ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের পেটাল ছাত্রলীগ
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার কর্মসূচি পালনের সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষকদের সংগঠনটি।শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এম ইয়াকুব আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ছাত্রলীগের ক্যাডার দিয়ে উপাচার্য শিক্ষকদের কর্মসূচিতে হামলা করিয়েছেন।' তিনি ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
অন্যদিকে উপাচার্য ড. এম আলাউদ্দিন বলেন, 'ছাত্রলীগ এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাদের বিচার হবে।'
উল্লেখ্য, নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে উপাচার্য এম আলাউদ্দিন, উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ ড. শাহজাহান আলীর পদত্যাগ দাবি করে আসছে শিক্ষক সমিতি। এই আন্দোলনে যোগ দেয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষক সংগঠনও। উভয় সংগঠনের শিক্ষকরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন, ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান ধর্মঘট পালনের কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষকদের। সকাল ১১টায় তাঁরা প্রশাসনিক ভবন চত্বরের একটি রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত ও চাকরিপ্রার্থী ছাত্রলীগের কর্মী মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের দিকে এগোতে থাকে। একপর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে। তারা শিক্ষকদের অবস্থানের মধ্য দিয়ে দুবার মিছিল করে যায়। শিক্ষকরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা শিক্ষকদের চড়, ঘুষি ও লাথি মারে।
এরপর তারা প্রশাসনিক ভবনের ফটকের কাছে সমাবেশ করে।
হামলায় আহতদের মধ্যে আছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. আবুল আহসান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ড. রুহুল কে এম সালেহ্, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এম ইয়াকুব আলী, ড. কামরুল ইসলাম, ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ড. আলীনুর রহমান, ড. রুহুল আমিন, ড. এমতাজ আলী, ড. এ কে এম মতিনুর রহমান।
হামলার ছবি তুলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন দৈনিক সকালের খবর পত্রিকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ভোরের কাগজের শরিফুল ইসলাম জুয়েল।
এ ঘটনার পর শিক্ষকরা মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে গিয়ে সমাবেশ করেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইয়াকুব আলী দাবি করেন, হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষক ও ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছেন। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিদিন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন বলেন, 'ছাত্রলীগ কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়। যদি শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে থাকে, তবে বিষয়টি দুঃখজনক।'
No comments