রয়টার্সের বিশ্লেষণ- বদলে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে সুবিধা পাচ্ছে হামাস
ইসরায়েল থেকে ছোড়া গোলা একের পর এক আঘাত করছে গাজা ভূখণ্ডে। এরই মধ্যে রোববার নিজের তিন সন্তানের জন্য ডিম ও চকলেট কিনতে রাস্তায় বের হয়েছিলেন গাজার বাসিন্দা আলী আল-আহমেদ। তিনি বলেন, যা ঘটছে তা ভয়াবহ। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, সীমান্তের অপর পারেও ভয়-আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে।
আলী আল-আহমেদ বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমি মনে করেছিলাম, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই ভুলে গেছে হামাস। কিন্তু না, আমি ভুল ভেবেছিলাম।’এর আগেরার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথমভাগ পর্যন্ত তিন সপ্তাহের একটি লড়াই হয়েছিল ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে। সেই লড়াইয়ে সুবিধা করতে পারেনি হামাস। তাদের পক্ষে নিহত হয়েছিল এক হাজার ৪০০-এর বেশি মানুষ। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষে মারা গিয়েছিল মাত্র ১৩ জন। ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংকের গোলায় বিধ্বস্ত হয়েছিল গাজা। শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে নিয়েছিল হামাস।
কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আরব-বসন্ত পাল্টে দিয়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। হামাসের হাতে আছে আরও শক্তিশালী অস্ত্র। হামাসের ছোড়া রকেট ও গোলা থেকে রক্ষা পেতে ইসরায়েলের দিকে যে তোড়জোড়, তা নিয়ে বেশ উল্লাস চলছে সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকের অনেক পেজে। প্রথমবারের মতো রকেট হামলার হুমকির মুখে পড়েছে ইসরায়েলের রাজধানী তেল-আবিব ও জেরুজালেম শহর। হামাসের এই সক্ষমতার প্রশংসা করে ভিডিও আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ইউটিউবে দুটি পোস্ট দিয়েছেন পশ্চিম তীরের দুই সংগীতশিল্পী।
কূটনৈতিকভাবেও হামাস বেশ সুবিধা পাচ্ছে এবার। মিসর ও তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে গাজা সফর করেন। এর আগেরবার যখন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল লড়াই বাধে, তখন মিসর ও তিউনিসিয়ার ক্ষমতায় ছিল পশ্চিমা-সমর্থিত স্বৈরশাসকেরা। আরব-বসন্তের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। এখন কায়রো ও তিউনিসের নতুন শাসকদের ওপর জোরালো প্রভাব রয়েছে ইসলামপন্থীদের। এতে সুবিধা হয়েছে হামাসের।
গাজার রাজনৈতিক বিশ্লেষক তালাল ওকাল বিভিন্ন সময় হামাসের সমালোচনা করে এসেছেন। কিন্তু তিনি বলছেন, মনে হচ্ছে হামাস অনেক সংগঠিত। তারা কী করছে এবং লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কতটুকু মূল্য দিতে হবে, সে সম্পর্কে তারা সচেতন। তা দিতেও তারা প্রস্তুত। এখন সাধারণ লোকজন তাদের প্রশংসা করতে পারে।
তালাল ওকাল আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে এখন ইসরায়েল যদি গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে, তাহলে আরব নেতারা কোন দিকে অবস্থান নেবেন, তা আর আগেভাগে বুঝে ওঠার মতো অবস্থায় নেই তেল-আবিব। ব্রাদারহুড বা অন্য ইসলামপন্থীদের চাপের মুখে মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিই বা কী করবেন, তা অনিশ্চিত।
এত কিছু হয়তো ইসরায়েল পরোয়া করে না, কিন্তু তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শক্তিগুলো করে। বদলে যাওয়া নতুন মধ্যপ্রাচ্যে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থকে অবশ্যই পরোয়া করে।
No comments