একচ্ছত্র ক্ষমতার ঘোষণা মুরসির-বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, বিভিন্ন স্থানে ব্রাদারহুড কার্যালয়ে আগুন
বিচার বিভাগসহ কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না_মর্মে গত বৃহস্পতিবার নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতার এ ঘোষণা দিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নতুন অধ্যাদেশ জারির পর গতকাল শুক্রবার দেশটিতে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছরের মতো তাহরির স্কয়ারে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে। গতকাল বেশ কয়েকটি অঞ্চলে মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিসের কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে বিরোধীরা। অনেক স্থানে মুরসির সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষও হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ফারাও সম্রাটদের সঙ্গে তুলনা করেছে। ইতিমধ্যে অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার মুরসি নতুন অধ্যাদেশ জরি করেন। এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত, আদেশনামা ও আইন চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কোনো আদালতেই আপিল করা যাবে না। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মুরসির সব সিদ্ধান্তই এ অধ্যাদেশের আওতায় পড়বে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো আদালতই মিসরের সাংবিধানিক পরিষদকে বিলুপ্ত করতে পারবে না। একই সঙ্গে ১০০ সদস্যের সাংবিধানিক পরিষদকে খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য বাড়তি দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ফলে খসড়া চূড়ান্ত করতে ডিসেম্বর নাগাদ সময় পেল সাংবিধানিক পরিষদ।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মুবারক আমলের প্রসিকিউটর জেনারেল (রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী) আবদেল মেগুইদ মাহমুদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আগের সংবিধান অনুযায়ী প্রসিকিউটর জেনারেলরা আজীবনের জন্য নিয়োগ পেতেন। কিন্তু মুরসি এ পদের মেয়াদ চার বছরে সীমিত করেছেন। গত বৃহস্পতিবারই নতুন প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে তালাত ইব্রাহিম আবদাল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মুবারকবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর বিচার নতুন করে শুরুর পাশাপাশি মাহমুদের তদন্তাধীন মামলাগুলোর পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তালাতকে। ফলে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া মুবারকের বিচারও নতুন করে শুরু হতে পারে।
মুরসি সরকারের দাবি, 'রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান ও সাবেক সরকারের অবকাঠামো বিনাশের' লক্ষ্যে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র মাহমুদ গোজলান নতুন অধ্যাদেশকে 'বৈপ্লবিক' বলে উল্লেখ করেছেন। মুরসির সমর্থকরা মনে করছে, প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ মিসরের বিপ্লবকে রক্ষা করবে। গত বৃহস্পতিবার কায়রো হাইকোর্টের সামনে উল্লাস প্রকাশ করে তারা। তবে সমালোচকরা মুরসির নতুন পদক্ষেপকে 'বৈধতার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 'মুরসি সরকারের তিন বিভাগের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছেন' এবং 'বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে হত্যা করেছেন' বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। বিরোধীদলীয় নেতারা অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে গতকাল শুক্রবার 'লাখো জনতার মিছিলের' ডাক দেন।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ এল বারাদি অভিযোগ করেছেন, 'প্রেসিডেন্ট নিজেকে মিসরের নতুন ফারাও মনোনীত করেছেন। তাঁর এ পদক্ষেপ বিপ্লবের প্রতি বড় ধরনের একটি ধাক্কা এবং এর পরিণতি হতে পারে খুবই ভয়াবহ।' মুবারকবিরোধী বিপ্লবের নেতা ওয়ায়েল গোনিম বলেন, 'সুবিধাজনক একনায়ক খোঁজার উদ্দেশ্যে বিপ্লব করিনি আমরা। বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।' কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করেই মুরসি নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতার কারণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুরসির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে দেশের ভেতরের বিরোধ-আন্দোলনকে দমন করতে পারবেন তিনি। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, নিউ ইয়র্ক টাইমস অনলাইন।
* কেউ প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না
* কোনো আদালতই সাংবিধানিক পরিষদকে বিলুপ্ত করতে পারবেন না
* যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া মুবারকের বিচারও নতুন করে শুরু হতে পারে
* মুরসিকে 'নতুন ফারাও' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিরোধীরা
No comments