উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা-১২ দিনে সিলেবাস ও দুই মাসে পাঠ্যপুস্তক by মুনির হাসান
তথ্যপ্রযুক্তির নানা রকম উদ্ভাবনী প্রয়োগ দেখিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক সাফল্যের নজির সৃষ্টি করেছেন। সম্প্রতি ভারতের উদ্যোগে মোবাইল ফোনের উদ্ভাবনী প্রয়োগের জন্য আয়োজিত এমবিলিয়ন্থ পুরস্কার পেয়েছে গত বছরের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল ফোনের ভর্তির কার্যক্রম।
একদিকে আমাদের শিক্ষার্থীদের চমৎকার সব উদ্ভাবনী উদ্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ে দ্রুত গতিতে সিলেবাস প্রণয়ন ও ততধিক সমান গতিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে সবাইকে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের যোগদানের জন্য জুলাই মাসের একেবারে শুরুতে আমি কাজাখস্তানে চলে যাই। দেশে ফিরে আসি ১৫ তারিখে এবং কয়েক দিন পরই আমি এবারের উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষার দুটি নতুন বই বাজার থেকে সংগ্রহ করি, ব্যক্তিগত আগ্রহের বশে। এর মধ্যে ভিশন পাবলিকেশন্স ঢাকা থেকে প্রকাশিত বইটির ভেতরে ভাঁজ করা একটি প্রচারপত্রে দেখলাম, লেখা আছে, এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদিত ‘একমাত্র’ পাঠ্যপুস্তক। বিজ্ঞাপনটি দেখে অবাক হলাম। কারণ, বেশ কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার শিক্ষার কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক বাজারে প্রচলিত এবং তার সবই বোর্ডের অনুমোদিত। দেখলাম, বইয়ের ভেতরে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ৩০ জুনের একটি স্মারকমূলে বইটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুন যে পুস্তককে অনুমোদন দেওয়া হয়, সেটি মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে কীভাবে সম্পূর্ণ ছাপা হয়ে বাজারে আসতে পারে?
কারণ, অনুমোদনের পর সেটির সম্পাদনা, মূল্যায়নকারীদের মন্তব্য ও পরামর্শ যথাযথভাবে পালিত হয়েছে কি না ইত্যাদি বোর্ডের সম্পাদকেরা যাচাই করে দেখেন। যেহেতু বইটি বাজারে চলে এসেছে, তাতে বুঝলাম, আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এখন বিদ্যুদ্গতিতে কাজ করছে। কমপক্ষে দুই মাসের কাজ তারা এক সপ্তাহে সেরে ফেলেছে। কারণ, সর্বশেষ যাচাইয়ের পর বই ছাপিয়ে, বাঁধাই করে তা বাজারে এনে বিপণনের ব্যবস্থা করতে বেশ সময় লাগে। যেহেতু বিদ্যুদ্গতির পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে এ প্রকাশক কাজ করেছেন, তাতে বুঝলাম, তাদেরও বিজলিগতি আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সব শেষ! ভালো। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তা বইটি কেন একমাত্র। একটু ভালোমতো খেয়াল করতেই বুঝলাম, উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষার যে সিলেবাসের সঙ্গে আমি পরিচিত, তার সঙ্গে এই বইটির পার্থক্য আছে। ২০১০-১১ থেকে নতুন সিলেবাসে বই হবে—এমন কথা আমি জুন মাসেও শুনিনি। এমনকি কোনো খসড়া সিলেবাস এনসিটিবি প্রকাশ করেছে, এমন কথাও শুনিনি। আমার জানা ভুল হতে পারে, এটা ভেবে এসএমই ফাউন্ডেশনের আইটি কর্মকর্তা প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলাম। মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং তাঁর লেখা বই বোর্ডের অনুমোদিত। তাঁর কাছে জানলাম ৩০ এপ্রিল পাঠ্যপুস্তক বোর্ড তাঁর চলমান বইটিকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের জন্য অনুমোদন করেছে। তাঁর বইটি নতুন সিলেবাসে প্রণীত হয়। অর্থাৎ মুজিবুর রহমানের লিখিত কম্পিউটার শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক এবং চার শিক্ষকের পাঠ্যপুস্তক দুটি ভিন্ন সিলেবাসে লিখিত এবং আইনগতভাবে দুটোই অনুমোদিত।
সৌভাগ্যক্রমে নতুন সিলেবাসের একটি কপি জোগাড় করতে সক্ষম হলাম। এখানে যে গতির সঙ্গে পরিচিত হলাম, সেটি আলোর গতি! অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার সিলেবাস ‘আধুনিক ও হালনাগাদ’ হয়েছে মাত্র ১২ দিনে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষার সিলেবাস পরিমার্জনার জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। কমিটি ৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সিলেবাস পরিমার্জন ও হালনাগাদ করে দাখিল করে!
মাত্র ১২ দিনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কোনো বিষয়ের সিলেবাস পরিমার্জন ও হালনাগাদ করার কোনো নজির এই পৃথিবীতে নেই! কারণ, সিলেবাস পরিমার্জন বিষয়টি কেবল কয়েকটি মিটিং-সিটিংয়ের বিষয় নয়। লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, শিখনফল এবং উলম্ব ও আনুভূমিক লিংকের বিষয়গুলো যেমন অনুধাবন করতে হয়, তেমনি বিদ্যমান সিলেবাসের নানা দিক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী-শিক্ষকের ফিডব্যাকেরও প্রয়োজন। পরিমার্জনের নামে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সমমান শ্রেণীর বিষয়বস্তু উচ্চমাধ্যমিকে চাপিয়ে দিলেই সেটি আধুনিক বা হালনাগাদ হয় না। ফলে যে প্রতিবেদনটি ওই কমিটি জমা দিয়েছে, তাতে কেবল বিষয়বস্তুর উল্লেখ রয়েছে, শিখনফল কী হবে, তার উল্লেখের কোনো বালাই নেই।
ওই সিলেবাসে মাত্র ৩০টি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষা—সি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে। বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের জানা দরকার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা কম্পিউটার বিজ্ঞানে অনার্স পড়েন, তাঁদের এ ভাষাটি তিন ক্রেডিটের একটি পূর্ণ কোর্স ও দেড় ক্রেডিটের ব্যবহারিক হিসাবে অধ্যয়ন করতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো খুব ভালো সি প্রোগ্রামিং ভাষা পড়াতে পারেন, এমন শিক্ষক পাওয়া যায় না। সেখানে আমাদের গ্রামের কলেজের শিক্ষকেরা এমন একটি কাজ মাত্র ৩০টি ক্লাসে শিখিয়ে দেবেন!
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ২০০৮ সালে প্রণীত বিধায় এই সিলেবাসে ২০০৯ সালে গৃহীত জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালার নির্দেশনাও অনুসরণ করা হয়নি। নীতিমালায় শিক্ষাক্ষেত্রে উন্মুক্ত সোর্সকোড-ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহারে তাগিদ দেওয়া হলেও এর কোনো প্রতিফলন নতুন সিলেবাসে নেই।
আরও মজার বিষয় হলো, যেকোনো নতুন সিলেবাস চালু করতে হলে আগে সে সিলেবাস জাতীয় কারিকুলাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু আমার এ লেখার দিন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত ওই সিলেবাস জাতীয় কারিকুলাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি।
অথচ পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নতুন সিলেবাসে একমাত্র পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে, সেটির মূল্যায়ন করে, সম্পাদনা করে, বাজারে ছেড়ে দিয়েছে!
ইতিমধ্যে প্রণীত নতুন শিক্ষানীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষ ব্যঞ্জনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তড়িঘড়ি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদ্যুদ্গতিতে প্রণীত সিলেবাসের জন্য ততোধিক বিজলিগতিতে পাঠ্যপুস্তক চালুর চেষ্টা পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কেন উদ্যোগী হয়েছে, তা আমাদের পক্ষে বোঝা কঠিন।
মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পয়াড কমিটি।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের যোগদানের জন্য জুলাই মাসের একেবারে শুরুতে আমি কাজাখস্তানে চলে যাই। দেশে ফিরে আসি ১৫ তারিখে এবং কয়েক দিন পরই আমি এবারের উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষার দুটি নতুন বই বাজার থেকে সংগ্রহ করি, ব্যক্তিগত আগ্রহের বশে। এর মধ্যে ভিশন পাবলিকেশন্স ঢাকা থেকে প্রকাশিত বইটির ভেতরে ভাঁজ করা একটি প্রচারপত্রে দেখলাম, লেখা আছে, এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদিত ‘একমাত্র’ পাঠ্যপুস্তক। বিজ্ঞাপনটি দেখে অবাক হলাম। কারণ, বেশ কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার শিক্ষার কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক বাজারে প্রচলিত এবং তার সবই বোর্ডের অনুমোদিত। দেখলাম, বইয়ের ভেতরে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ৩০ জুনের একটি স্মারকমূলে বইটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুন যে পুস্তককে অনুমোদন দেওয়া হয়, সেটি মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে কীভাবে সম্পূর্ণ ছাপা হয়ে বাজারে আসতে পারে?
কারণ, অনুমোদনের পর সেটির সম্পাদনা, মূল্যায়নকারীদের মন্তব্য ও পরামর্শ যথাযথভাবে পালিত হয়েছে কি না ইত্যাদি বোর্ডের সম্পাদকেরা যাচাই করে দেখেন। যেহেতু বইটি বাজারে চলে এসেছে, তাতে বুঝলাম, আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এখন বিদ্যুদ্গতিতে কাজ করছে। কমপক্ষে দুই মাসের কাজ তারা এক সপ্তাহে সেরে ফেলেছে। কারণ, সর্বশেষ যাচাইয়ের পর বই ছাপিয়ে, বাঁধাই করে তা বাজারে এনে বিপণনের ব্যবস্থা করতে বেশ সময় লাগে। যেহেতু বিদ্যুদ্গতির পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে এ প্রকাশক কাজ করেছেন, তাতে বুঝলাম, তাদেরও বিজলিগতি আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সব শেষ! ভালো। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তা বইটি কেন একমাত্র। একটু ভালোমতো খেয়াল করতেই বুঝলাম, উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষার যে সিলেবাসের সঙ্গে আমি পরিচিত, তার সঙ্গে এই বইটির পার্থক্য আছে। ২০১০-১১ থেকে নতুন সিলেবাসে বই হবে—এমন কথা আমি জুন মাসেও শুনিনি। এমনকি কোনো খসড়া সিলেবাস এনসিটিবি প্রকাশ করেছে, এমন কথাও শুনিনি। আমার জানা ভুল হতে পারে, এটা ভেবে এসএমই ফাউন্ডেশনের আইটি কর্মকর্তা প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলাম। মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং তাঁর লেখা বই বোর্ডের অনুমোদিত। তাঁর কাছে জানলাম ৩০ এপ্রিল পাঠ্যপুস্তক বোর্ড তাঁর চলমান বইটিকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের জন্য অনুমোদন করেছে। তাঁর বইটি নতুন সিলেবাসে প্রণীত হয়। অর্থাৎ মুজিবুর রহমানের লিখিত কম্পিউটার শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক এবং চার শিক্ষকের পাঠ্যপুস্তক দুটি ভিন্ন সিলেবাসে লিখিত এবং আইনগতভাবে দুটোই অনুমোদিত।
সৌভাগ্যক্রমে নতুন সিলেবাসের একটি কপি জোগাড় করতে সক্ষম হলাম। এখানে যে গতির সঙ্গে পরিচিত হলাম, সেটি আলোর গতি! অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার সিলেবাস ‘আধুনিক ও হালনাগাদ’ হয়েছে মাত্র ১২ দিনে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষার সিলেবাস পরিমার্জনার জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। কমিটি ৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সিলেবাস পরিমার্জন ও হালনাগাদ করে দাখিল করে!
মাত্র ১২ দিনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কোনো বিষয়ের সিলেবাস পরিমার্জন ও হালনাগাদ করার কোনো নজির এই পৃথিবীতে নেই! কারণ, সিলেবাস পরিমার্জন বিষয়টি কেবল কয়েকটি মিটিং-সিটিংয়ের বিষয় নয়। লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, শিখনফল এবং উলম্ব ও আনুভূমিক লিংকের বিষয়গুলো যেমন অনুধাবন করতে হয়, তেমনি বিদ্যমান সিলেবাসের নানা দিক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী-শিক্ষকের ফিডব্যাকেরও প্রয়োজন। পরিমার্জনের নামে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সমমান শ্রেণীর বিষয়বস্তু উচ্চমাধ্যমিকে চাপিয়ে দিলেই সেটি আধুনিক বা হালনাগাদ হয় না। ফলে যে প্রতিবেদনটি ওই কমিটি জমা দিয়েছে, তাতে কেবল বিষয়বস্তুর উল্লেখ রয়েছে, শিখনফল কী হবে, তার উল্লেখের কোনো বালাই নেই।
ওই সিলেবাসে মাত্র ৩০টি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষা—সি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে। বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের জানা দরকার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা কম্পিউটার বিজ্ঞানে অনার্স পড়েন, তাঁদের এ ভাষাটি তিন ক্রেডিটের একটি পূর্ণ কোর্স ও দেড় ক্রেডিটের ব্যবহারিক হিসাবে অধ্যয়ন করতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো খুব ভালো সি প্রোগ্রামিং ভাষা পড়াতে পারেন, এমন শিক্ষক পাওয়া যায় না। সেখানে আমাদের গ্রামের কলেজের শিক্ষকেরা এমন একটি কাজ মাত্র ৩০টি ক্লাসে শিখিয়ে দেবেন!
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ২০০৮ সালে প্রণীত বিধায় এই সিলেবাসে ২০০৯ সালে গৃহীত জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালার নির্দেশনাও অনুসরণ করা হয়নি। নীতিমালায় শিক্ষাক্ষেত্রে উন্মুক্ত সোর্সকোড-ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহারে তাগিদ দেওয়া হলেও এর কোনো প্রতিফলন নতুন সিলেবাসে নেই।
আরও মজার বিষয় হলো, যেকোনো নতুন সিলেবাস চালু করতে হলে আগে সে সিলেবাস জাতীয় কারিকুলাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু আমার এ লেখার দিন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত ওই সিলেবাস জাতীয় কারিকুলাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি।
অথচ পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নতুন সিলেবাসে একমাত্র পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে, সেটির মূল্যায়ন করে, সম্পাদনা করে, বাজারে ছেড়ে দিয়েছে!
ইতিমধ্যে প্রণীত নতুন শিক্ষানীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষ ব্যঞ্জনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তড়িঘড়ি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদ্যুদ্গতিতে প্রণীত সিলেবাসের জন্য ততোধিক বিজলিগতিতে পাঠ্যপুস্তক চালুর চেষ্টা পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কেন উদ্যোগী হয়েছে, তা আমাদের পক্ষে বোঝা কঠিন।
মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পয়াড কমিটি।
No comments