খেলাপি ঋণ-এ প্রবণতা বন্ধ হোক
অর্থনীতির গতিকে টেনে ধরার জন্য খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি যথেষ্ট। অথচ গত তিন দশকে এ প্রবণতা আতঙ্কেরও জন্ম দিয়েছে। আর এ মুহূর্তে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যে অবস্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকে লাগামহীন বলতেও দ্বিধা নেই।
সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হওয়া তিন মাসের পরিসংখ্যান বলে দেয়, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের আর্থিক কিছু কেলেঙ্কারিও এর পেছনে কাজ করে থাকতে পারে, যার দায় সরকারি নীতিমালার ওপরও বর্তায়। অক্টোবর মাসের আগ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলে সংগত কারণেই তাকে ভয়াবহ বলা ছাড়া উপায় নেই। অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে প্রতিহত করতে হলে এ সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। মাত্র তিন মাস আগেও যেখানে ২৯ হাজার কোটি টাকা ছিল ঋণখেলাপি অর্থের পরিমাণ, সেখানে সেপ্টেম্বর শেষ হতে না-হতে সাত হাজার কোটি বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, ব্যাংকিং খাতে ব্যবস্থাপনাগত স্থবিরতা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ও প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রেও শৈথল্যকে প্রমাণ করে দেয় এ অবস্থা। ব্যাংক ব্যবস্থায় এই অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণের গতি ব্যাংকিং ব্যবসায় মুনাফার পরিমাণ কমিয়ে আনবে- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, যার প্রভাব পড়বে সব বিনিয়োগ ক্ষেত্রে। এমনকি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পথচলা হবে আরো অমসৃণ। ঋণ প্রদানের আগে যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সততা নিয়েও প্রশ্ন আসে। সোনালী ব্যাংকের মতো বৃহৎ ব্যাংকে যখন হলমার্কসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কয়েক হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করতে সক্ষম হয়, তখন বড় অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের ব্যাপারে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। ব্যাংকিং খাতে সততার অভাব এবং দক্ষতার ঘাটতিকেও প্রমাণ করে এসব উদাহরণ।আবার কিছু খেলাপি ঋণের পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। সেখানেও অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার হাত আছে। বিশেষ করে আবাসন শিল্পের কথা ধরা যাক। আবাসন শিল্প এ মুহূর্তে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে আবাসন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ নাগরিকের বাসস্থান সমস্যা নিরসনে বেসরকারি আবাসন শিল্পকে উজ্জীবিত করার কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত অবদান রেখে আসছে। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাদের এখন বেহাল অবস্থা। পাশাপাশি জাহাজ ভাঙা শিল্পও এখন খেলাপি ঋণের খাতায় নাম লেখাতে বাধ্য হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বলা যায়, ঋণখেলাপির এই সংস্কৃতির বিকাশকে রোধ করতে হলে এককভাবে ব্যাংকের তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই নয়, তার সঙ্গে সরকারি দক্ষতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধিও অপরিহার্য। বছর শেষে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়, সেই সুবাদে হয়তো খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে। তবে পারিপার্শিক অবস্থা দেখে মনে হয়, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে আরো আন্তরিক হতে হবে।
No comments