প্রয়োজনে পিপিপির অর্থে পদ্মা সেতু

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) খাতের বরাদ্দ করা অর্থ প্রয়োজনে পদ্মা সেতুতে খরচ করবে সরকার। ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন খাতে বরাদ্দ অর্থও প্রয়োজনে পদ্মা সেতুতে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়া সরকারের আরো অনেক কোষাগার রয়েছে, প্রয়োজনে সেসব জায়গা থেকে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা হবে।


বৃহস্পতিবার সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত ৪১তম বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক এসব কথা বলেন। অর্থসচিব বলেন, প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপি খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন খাতে ৭৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই খাতে মোট তিন হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী মাসের (জুলাই) মধ্যেই পদ্মা সেতুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আগামী কাজের মৌসুমে সেতুর কাজ শুরু করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুত ২৩০ কোটি ডলার এখনো কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী মাসেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপিত বাজেটে উল্লেখ করেন, আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) খাতে আট প্রকল্পের বিপরীতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ৭৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তার ঠিক এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে বলা হলো, এ দুই খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনে পদ্মা সেতুতে স্থানান্তর করা হবে।
বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন, অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মূল্যস্ফীতি। আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭.২ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হয়েছে।
প্রাক্কলিত ৭.২ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত তিন বছরে বিনিয়োগ স্থবির হলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে ৬.৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাই আগামী বাজেটে ৭.২ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন সঠিক আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রবৃদ্ধির হার উচ্চাভিলাষী কি না- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী সরাসরি নাকচ করে দেন। ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, সব কৌশল সব সময় বলা যায় না। কারণ, তারিখ দিয়ে ভর্তুকি কমানো যাবে না। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মূল্যস্ফীতির সূচক অর্জিত হবে কি না বা কিভাবে অর্জিত হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া সঠিক একটি মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে ৯.১৫ শতাংশ বা এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। আগামী মাসে তা আরো কমে আসবে। এ ছাড়া খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হারও কমতে শুরু করেছে। সংযত মুদ্রানীতি গ্রহণ করায় মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। এমন এক মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধিকে তা আঘাত না করে। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ ও ধানজাতীয় পণ্য চাষাবাদে অত্যন্ত কম সুদে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতির আরো পতন হবে।
এ ছাড়া আমদানি ব্যয়ও কমতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমছে। রেমিট্যান্সের বিষয়ে গভর্নর বলেন, এ মাসের শেষের দিকে রেমিট্যান্সের রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

No comments

Powered by Blogger.