টাঙ্গাইল-৩ উপনির্বাচন-পরাজয় শাসক জোটকে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে
টাঙ্গাইল-৩ উপনির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন
সরকারদলীয় প্রার্থী। বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান প্রায়
দ্বিগুণ। সরকারের শেষ সময়ে এসে এই উপনির্বাচনটি সরকারের জন্য নানা দিক থেকে
গুরুত্বপূর্ণ। এ সরকারের সময় যে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য
নির্বাচন হতে পারে,
নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ
করছে না, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে_এসব প্রমাণের সুযোগ
এসেছিল এই নির্বাচনে। অন্যদিকে জনগণ বা ভোটারের কাছে সরকারের অবস্থার
পরিমাপ করার একটা সুযোগ এই নির্বাচন এনে দেয়। এই সরকার তথা সরকারি দলের ওপর
ভোটারদের আস্থা আছে কি না, তা পরীক্ষার সুযোগ এনে দিয়েছিল টাঙ্গাইল-৩
উপনির্বাচন।২০০৮ সালের নির্বাচনে এক বড় ভূমিধস বিজয়ের ভেতর দিয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সরকারের প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত হতে যাচ্ছে। আর মাস দেড়েক পরই সরকারের চার বছর পূর্তি হবে। এমন একটি সময়ে এসে যেকোনো রাজনৈতিক দলকেই ঘর গোছানোর কাজে বেশি মনোনিবেশ করতে হয়। মাঠপর্যায়ে নানা জরিপ করতে হয়। আগামী নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি শুরু করার সময় এখনই। এখন নিজেদের ঘর যেমন গোছাতে হবে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী নিয়ে ভাবতে হবে। নির্ধারণ করতে হবে নির্বাচনী কৌশল। সব রাজনৈতিক দলের জন্যই এটা প্রযোজ্য। এমন একটি সময়ে এসে টাঙ্গাইল-৩ উপনির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন। এই বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেই প্রচার পেয়েছেন। নির্বাচনের আগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। দল তাঁকে বহিষ্কার করলেও জনগণ তাঁকেই গ্রহণ করেছে সাদরে। অন্যদিকে দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিল, তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী পেয়েছিলেন দুই মন্ত্রীর মনোনয়ন। কিন্তু জনগণের মনোনয়ন পেয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী, যাঁকে দল বহিষ্কার করেছে।
টাঙ্গাইল-৩ আসনের এই উপনির্বাচনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক, নাকি অন্তর্বর্তীকালীন_নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। এমন অবস্থায় নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। তার পরও টাঙ্গাইল-৩ উপনির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। ক্ষমতাসীন জোটের জন্য শিক্ষণীয়। অন্তত জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে যদি ধরা হয়, তাহলে এই উপনির্বাচন থেকে এটা প্রমাণিত হলো যে সরকারি দলের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। মানুষ আস্থা হারিয়েছে। টাঙ্গাইল-৩ আসনের উপনির্বাচন কি জনগণের আস্থাহীনতার উদাহরণ? হবে হয়তো। মহাজোটকে এই আস্থা হারানোর কারণ সময় থাকতে খুঁজতে হবে। প্রার্থী মনোনয়নে কোনো ভুল করা চলবে না, প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ নয়, জনসমর্থনই হবে প্রার্থীর যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি_টাঙ্গাইল উপনির্বাচন থেকে রাজনৈতিক দলগুলো এই শিক্ষা অন্তত গ্রহণ করবে বলে আমরা মনে করি।
No comments