এমপির ভাইয়ের থাবা-দরিদ্র পরিবারগুলোকে রক্ষা করা হোক
প্রায় ৫০ বছর ধরে ৩৬ একর জমির ভোগদখলে থাকা শতাধিক দরিদ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করে ওই জমি জবরদখল করতে চাইছেন এক এমপির ভাই। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বনগজ গ্রামে। অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া ওয়ারিশান ও আমমোক্তারনামার মাধ্যমে এমপির ভাই ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা করছেন।
এ ক্ষেত্রে ক্ষমতা ও গায়ের জোরকেই হাতিয়ার করছেন তিনি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দরিদ্র পরিবারগুলো একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু তাদের ক্ষীণ কণ্ঠের প্রতিবাদ কোনো কাজে আসবে কি? অনেকেই বলেছেন, জমি রক্ষা করতে না পারলে তাঁরা আত্মহত্যা করবেন। এটাই কি দুর্বলের নিয়তি?কথায় বলে, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। মন্ত্রী-এমপির চেয়ে তাঁদের ভাই, স্ত্রী-ছেলে বা স্বজনদের দাপট যেন অনেক বেশি। পত্রপত্রিকায় বা গণমাধ্যমে প্রায়ই এ ধরনের অনেক খবর আমাদের দেখতে হচ্ছে। নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন। লোকমানের পরিবারের অভিযোগ, এক মন্ত্রীর ভাই এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। পাবনায় এক মন্ত্রীর ভাতিজার সন্ত্রাস-দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এমন ঘটনা একটি-দুটি নয়, অসংখ্য। এ ভাই-স্বজনরাই এলাকায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জবরদখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস-আদালতে নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কথার বাইরে যাওয়ার সাহস খুব কমসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তারই আছে। কাজেই এদের পক্ষে অন্যের জমি জবরদখল করা তো কোনো বিষয়ই নয়। হচ্ছেও তা-ই। আর তাতে সহযোগিতা করেন ভূমি অফিসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর দুর্বলরা হয় আত্মহত্যা করে, না হয় ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে এলাকা ত্যাগ করে।
এমপি সাহেবরাও কম যান কোথায়? টেকনাফের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি আবদুর রহমান বদির কথিত অপকর্মের কথা কার না জানা? মাস্তানি, চাঁদাবাজি, চোরাচালানি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ প্রায় সব ধরনের অপকর্মের অভিযোগই রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমপি হওয়ার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে মোট ২৩টি মামলা ছিল। এমপি হওয়ার পর অবশ্য সন্ত্রাসের দু-তিনটি মামলা ছাড়া বাকি সব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়ে গেছেন। এমপি হওয়ার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে স্বহস্তে পিটিয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও তাঁর স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ; কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে শুধু সন্ত্রাস, লুটপাট নয়; জঙ্গিবাদকে মদদ দানেরও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু চার বছর ধরেই তিনি বহালতবিয়তে। এমপি সাহেবদের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির রিপোর্টের ব্যাপারে আমাদের সংসদ ও মন্ত্রীরা বিষোদ্গার করলেও এ ধরনের এমপিদের বিরুদ্ধে তাঁদের কখনো সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট যে জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, সেই জনপ্রিয়তায় এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। জনপ্রিয়তা হ্রাসের অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এমপিদের স্বেচ্ছাচারিতা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও লুটপাট। এমপিদের অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অনেক নেতাও আজ লজ্জাবোধ করেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বক্তব্য থেকেই এ ব্যাপারে জানা যায়। কিন্তু অবাক ব্যাপার, এসব এমপি ও তাঁদের স্বজনদের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কেন নেওয়া হয় না, তা আমাদের জানা নেই। তবে এটা জানা যায়, চার বছরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় রীতিমতো ধস নেমেছে। এক বছর পর, জনগণ যখন তাদের রায়টি দেবে, সে রায়ে নিশ্চয়ই এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে। আমরা এর আগেই এমপিদের অন্যায়, জুলুম ও দাপট থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
No comments