রান-পাহাড়ের চূড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩৮৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৫৬৪/৪ (তৃতীয় দিনের শেষে) by মাসুদ পারভেজ
রাজকপালই বলতে হবে মারলন স্যামুয়েলসের! সাকিব আল হাসানকে পুল করতে গেলেন, কিন্তু ঠিকমতো ব্যাটে-বলে হলো না। বল তাঁর দুই পায়ের ফাঁক গলে গিয়ে আঘাত হানল স্টাম্পে। অথচ বেল পড়ল না! তখন ১৬৭ রানে দাঁড়ানো সেই স্যামুয়েলসের ডাবল সেঞ্চুরির আনন্দে দিনের শেষে মিশে থাকল ট্রিপল সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশাও!
ব্যাট-বলের লড়াইয়ের সঙ্গে কাল খুলনা টেস্টের তৃতীয় দিনে এমন ভাগ্যের খেলাও চলল, যে খেলায় ভাগ্য কারো দিকে সদা হাস্যময় থাকল। এই যেমন স্যামুয়েলস। আবার কারো কারো দিকে থাকল গোমড়া মুখ করে। উদাহরণ হিসেবে কখনো আসবেন সাকিব, নয়তো রুবেল হোসেন কিংবা আবুল হাসান। ২৬০ রানে স্যামুয়েলসকে থামানো রুবেল তো আর এমনিতেই বলে ফেলেননি, 'অনেক সময় আমরা বোলাররা খারাপ একটা বল করে উইকেট পেয়ে যাই। অনেক সময় ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করেও পাই না। উইকেট পেতে ভাগ্য তো লাগেই।'ভাগ্যের পরশ পেলে শুরু থেকেই দিনটা অন্যরকম হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। একই সঙ্গে ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলার কিছু নমুনাও থাকবে। সব মিলিয়ে দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস রানের এভারেস্টে পৌঁছাতে দেখে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই যে এটা বোলারদের ব্যর্থতারই ফল। তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে টিভি সাক্ষাৎকারে স্যামুয়েলস এ টেস্টে একবারই ব্যাট করতে চান বলে জানিয়েছিলেন। ৪ উইকেটে ৫৬৪ রান তুলে দিন শেষ করা ক্যারিবীয়রা আজ সে লক্ষ্যেই নামবে নিশ্চিত। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলে অন্যরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় অবশ্য এখন কিছুই এসে যায় না।
অথচ দিনের প্রথম চার ওভারে এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলোর কোনো একটা মোড় ঘুরিয়ে দিতেই পারত। রুবেলের করা দিনের দ্বিতীয় বলেই যেমন ড্যারেন ব্রাভোর ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল একমাত্র স্লিপ ফিল্ডারের সামান্য সামনে গিয়ে পড়ে। আবুল হাসানের করা পরের ওভারেই স্যামুয়েলস বাউন্ডারি পান উইকেটকিপার ও স্লিপ ফিল্ডারের মাঝখান দিয়ে। রুবেলের করা পরের ওভারে আবারও একইভাবে বাউন্ডারির দেখা পান স্যামুয়েলস। একাধিকবার এমন হওয়ায় দুই স্লিপ আর গালি নিয়ে ফিল্ডিং করতে থাকেন ওই দুই পেসার। সকালেই নতুন বল নেওয়ার পর স্যামুয়েলস আর ব্রাভোকে বেশ ভোগাতে থাকা রুবেল-হাসানদের সামনে এরপর পূর্ণাঙ্গ সুযোগও এসেছে। দিনের চতুর্থ ওভারে স্যামুয়েলসের ব্যাটের কানা নিয়ে গেলেও প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাঈম ইসলাম ক্যাচটা নিতে পারেননি। এবারও বল বাউন্ডারিতে গন্তব্য খুঁজে নেওয়ার আগে স্যামুয়েলস ছিলেন ১১৭ রানে।
ভুল করে পার পাওয়ার ঘটনাও আছে। রুবেলের করা অফস্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে চালালেন। কিন্তু ব্যাটের কানা নিয়ে বল বাউন্ডারিতে যাওয়ার কারণ প্রথম স্লিপ ফিল্ডার শাহরিয়ার নাফীসের 'লেট রিঅ্যাকশন'। তখন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৭ রান দূরে স্যামুয়েলস। তিন তিনবার 'জীবন' পাওয়া স্যামুয়েলস সেখানে পৌঁছানোর পথে অবশ্য অন্য রূপেই দেখা দিয়েছিলেন কাল। আগের দিন পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেছিলেন ২২৭ বল। আর সেখান থেকে কাল ২৫তম ক্যারিবিয়ান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে লাগল মাত্র ১০২ বল। পৌঁছানোর পথে মারদাঙ্গা ব্যাটিংও করলেন। কিন্তু এরপর আবার ট্রিপল সেঞ্চুরির সম্ভাবনায় নিজেকে গুটিয়ে নিলেন।
ভেবেছিলেন স্পিনাররা আক্রমণে আসলে কিছু ছক্কা-টক্কা মেরে দ্রুত ট্রিপল সেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু এর আগেই রুবেলের লাফিয়ে ওঠা বলে হার মানেন। বল ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে পয়েন্টে বদলি ফিল্ডার ইলিয়াস সানির ক্যাচ হওয়ার আগে অবশ্য সোয়া দশ ঘণ্টারও (৬১৮ মিনিট) বেশি ব্যাটিং করে ফেলেছেন স্যামুয়েলস। যাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি বল (৪৫৫) খেলা ব্যাটসম্যানও বানিয়ে দিয়েছে তাঁকে। ২০০৪ সালে তাঁর হোমগ্রাউন্ড জ্যামাইকার কিংস্টনে রামনরেশ সারওয়ানের খেলা বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের (২৬১) ইনিংসটা পেরিয়ে যেতে আর মাত্র দুই রানই লাগত স্যামুয়েলসের।
তবে সোহাগ গাজীর বলে এলবিডাব্লিউ হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া ড্যারেন ব্রাভোকে (১২৭) বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপও গড়েছেন তিনি। ব্রাভোর বিদায়েই ৯৮ ওভার ও ৩২৬ রান পর ভেঙেছে ওই জুটি। এরপর ঢাকায় ডাবল সেঞ্চুরি করে আসা শিবনারায়ণ চন্দরপলের (১০৯*) সঙ্গে ১৭৭ রানের আরেকটি পার্টনারশিপ গড়ে গেছেন স্যামুয়েলস। তবে ক্যারিয়ারের ২৭-তম সেঞ্চুরির মুখ দেখা চন্দরপল আছেন। ক্যারিবীয়দের ইনিংস বাংলাদেশের নাগালের একেবারে বাইরে নেওয়ার জন্য।
দিনের শেষটা এমন হলেও শুরুটা অন্যরকমই ছিল। রুবেলের (২৮-৮-৭৫-২) বোলিং সেটা বোঝাতে পারছে সামান্যই। ভাগ্য অবশ্য স্যামুয়েলসকে অসামান্য অর্জনের খুব কাছেই নিয়ে গিয়েছিল!
No comments