছে। চক বাজার সার্কুলার রোডের নাজিম উদ্দিনের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে মিষ্টি সামগ্রী। তার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে শাহী জিলাপি। যেগুলোর একেকটির ওজন ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত। এগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা করে। গতবার এর দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি। দইবড়ার দাম ১২০ টাকা কেজি। সিদ্দিকুর রহমানের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নানান পদের আচার। তিনি বিক্রি করছেন জলপাই, ত্রিফলা, আম, তেতুল, বরই, চালতার আচার, আমের কাসন্দি ইত্যাদি। প্রতিটি প্যাকেট বিক্রি করছেন ২০ টাকা করে। তাল, বেশম, চিনি দিয়ে তৈরি বিশেষ প্রকারের তালের রসডুবি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। আলু, গাজর, পেঁপে, পুদিনা পাতা, ধনিয়া, কাঁচামরিচ দিয়ে তৈরি পাকুরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬ টাকা করে। ফলের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ও বাঙি, দেশী আতা, আনারস। এছাড়া শসা, ধনেপাতা, ছোলা, বুট, শিঙ্গাড়া, সমুচা, নিমকি, আলুর চপ, ঘুগনি, মুড়ি, চানাচুরসহ মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তো আছেই। চক বাজারের ইফতার বিক্রেতা রমিজ উদ্দীন জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে এ ব্যবসা করে আসছে তার পরিবার। তিনি নিজে চকবাজারে ইফতার বিক্রি করছেন ৩৫ বছর ধরে। অন্যবারের মতো এবারো ভাল বিক্রি হবে বলেই তার আশা।
বেইলি রোডে যতো আয়োজন: রমজান মাসে পুরান ঢাকার চকবাজারের নাম শুনলে মুখে জল আসে। সেখানে রকমারি ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। বেইলি রোডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাহারি আইটেমে তাদের পসরা সাজিয়েছেন। দুপুরের পর থেকেই ইফতার কেনাবেচা শুরু হয়। বিকাল হতে হতে ভিড়ও বাড়ে। বেইলি রোড়ে সবচেয়ে বড়ো ইফতারের বাজার ক্যাপিটাল কনফেকশনারী। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তারা ১০০ আইটেমের আয়োজন করেছে। মাংসের পদের মধ্যে আছে গরুর চপ, খাসির চপ, খাসির আস্ত রানের রোস্ট, খাসির কাচ্চি, মুরগির রোস্ট, ফ্রাই, দোপিয়াজি, মগজ ভুনা, সুতি কাবাব, শিক কাবাব, টিক্কা, জালি কাবাব, রেশমি কাবাবসহ হরেক রকমের কাবাব। তাছাড়াও রয়েছে ইলিশ মাছের পোলাও, ফিরনি, জিলাপি, হালিম, দইবড়া, মাছের কাচ্চি, টানা পরটা, লটা, পনির পরটা, বোরহানি। অধিকাংশ পদ গতবারের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ক্যাপিটাল কর্তৃপক্ষ। পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পরিবেশন করার লক্ষ্য নিয়ে ইফতারের হরেক রকম আইটেম নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন জেরিনস ফ্রেশ ফুড। তাদের আইটেমের মধ্যে রয়েছে চিকেন ফিংগার স্টিক পিস প্রতি ২০ টাকা, চিকেন খারাগি ৩০ টাকা, চিকেন সামলিক ১০০ টাকা, জালি কাবাব ২০ টাকা, বাদশা রোল ৫০ টাকা, প্রণবল ৩৫ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, চিকেন তন্দুরি কোয়াটার ১২০ টাকা, লুচি ২৫ টাকা, ছোলা কারি প্যাকেট ৪০ টাকা, জিলাপি কেজি ২০০ টাকা ও বুন্দিয়া ১৮০ টাকা। জেরিনস ফ্রেশ ফুডের স্বাত্বাধিকারী সৈয়দা জেরিন ইয়াসমিন বলেন, মানুষের ক্রয় সীমার কথা চিন্তা করে দাম ঠিক করা হয়েছে। কোন আইটেমের দাম বাড়ানো হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। ফখরুদ্দিন ইফতারি বাজারে রয়েছে অর্ধশতাধিক পদ। তাদের কাচ্চি বিরিয়ানি, গরুর তেহারি, হালিম, বোরহানি, কাবাব, দইবড়া, লটা, পরটা বেশ সমাদৃত। হক কনফেকশনারিতে আয়োজন করা হয়েছে অর্ধশতাধিক পদের। ইফতারি স্বাদের বিভিন্নতা আনতে রয়েছে বিদেশী খাবারের দোকান।
ফুটপাতেও বেশি দাম: নিম্নবিত্ত মানুষদের ইফতারের প্রধান ভরসা ফুটপাতের দোকান। কিন্তু স্বস্তি নেই সেখানেও। নিত্যপণ্যের লাগামহীন উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে ফুটপাতের ইফতার সামগ্রীর দোকানগুলোতে। ইফতার সামগ্রীর মূল্য নিয়ে চলছে কারসাজি। কে কতো বেশি দামে বিক্রি করে বেশি মুনাফা করবেন এ নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। দামের মিল নেই কোন দোকানেই। কোথাও দাম বেশি আবার কোথাও কিছুটা কম। রাজধানীর ফার্মগেট, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েণ্টে ঘুরে ফুটপাতের ইফতার ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। ফার্মগেট ও কাওরান বাজারের বেশ কিছু ইফতার সামগ্রীর দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১শ’ টাকা কেজিতে। এছাড়া বুরিন্দা ১শ’ (কোথাও ১২০), ছোট আকারের জিলাপি ১শ’ নিমকি ১শ’, মুড়ি ৬০ থেকে ১শ’ টাকা করে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বাজাগুলোতে বিভিন্ন আকারের আলুর চপ ৩-৫, বেগুনি ৩-৫, পিয়াজু ৩-৫, সমুচা ৫-১০, শিঙ্গাড়া ৫-১০ কাবাব ১০-১৫ ভেজিটাবল রোল ১০-১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় একই দামে ইফতার বিক্রি করছেন শাহবাগ, পল্টন ও গুলিস্তানের ইফতার বিক্রেতারা। শাহবাগ আজিজ মার্কেট এলাকার ফুটপাতে ইফতার কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামাল মিয়া বলেন, ৩ টাকার পিয়াজু হয়েছে ৫ টাকা। ৪৫ টাকার মুড়ি কিনেছি ৬০ টাকা কেজি। কাওরান বাজারের মসজিদ মার্কেটের নিচতলার ইফতার দোকানদার মো. মইনুদ্দিন মিয়া জানান, গতবারের চাইতে ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে। গত রমজানে তিনি ছোলা বিক্রি করেছেন ৮০ টাকা। এবার তা ১শ’ টাকায় বিক্রি করছেন। ৫০ টাকার ঘুগনি বুট বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজিতে। মইনুদ্দিন বলেন, আলুর চপ, পিয়াজু, বেগুনি এগুলো বিক্রি করেছিলেন ৪ টাকা প্রতি পিস। তিনি বলেন, এবার নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে। বেগুন হয়েছে ১শ’ টাকা কেজি। ৮০ টাকার খোলা সয়াবিন হয়েছে ১২০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।
No comments