সওজের অদ্ভুত কালভার্ট
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী-ছাতারপাইয়া সড়কটি খানিকটা আঁকাবাঁকা হলেও কোথাও উঁচু-নিচু নেই। সমান এই সড়কের বাঁকে নরোত্তমপুর এলাকায় চোখে পড়বে সদ্যনির্মিত অদ্ভুত উঁচু এক কালভার্ট, যেটি রাস্তা থেকে প্রায় চার ফুট ওপরে।
দেখলে মনে হবে, এই বুঝি এক মরণফাঁদ!৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্টটি নির্মাণ করেছে নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এটিকে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে এখন এর দুই পাশের সংযোগ সড়ক করতে অতিরিক্ত প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহনের চালকেরা পুরো প্রক্রিয়াটিকে সওজের বোকামি এবং সরকারি টাকার যথেচ্ছ অপচয় বলে মন্তব্য করেছেন। খোদ সওজের কর্মকর্তারা কালভার্টটির নকশায় ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
ঠিকাদার সিরাজ উদ্দিন বলেছেন, সওজ থেকে তাঁকে যে নকশা দেওয়া হয়েছে, তিনি সেই নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ করেছেন। তবে নকশা তৈরিতে সওজের ত্রুটি ছিল। এ কারণে কালভার্টের দুই দিকের ১৬০ ফুট সড়ক উঁচু করে কালভার্টটি যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নরোত্তমপুর এলাকায় খালের ওপর সড়কের একটি খাড়া বাঁকে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। কালভার্টটি যান চলাচলের উপযোগী করতে অনেক দূর থেকে কালভার্ট পর্যন্ত সড়কটি উঁচু করে নির্মাণ করতে হবে। সরাতে হবে পল্লী বিদ্যুতের লাইন।
নরোত্তমপুর এলাকার বাসিন্দা নূর মোহামঞ্চদ বলেন, ‘আগের ব্রিজটি ভালোই ছিল। কিন্তু এখন ব্রিজটি একেবারে আকাশে তুলে ফেলা হয়েছে। দেখলে মনে হয় মানুষ মারার ফাঁদ।’ অটোরিকশাচালক জহির হোসেন বলেন, কালভার্টের দুই পাশে নতুন করে রাস্তা যতই উঁচু করা হোক, সড়কের খাড়া বাঁকের মধ্যে যেভাবে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সব সময়ই থেকে যাবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে চৌমুহনী-ছাতারপাইয়া সড়কের নরোত্তমপুরে জরাজীর্ণ বেইলি সেতুর স্থানে সওজ একটি কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। ১০ মিটার দীর্ঘ কালভার্টটির (সংযোগ সড়কসহ) নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৮৭ লাখ টাকা। মেসার্স রূপালী ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ পায়।
কালভার্টটি নির্মাণসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এটি নির্মাণের শুরুতেই নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ে। নকশার সঙ্গে বাস্তবে সড়কের ওই স্থানের কোনো মিল নেই। নকশা অনুযায়ী সড়ক থেকে কালভার্টের পাটাতনের উচ্চতা প্রায় চার ফুট। নকশা সংশোধন না করেই সড়ক থেকে ওই উচ্চতায় কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। বরাদ্দ ৮৭ লাখ টাকা শুধু কালভার্ট নির্মাণ করতেই ব্যয় হয়। এই কাজ শেষ হয় চলতি বছরের জুনে। আর সড়ক থেকে কালভার্টের উচ্চতা বেশি হওয়ায় দূর থেকে উঁচু করে সংযোগ সড়ক নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কাছে আরও অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। সম্প্রতি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নকশা সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হলে দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক ২৫ ফুট দীর্ঘ হলেই চলত। কিন্তু কালভার্টটি অস্বাভাবিক উঁচু হওয়ায় এখন সংযোগ সড়ক অন্তত ১৬০ ফুট দীর্ঘ করতে হবে।
কালভার্টটির নকশায় ত্রুটি থাকার কথা নিশ্চিত করে সওজ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল বলেন, ‘যেহেতু কালভার্টটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে, সেহেতু এখন এটিকে যানবাহন ও সাধারণের চলাচল-উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই সড়ক উঁচু করে কালভার্টটি চালু করে দেওয়া হবে।
No comments