শরীয়তপুর-খালগুলো দখলমুক্ত হোক
শরীয়তপুরকে খালবেষ্টিত শহর বললে অত্যুক্তি হবে না। অসংখ্য খাল একদা এ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতো। এখন অধিকাংশই হারিয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও ক্ষীয়মাণ। বাংলাদেশের আর সব শহরের মতো শরীয়তপুর শহরের প্রাকৃতিক এই জলাধারগুলো দূষণ ও দখলে পর্যুদস্ত।
প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি মানুষের সীমাহীন অযত্নের শিকার এগুলো। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু এ দেশে সম্ভবত এমন কোনো শহর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে যোগাযোগের জন্য নদী বা খাল ব্যবহৃত হয় এবং সে খালগুলোর দূষণমুক্ত পানি মানুষ ও জলজ প্রাণীকে আকৃষ্ট করে। অথচ এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে শহরের অভ্যন্তরের খাল ও নদীগুলো হতে পারে মাছের অন্যতম উৎস। শহরের পাড়াগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে খালগুলো ব্যবহৃত হতে পারত। শুধু তা-ই নয়, মনোরম এ খালবেষ্টিত শহরগুলো পর্যটকদের আকৃষ্টও করতে পারত। তেমন দৃশ্য আজও অসম্ভব কল্পনা। উল্টো এ খালগুলো দূষণের কারণে রীতিমতো হুমকিতেও পরিণত হয়েছে কোথাও কোথাও। অতীতে ব্যবসা-বাণিজ্যেও শরীয়তপুর শহরের খালগুলোর বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এগুলো কীর্তিনাশার সঙ্গে সংযোগের উপায় ছিল। কিন্তু সে ব্যবস্থা আর নেই। শহরের মধ্যকার খালগুলো দখল হয়ে গেছে স্থানে স্থানে। আর দখলবাজিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রধান রাজনৈতিক দল_ কেউই কম যায় না। যারা রক্ষক তারাই যদি খাল দখলে নামে, তবে আর খাল থাকবে কী করে? রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দাপট তো কাউকে মানে না। এ অবস্থায় শহরের খাল বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগের। এটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-সম্পর্কিত বিষয় নয়; এর সঙ্গে জড়িত পরিবেশ-প্রতিবেশগত নানা সমস্যাও। তাই আমরা আশা করি, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ আসবে। নতুন দখল-দূষণ ঠেকানোর পাশাপাশি পুরনো দখলগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। খালগুলোকে রক্ষা করে, সংস্কারের মাধ্যমে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে সেটি সবার মঙ্গল নিশ্চিত করবে। আমরা চাই, খাল উদ্ধারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে না চাপিয়ে বরং কার্যকর উদ্যোগ নিক। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের রেয়াত দিলে চলবে না। সব দখলদারকে উচ্ছেদ করেই খালগুলো উদ্ধার করা হোক। শরীয়তপুর শহর এর জলময় খালের সৌন্দর্যে সুন্দর হয়ে উঠুক।
No comments