বাশারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এল ইরাকে জঙ্গি উত্থান!
ইরাকে জঙ্গিদের উত্থান পশ্চিমাদের উদ্বিগ্ন করে তুললেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জন্য তা যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ওই জঙ্গিদের দিকে আঙুল তুলে বাশার সরকার এখন দেশের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে বৈধ করে নেওয়ার সুযোগ খুঁজবে। সিরিয়ার সরকার শুরু থেকেই সরকারবিরোধীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে আসছে। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী লড়াইয়ের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও রাজনৈতিক পালাবদল মেনে নিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। বরং তাঁর বিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী হোক বা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হোক-সবাইকে কঠোর হাতে দমনে সর্বোচ্চ শক্তিই প্রয়োগ করছেন তিনি। আর এখন তাঁর এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে ইরাকে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএল) উত্থানকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। সিরিয়ার সরকারপন্থী দৈনিক আল-ওয়াতান-এর প্রধান সম্পাদক ওয়াদাহ আবেদ রাব্বো বলেন, পশ্চিমাদের এখন তাদের ভুল স্বীকার করতেই হবে। এখন এই অঞ্চলে যাদের উত্থান হয়েছে, তাদের সাহস জুগিয়েছে পশ্চিমারাই। তিনি বলেন, এখন এটা উপলব্ধি করার সময় যে জর্ডান থেকে শুরু করে তুরস্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক জোটের লড়াইয়ে নামা প্রয়োজন।
এটা এখন আর শুধু সিরিয়ার একক সমস্যা হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। ওই অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার সরকারবিরোধী জোটকে অস্ত্র সরবরাহ করতে ইতস্তত করছে। পশ্চিমাদের আশঙ্কা, সেই অস্ত্র পরে আইএসআইএলের মতো জঙ্গিদের হাতে চলে না যায়। পশ্চিমাদের মধ্যে এই আশঙ্কা তৈরি হওয়াটাও সিরিয়া সরকারের জন্য ইতিবাচক ফল এনে দিয়েছে। পর্যাপ্ত অস্ত্র না পেলে বিদ্রোহীরা দুর্বল হয়ে যাবে, যা দেশটিতে প্রেসিডেন্ট বাশারের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ভোলকার পার্থেস বলেন, ‘ইরাকের সার্বিক পরিস্থিতিতে সিরিয়া সরকার বেশ সন্তুষ্ট বলে মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্র এখন যদি ইরাককে সহায়তা না করে, তাহলে বাগদাদের পতনের জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করা হবে। আবার যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের শিয়াপন্থী প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিকে সামরিক সহায়তা দিলে তা শুধু মালিকিকে নয়, সহায়তা করা হবে ইরান ও সিরিয়ার সরকারকেও। কারণ শিয়াপন্থী ইরান মালিকি ও বাশার সরকারের মিত্র। পার্থেস আরও বলেন, এখন আইএসআইএলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্র বাশার সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাইলে তা সিরিয়ায় ‘বিদ্রোহীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনকে’ দুর্বল করে ফেলবে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার যুদ্ধবিমান থেকে ইরাকে হামলা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মালিকি। তিনি এই হামলাকে এক প্রকার স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে এর বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরাকি ভূখণ্ডে অন্য কোনো দেশের হামলা ওয়াশিংটন বরদাশত করবে না। আসলে ইরাকে আইএসআইএলের উত্থানে ওই অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি এত জটিল করে তুলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আর এতে লাভবান হচ্ছে আইএসআইএল ও বাশার সরকারই।
No comments