পাচার করা অর্থ ফেরত আনা-দুর্নীতি দমনে ফলপ্রসূ সহযোগিতা
সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক থেকে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার বাংলাদেশে ফেরত এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র কোকোর বিরুদ্ধে দায়ের করা মুদ্রা পাচার মামলার রায় অনুযায়ী ওই পরিমাণ অর্থ ফেরত এসেছে।
অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়_ এ বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ, বিবৃতিতে এবং সিভিল সোসাইটির আলোচনায় হরহামেশাই বিদেশে অর্থ পাচারের উল্লেখ থাকে। কিন্তু তার প্রমাণ মেলে খুব কমই। কখনও কখনও আদালত পর্যন্তও অভিযোগ গড়ায়। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ভাষাতেই বলতে হয় : 'অর্থ পাচারের মামলার বিচার প্রক্রিয়া নানা অজুহাতে বিলম্বিত করা হয়।' বিএনপির কোনো নেতা এ মামলা এবং অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনার বিষয়টিকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ' হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং আমাদের পাল্টাপাল্টি রাজনীতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখলে এ বক্তব্য অস্বাভাবিক নয়। ক্ষমতায় যারাই থাকুক, বিরোধী রাজনীতিকদের প্রতি তাদের মনোভাব থাকে সাধারণভাবে কঠোর এবং হামলা-মামলার ঘটনা যথেচ্ছ ঘটে। এ কারণেও শুধু আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার এবং তাদের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, জনমনেও ধারণা হতে পারে যে গোটা বিষয়টি রাজনৈতিক হয়রানি ও প্রতিহিংসামূলক। তবে আলোচ্য মামলাটিকে সেভাবে দেখা উচিত হবে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান অর্থ ফেরত আনার এ ঘটনাকে সুসংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানও মনে করেন, এ পদক্ষেপ সঠিক। তবে তিনি এবং আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিই এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊধর্ে্ব উঠে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকার এবং বিচার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার কর্মকাণ্ডে এটাই যেন প্রতীয়মান হয় যে, তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু সিঙ্গাপুর নয়, আরও অনেক দেশেই অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অর্থ ফেরত পেতে আন্তর্জাতিক সহায়তা অপরিহার্য। কাজ পেতে বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স বাংলাদেশ আরাফাত রহমান কোকোকে যে ঘুষ দিয়েছিল, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রমাণিত হয় এবং এ জন্য ওই কোম্পানিকে ৫ লাখ ডলার জরিমানাও করা হয়েছিল। এ কারণে বাংলাদেশের আদালতে আলোচিত মামলাটিকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ও বিরোধী নেতাদের চরিত্র হননের ঘটনা হিসেবে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। আমরা মনে করি, দুর্নীতির কালান্তক ব্যাধি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার প্রয়াসে যারা আন্তরিক, সবাইকে এ মামলার রায় এবং অর্থ ফেরত আনার বিষয় থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বেই জনমত প্রবল হচ্ছে এবং এর মোকাবেলায় একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্সের জড়িত হওয়ার ঘটনা তারই নজির। এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নাকচ করে দিলে দুর্নীতি মোকাবেলার প্রচেষ্টাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। এতে কোনো দলের লোক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি বা তার নিকটজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটাকে বড় করে দেখা নয়, বরং আমরা আশা করব যে দুর্নীতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় নয়_ সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং দেশের সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে এ অবস্থানঅবিচল থাকবে। এতেই দেশের মঙ্গল।
No comments