নয়নে কেবলই স্বদেশের ছবি by একরামুল হক শামীম
'এক একটা দেশ থাকে মানচিত্রেই শুধু রাখা/কারুর নয়নে থাকে স্বদেশের ছবিখানি আঁকা/আমি সেই স্বদেশের ছবি দেখি আপনার মুখে/সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে।' গায়ক ও গীতিকার কবির সুমনের সঙ্গে বেগম সুফিয়া কামালের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।
তখন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তহবিল সংগ্রহের জন্য যে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে গান গাইতে এসেছিলেন কবির সুমন। সুফিয়া কামালের সঙ্গে দেখা হওয়া নিয়ে তিনি পরবর্তীকালে লিখেছেন_ 'আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা যখন নিয়ে গেল তার বাড়িতে আমার একটা প্রথম উদ্ঘাটন হলো যে আমার সামনে যিনি বসে আছেন তিনি সাক্ষাৎ আমার মা। আমি দ্বিতীয়বার এক মায়ের দর্শন পেলাম। আমার প্রথম মা উমা চট্টোপাধ্যায় আর দ্বিতীয় মা বেগম সুফিয়া কামাল।' পরবর্তী সময়ে সুফিয়া কামালকে নিয়ে গান রচনা করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে গানটি গেয়ে শোনান কবির সুমন। গানের কথাগুলোর মতোই বলতে হয় 'সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে'। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তার নাম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পাকিস্তান সরকার যখন ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করে, তখন তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিবাদস্বরূপ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তঘমা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নানা কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি মুক্তিবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এমন একজন মানুষের প্রসঙ্গ এলেই তো বলতে হয়_ স্বদেশের ছবিখানি তার নয়নে আঁকা। সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। সুফিয়া কামালের শৈশবে বাঙালি মুসলিম নারীদের স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ ছিল না। মা সাবেরা বেগমের কাছে বাংলা পড়তে শিখেন তিনি। মাত্র ১২ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নেহাল হোসেন স্ত্রীকে সাহিত্য পাঠে উৎসাহিত করেন। স্বামীর উৎসাহে সুফিয়া কামাল বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা পড়া শুরু করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতায় গিয়ে বেগম রোকেয়ার সঙ্গে দেখা হয় তার। বেগম রোকেয়ার কাজ ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে সুফিয়া কামালকে। পরে তার ছাপ পাওয়া গেছে। সাহিত্য পাঠের পাশাপাশি সাহিত্য রচনা শুরু করেন সুফিয়া কামাল। ১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৩২ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর আর্থিক কষ্টের মুখোমুখি হন তিনি। তবে দমে যাননি। স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা চলতে থাকে। ১৯৩৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'সাঁঝের মায়া' প্রকাশিত হয়। এর আগে ১৯৩৭ সালে প্রথম গল্প সংকলন 'কেয়ার কাঁটা' প্রকাশিত হয়।
সুফিয়া কামাল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। '৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে তিনি বেগম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহিলা পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী হলের নামকরণ বেগম রোকেয়ার নামে করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন সুফিয়া কামাল। সে আন্দোলনের অনেক বছর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম নারী হলের নামকরণ করা হয়েছে সুফিয়া কামালের নামে। সম্প্রতি হলটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুফিয়া কামাল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। '৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে তিনি বেগম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহিলা পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী হলের নামকরণ বেগম রোকেয়ার নামে করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন সুফিয়া কামাল। সে আন্দোলনের অনেক বছর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম নারী হলের নামকরণ করা হয়েছে সুফিয়া কামালের নামে। সম্প্রতি হলটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
No comments