টাকা দিলে মেলে সনদ, পদে পদে লেনদেন- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে টিআইবির গবেষণা
টাকা দিলে মেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে পরীক্ষা পাসের সনদ। শুধু তা-ই নয়, এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন
থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজেই পদে পদে অর্থের অবৈধ লেনদেন হয়। এর মধ্যে
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অনুমোদনের জন্যই এক থেকে তিন কোটি টাকা লেনদেন হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে
এ কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি
প্রকাশ করা হয়। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন,
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশ এই লেনদেনে জড়িত। যৌথভাবে
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক
মোহাম্মদ রফিক হাসান ও উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক নীনা শামসুন নাহার।
>>ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান l প্রথম আলো
প্রতিবেদনে
বলা হয়, উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ অনুমোদনের জন্য
লেনদেন হয় ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিদর্শন
বাবদ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির
জন্য ১০ থেকে ৫০ হাজার, অনুষদ অনুমোদনের জন্য ১০ থেকে ৩০ হাজার, বিভাগ
অনুমোদনের জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার, পাঠ্যক্রম অনুমোদন ও দ্রুত অনুমোদনের
জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লেনদেন হয়। ভুয়া সনদের জন্য ৫০ হাজার থেকে তিন
লাখ, নিরীক্ষা করানোর জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা লেনদেন করতে হয়। এ
ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া এবং নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপহার
ছাড়াও নগদ অর্থের লেনদেন হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
টিআইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত সময়ে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তবে টিআইবির নীতি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম বলা হয়নি।
প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ও পরীক্ষা না নিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদ দিচ্ছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি তিন লাখ করে টাকার বিনিময়ে সনদ দিয়েছে। আইনে শাখা ক্যাম্পাস নিষিদ্ধ থাকলেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪০টি পর্যন্ত শাখা ক্যাম্পাস আছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও তাদের শাখা রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভর্তি ও পরামর্শ কেন্দ্রের’ নামে শাখা ক্যাম্পাস চালু রেখেছে। ভর্তির সময়ে টিউশন ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা, পরবর্তীকালে আবার শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তা বৃদ্ধি করা, সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য ফি অনাদায়ে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আদায় করার ঘটনাও ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য সংরক্ষিত তহবিলের তিন কোটি টাকার ভুয়া রসিদ ইউজিসিকে দেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
শিক্ষকদের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী দুটির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করা নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষক একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পৃক্ত থাকেন। পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই বলে দেওয়া এবং সে অনুসারে পাঠদান করার মতো ঘটনা ঘটে। এমনকি পাঠদান না করে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদানে কর্তৃপক্ষকে সহায়তাও করা হয় অর্থ গ্রহণ করে। যৌন হয়রানি ও মানসিক চাপ সৃষ্টির মতো ঘটনাও ঘটে। আবার সরকারি নির্দেশনা না মেনে নিবন্ধনের নথিতে অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে জমি ক্রয়, অবৈধভাবে অতিরিক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।
২৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই: প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টি উপাচার্য আছে। সহ-উপাচার্য আছে ১৮টিতে ও ৩০টি কোষাধ্যক্ষ আছে। বাকিগুলোতে নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে অতিরিক্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে আগেই নির্বাচন করা হয়। অপর একটিতে বড় ধরনের দুর্নীতির পর রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের এক ব্যক্তির কন্যাকে চাকরি দেওয়া হয়।
শর্ত মেনে সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ গ্রহণের নিয়ম থাকলেও সাময়িক সনদ নিয়ে তা বারবার নবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব। গবেষণা করা ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচটিতে এই দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত দেখানোর জন্য অবৈধভাবে বিভিন্ন শিক্ষকের নাম ব্যবহার এবং ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষকদের না জানিয়ে তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহার করা হয়।
উদ্যোক্তাদের ২৯ শতাংশই ব্যবসায়ী: প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের ২৯ দশমিক ৬ শতাংশই ব্যবসায়ী। শিক্ষাবিদ আছেন ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও রাজনীতিবিদ ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য শ্রেণির। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যবসায় প্রশাসনের। চিকিৎসা, প্রকৌশল, কৃষিবিজ্ঞান ও ফার্মেসিতে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, শিক্ষা ও আইনে শিক্ষার্থী ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় হয় ৭৮ হাজার ২৬৬ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৫৬টিই ঢাকায় অবস্থিত।
সুপারিশ: প্রতিবেদনে আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা তৈরি, অবিলম্বে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনসহ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব দূর করাসহ ১৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আরও রয়েছে সব ধরনের শাখা ক্যাম্পাস বন্ধ, উপাচার্য, সহ-উপাচার্যসহ অন্যান্য পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করা।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন: এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ অর্থ লেনদেনের যে কথা বলা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি এবং আমিও তা পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ইউজিসির সুপারিশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি দেখে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায়। এখানে একাধিকবার যাচাই হয়। এ ছাড়া বিভাগ ও বিষয় অনুমোদন দুই বছর ধরে প্রায় বন্ধ আছে। সুতরাং টিআইবির প্রতিবেদনটি হাস্যকর।’
এ বক্তব্যের পরেও প্রতিবেদনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী এই তথ্য জানিয়ে বলেন, কমিটিতে ইউজিসির কাউকে রাখা হয়নি। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন নবীকে। বাকি দুই সদস্য হলেন সিলেটের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুল্লাহ তালুকদার এবং খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলমগীর। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের লেনদেন ও অর্থের পরিমাণ
খাত পরিমাণ (টাকায়)
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ১ কোটি–৩ কোটি অনুমোদন
ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ ৫০ হাজার–২ লাখ নিয়োগের অনুমোদন
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ৫০ হাজার–১ লাখ জন্য পরিদর্শন
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ১০ হাজার–৫০ হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি
অনুষদ অনুমোদন ১০ হাজার–৩০ হাজার
বিভাগ অনুমোদন ১০ হাজার–২০ হাজার
পাঠ্যক্রম অনুমোদন ও ৫ হাজার–১০ হাজার দ্রুত অনুমোদন
ভুয়া সার্টিফিকেট ৫০ হাজার–৩ লাখ
টাকা দিয়ে অডিট করানো ৫০ হাজার–১ লাখ
অ্যাসাইনমেন্ট ৫০০ টাকা
পাস করিয়ে দেওয়া ও উপহার, নগদ অর্থ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া
টিআইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত সময়ে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তবে টিআইবির নীতি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম বলা হয়নি।
প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ও পরীক্ষা না নিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদ দিচ্ছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি তিন লাখ করে টাকার বিনিময়ে সনদ দিয়েছে। আইনে শাখা ক্যাম্পাস নিষিদ্ধ থাকলেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪০টি পর্যন্ত শাখা ক্যাম্পাস আছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও তাদের শাখা রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভর্তি ও পরামর্শ কেন্দ্রের’ নামে শাখা ক্যাম্পাস চালু রেখেছে। ভর্তির সময়ে টিউশন ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা, পরবর্তীকালে আবার শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তা বৃদ্ধি করা, সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য ফি অনাদায়ে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আদায় করার ঘটনাও ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য সংরক্ষিত তহবিলের তিন কোটি টাকার ভুয়া রসিদ ইউজিসিকে দেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
শিক্ষকদের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী দুটির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করা নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষক একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পৃক্ত থাকেন। পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই বলে দেওয়া এবং সে অনুসারে পাঠদান করার মতো ঘটনা ঘটে। এমনকি পাঠদান না করে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদানে কর্তৃপক্ষকে সহায়তাও করা হয় অর্থ গ্রহণ করে। যৌন হয়রানি ও মানসিক চাপ সৃষ্টির মতো ঘটনাও ঘটে। আবার সরকারি নির্দেশনা না মেনে নিবন্ধনের নথিতে অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে জমি ক্রয়, অবৈধভাবে অতিরিক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।
২৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই: প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টি উপাচার্য আছে। সহ-উপাচার্য আছে ১৮টিতে ও ৩০টি কোষাধ্যক্ষ আছে। বাকিগুলোতে নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে অতিরিক্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে আগেই নির্বাচন করা হয়। অপর একটিতে বড় ধরনের দুর্নীতির পর রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের এক ব্যক্তির কন্যাকে চাকরি দেওয়া হয়।
শর্ত মেনে সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ গ্রহণের নিয়ম থাকলেও সাময়িক সনদ নিয়ে তা বারবার নবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব। গবেষণা করা ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচটিতে এই দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত দেখানোর জন্য অবৈধভাবে বিভিন্ন শিক্ষকের নাম ব্যবহার এবং ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষকদের না জানিয়ে তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহার করা হয়।
উদ্যোক্তাদের ২৯ শতাংশই ব্যবসায়ী: প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের ২৯ দশমিক ৬ শতাংশই ব্যবসায়ী। শিক্ষাবিদ আছেন ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও রাজনীতিবিদ ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য শ্রেণির। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যবসায় প্রশাসনের। চিকিৎসা, প্রকৌশল, কৃষিবিজ্ঞান ও ফার্মেসিতে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, শিক্ষা ও আইনে শিক্ষার্থী ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় হয় ৭৮ হাজার ২৬৬ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৫৬টিই ঢাকায় অবস্থিত।
সুপারিশ: প্রতিবেদনে আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা তৈরি, অবিলম্বে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনসহ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব দূর করাসহ ১৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আরও রয়েছে সব ধরনের শাখা ক্যাম্পাস বন্ধ, উপাচার্য, সহ-উপাচার্যসহ অন্যান্য পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করা।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন: এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ অর্থ লেনদেনের যে কথা বলা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি এবং আমিও তা পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ইউজিসির সুপারিশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি দেখে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায়। এখানে একাধিকবার যাচাই হয়। এ ছাড়া বিভাগ ও বিষয় অনুমোদন দুই বছর ধরে প্রায় বন্ধ আছে। সুতরাং টিআইবির প্রতিবেদনটি হাস্যকর।’
এ বক্তব্যের পরেও প্রতিবেদনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী এই তথ্য জানিয়ে বলেন, কমিটিতে ইউজিসির কাউকে রাখা হয়নি। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন নবীকে। বাকি দুই সদস্য হলেন সিলেটের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুল্লাহ তালুকদার এবং খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলমগীর। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের লেনদেন ও অর্থের পরিমাণ
খাত পরিমাণ (টাকায়)
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ১ কোটি–৩ কোটি অনুমোদন
ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ ৫০ হাজার–২ লাখ নিয়োগের অনুমোদন
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ৫০ হাজার–১ লাখ জন্য পরিদর্শন
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ১০ হাজার–৫০ হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি
অনুষদ অনুমোদন ১০ হাজার–৩০ হাজার
বিভাগ অনুমোদন ১০ হাজার–২০ হাজার
পাঠ্যক্রম অনুমোদন ও ৫ হাজার–১০ হাজার দ্রুত অনুমোদন
ভুয়া সার্টিফিকেট ৫০ হাজার–৩ লাখ
টাকা দিয়ে অডিট করানো ৫০ হাজার–১ লাখ
অ্যাসাইনমেন্ট ৫০০ টাকা
পাস করিয়ে দেওয়া ও উপহার, নগদ অর্থ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া
No comments