বাজেট বিশ্লেষণ-সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন পথে হাঁটব by রাশেদ আল-মাহমুদ তিতুমীর
প্রধান, উন্নয়ন অন্বেষণ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কৃষি, অভিবাসী, শিল্প শ্রমিকরা তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন- বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০ শতাংশ অর্জন সম্ভব।
এ জন্য প্রয়োজন প্রবৃদ্ধি-সহায়ক সম্প্রসারণমূলক নীতি, যাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে, দারিদ্র্য কমবে। প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে সে ধরনের রাজস্ব, মুদ্রা ও বিনিয়োগনীতি লক্ষণীয় হচ্ছে না। চিন্তার এ দারিদ্র্য থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
বাজেট কেবল আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, এটি সরকারের রাজনৈতিক ও উন্নয়নের দিকনির্দেশনাও। ২০০৮-এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরপর সরকার সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এ ধরনের বেঞ্চমার্কিং অন্যান্য নির্বাচনে ছিল না। বর্তমান সরকার বলেছিল, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত করা তাদের মূল লক্ষ্য।
যে সময়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ ধরা হচ্ছে, তখন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আইএমএফের সহায়তা পেতে অর্থমন্ত্রী যে মেমোরেন্ডাম অব ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল পলিসি জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য (বিওপি) ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় চাপ আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
মূলত অর্থ ব্যবস্থাপনায় চাপ থাকার কারণে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাও চাপের মধ্যে পড়েছে। তবে যে চাপ বা ঝুঁকি, তা আমাদের নিজেদেরই সৃষ্ট। দিকনির্দেশনার ত্রুটির কারণে বা সরকারি উন্নয়ন কৌশলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাউকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট। এসব প্লান্টে তরল জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে ভর্তুকি ব্যয় বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে, একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি ও সরকারের ঋণ গ্রহণও বেড়েছে; যা রাজস্ব ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে।
প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় বিনিয়োগ থেকে। আইএমএফ থেকে অর্থপ্রাপ্তির আশায় কতগুলো শর্ত মেনে নিতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে সুদের হারের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া। এতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে বিনিয়োগ ব্যয় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রবৃদ্ধির গতিকে সংকুচিত করেছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও নিজস্ব ভুল ব্যবস্থাপনার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে; বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম আমদানি। কিন্তু একই হারে রপ্তানি বাড়েনি। ফলে লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ তৈরি হয়েছে। একইভাবে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি আগের হারে না হওয়ায় রিজার্ভে চাপ তৈরি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়েছে, চাহিদা অনুযায়ী ডলারের সরবরাহ না থাকায় টাকার বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন হয়েছে। সেই সঙ্গে রিজার্ভের ওপরে চাপ পড়েছে। মূল্যস্ফীতি এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক ওপরে। এ কারণে বিশেষ করে নিম্ন আয় ও চাকরিজীবীদের ভোগ ব্যয় কমেছে। ফলে প্রবৃদ্ধি কমছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাঙ্ক্ষিত হারে আগের মতো বাস্তবায়িত হয়নি। অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তা, সামাজিক খাতে সরকারি বিনিয়োগ কমার কারণেও চাপ তৈরি করেছে। বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ সে রকম বাড়েনি। একদিকে যেমন লেনদেন ভারসাম্যের প্রভাব, অন্যদিকে রয়েছে সরকারি বিনিয়োগের অভাব। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়েনি।
বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় দরিদ্র্য সে হারে কমছে না। সে কারণে ভোগ বাড়ছে না। কর্মসংস্থান না বাড়লে দারিদ্র্য কাঙ্ক্ষিত হারে কমে না। বৈষম্য বাড়ে, প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। সরকারি ব্যয়, বিশেষত শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কর্মযোগ্যতা বাড়িয়ে থাকে। সেটি ঘটেনি।
অবকাঠামো খাতে সরকার, ব্যক্তি খাত, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়লে তা প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। কিন্তু পিপিপির বাস্তবায়নও তেমন লক্ষ করা যায়নি।
এটি এ সরকারের মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ সর্বশেষ বাজেট। দেশকে মধ্যম আয়ে উপনীত করা ছিল এ সরকারের মূল লক্ষ্য। অর্থনীতি যেভাবে বাড়ছিল, সেটি অব্যাহত থাকলে মোটা দাগে সে লক্ষ্য হয়তো অর্জিত হতে পারত। কিন্তু বর্তমানে প্রবৃদ্ধির যে হার, তাতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন পথে হাঁটব। সম্প্রসারণমূলক অর্থনীতির পথে হেঁটে জিডিপি বাড়াব, নাকি সংকোচনমুখী নীতিই বহাল রাখব?
বাজেট কেবল আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, এটি সরকারের রাজনৈতিক ও উন্নয়নের দিকনির্দেশনাও। ২০০৮-এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরপর সরকার সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এ ধরনের বেঞ্চমার্কিং অন্যান্য নির্বাচনে ছিল না। বর্তমান সরকার বলেছিল, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত করা তাদের মূল লক্ষ্য।
যে সময়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ ধরা হচ্ছে, তখন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আইএমএফের সহায়তা পেতে অর্থমন্ত্রী যে মেমোরেন্ডাম অব ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল পলিসি জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য (বিওপি) ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় চাপ আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
মূলত অর্থ ব্যবস্থাপনায় চাপ থাকার কারণে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাও চাপের মধ্যে পড়েছে। তবে যে চাপ বা ঝুঁকি, তা আমাদের নিজেদেরই সৃষ্ট। দিকনির্দেশনার ত্রুটির কারণে বা সরকারি উন্নয়ন কৌশলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাউকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট। এসব প্লান্টে তরল জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে ভর্তুকি ব্যয় বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে, একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি ও সরকারের ঋণ গ্রহণও বেড়েছে; যা রাজস্ব ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে।
প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় বিনিয়োগ থেকে। আইএমএফ থেকে অর্থপ্রাপ্তির আশায় কতগুলো শর্ত মেনে নিতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে সুদের হারের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া। এতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে বিনিয়োগ ব্যয় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রবৃদ্ধির গতিকে সংকুচিত করেছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও নিজস্ব ভুল ব্যবস্থাপনার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে; বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম আমদানি। কিন্তু একই হারে রপ্তানি বাড়েনি। ফলে লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ তৈরি হয়েছে। একইভাবে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি আগের হারে না হওয়ায় রিজার্ভে চাপ তৈরি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়েছে, চাহিদা অনুযায়ী ডলারের সরবরাহ না থাকায় টাকার বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন হয়েছে। সেই সঙ্গে রিজার্ভের ওপরে চাপ পড়েছে। মূল্যস্ফীতি এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক ওপরে। এ কারণে বিশেষ করে নিম্ন আয় ও চাকরিজীবীদের ভোগ ব্যয় কমেছে। ফলে প্রবৃদ্ধি কমছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাঙ্ক্ষিত হারে আগের মতো বাস্তবায়িত হয়নি। অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তা, সামাজিক খাতে সরকারি বিনিয়োগ কমার কারণেও চাপ তৈরি করেছে। বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ সে রকম বাড়েনি। একদিকে যেমন লেনদেন ভারসাম্যের প্রভাব, অন্যদিকে রয়েছে সরকারি বিনিয়োগের অভাব। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়েনি।
বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় দরিদ্র্য সে হারে কমছে না। সে কারণে ভোগ বাড়ছে না। কর্মসংস্থান না বাড়লে দারিদ্র্য কাঙ্ক্ষিত হারে কমে না। বৈষম্য বাড়ে, প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। সরকারি ব্যয়, বিশেষত শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কর্মযোগ্যতা বাড়িয়ে থাকে। সেটি ঘটেনি।
অবকাঠামো খাতে সরকার, ব্যক্তি খাত, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়লে তা প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। কিন্তু পিপিপির বাস্তবায়নও তেমন লক্ষ করা যায়নি।
এটি এ সরকারের মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ সর্বশেষ বাজেট। দেশকে মধ্যম আয়ে উপনীত করা ছিল এ সরকারের মূল লক্ষ্য। অর্থনীতি যেভাবে বাড়ছিল, সেটি অব্যাহত থাকলে মোটা দাগে সে লক্ষ্য হয়তো অর্জিত হতে পারত। কিন্তু বর্তমানে প্রবৃদ্ধির যে হার, তাতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন পথে হাঁটব। সম্প্রসারণমূলক অর্থনীতির পথে হেঁটে জিডিপি বাড়াব, নাকি সংকোচনমুখী নীতিই বহাল রাখব?
No comments