আছে শুধু দুটি জুতার কারখানা by রাশেদুল তুষার
দেশে বিনিয়োগ উপযোগী জায়গা না পেয়ে গত দুই বছরে ফিরে গেছে স্যামসাং, সনি করপোরেশন ও সুমিতমো করপোরেশনের মতো কয়েকটি বহুজাতিক কম্পানি। প্লট খালি না থাকায় প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে।
অথচ আনোয়ারা উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে কোরিয়ান ইপিজেডের (কেইপিজেড) প্রায় আড়াই হাজার একর জায়গা খালি পড়ে আছে ১৬ বছর ধরে।গত বুধবার সকালে কেইপিজেড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আড়াই হাজার একরের বিশাল এই ইপিজেডে মাত্র একটি জুতার কারখানা আংশিক চালু হয়েছে। ইয়াংওয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন কর্ণফুলী সুজ লিমিটেড (কেএসএল) নামের কারখানাটিতে মোট তিন হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, আরো একটি কারখানা শিগগিরই উৎপাদনে যাবে। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে ভূমি সমতল করে প্লট তৈরির কাজ চলছে। এর বাইরে ইয়াংওয়ান গ্রুপের আবাসিক ভবন ছাড়া আর কোনো স্থাপনা নেই পুরো ইপিজেড এলাকায়।
দেশে যখন খালি জায়গা না পেয়ে একের পর এক বহুজাতিক কম্পানি ফিরে যাচ্ছে, তখন প্রধান বন্দরসংলগ্ন কেইপিজেডের মতো একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ উপযোগী জায়গা খালি পড়ে থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সদস্য এ কে এম মাহবুবুর রহমান। জানতে চাইলে গত বুধবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এত বছরেও কেন এটা চালু হলো না বুঝতে পারছি না। এই ইপিজেডটি যথাসময়ে চালু করা গেলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আসত।'
বেপজার অপর এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষ আসলে কী করতে চায় সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ১৬ বছর তারা করল কী? বিনিয়োগ উপযোগী করতে না পারার কারণ হিসেবে তারা যেসব যুক্তি দেখাচ্ছে তা আসলে অযৌক্তিক।' তিনি বলেন, 'সরকারও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তাই সরকার কোরিয়ান ইপিজেডের জায়গা কেটে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। দুই মাস আগে বাংলাদেশ বেসরকারি ইপিজেড বোর্ডের এক সভায় কোরিয়ান ইপিজেডের জন্য ৫০০ একর জায়গা রেখে বাকি দুই হাজার একর জায়গা ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়।'
কোরিয়ান ইপিজেড পুরোদমে চালু না হওয়া প্রসঙ্গে ওই ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী লে. ক. (অব.) মোহাম্মদ শাহজাহান গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রথম থেকেই আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে গিয়েছি। এখানে বিদেশি বিনিয়োগের প্রচুর চাহিদা আছে। কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুৎ সাপোর্ট না থাকায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পরিবেশ বৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রেখে বিনিয়োগ উপযোগী করতেও অনেক সময় নিতে হয়েছে।'
আয়তনের দিক থেকে কেইপিজেড একাই সরকারি আটটি ইপিজেডের সমান। সরকারি ইপিজেডগুলোতে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২৫২ কোটি ডলার। এসব ইপিজেড থেকে গত বছর ৪২১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ সময় তিন লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিপরীতে ১৬ বছর পরে এসেও সাকল্যে একটি মাত্র কারখানা চালু হয়েছে কেইপিজেডে, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র তিন হাজার শ্রমিকের।
এ প্রসঙ্গে কোরিয়ান ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক বলেন, 'সরকারি ইপিজেডগুলোর পুরো জায়গা প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার উপযোগী। কিন্তু আমাদের এখানে জায়গা বড় হলেও পাহাড়ের কারণে সমতল জায়গা খুব কম। পরিবেশবান্ধব ইপিজেড হওয়ার কারণে বেশির ভাগ জায়গা কারখানা স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।'
No comments