গণসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি বিএনপির

১১ জুনের গণসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি এবং এর নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। সমাবেশ উপলক্ষে প্রতিদিন নেতারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।


বৈঠকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করতে জোট নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিকে আজ শনিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে ১১ জুনের পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্রে জানা যায়। সমাবেশ থেকেই ওই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে বিএনপি ও জোটের মহানগর কমিটি এবং ঢাকার আশপাশের জেলার দলীয় নেতাদের ব্যাপক লোক জমায়েতের জন্য বিশেষভাবে দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ছাড়া সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্তরের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ৪০টির মতো টিম কাজ করছে। পল্টন ময়দান, মানিক মিয়া এভিনিউ অথবা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তিনটি স্থানের যেকোনো একটিতে সমাবেশ করতে চায় ১৮ দলীয় জোট। শেষ পর্যন্ত অনুমতি না মিললেও বিএনপি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বলে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা তিনটি স্থানের নাম উল্লেখ করে আবেদন করেছি। আশা করি, সরকার একটি স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে। অনুমতি না দিলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।'
নোমানের হুমকি : সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংযোগকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, '১১ জুনের সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের জমায়েত ঘটবে। আমাদের আলটিমেটাম অনুযায়ী এ সমাবেশ থেকে কঠিন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে। সরকার পতনে হরতালের চেয়েও কঠিন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে নোমান সাংবাদিকদের বলেন, 'জনগণ চায় রাজপথ, রেলপথ অবরোধ করে দিতে। আমরা জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি। তারা এ সরকারের পতন চায়। জনগণের দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত।' সমাবেশ করার অনুমতি না পেলে সিদ্ধান্ত কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রয়োজনে ঢাকাজুড়ে সমাবেশ করব। রাজধানীর যেখানেই ফাঁকা থাকবে, সেখানেই সমাবেশ চলবে। এ সমাবেশ কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।' গণসংযোগ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ইমরান সালেহ প্রিন্স, হাফিজুর রহমান কবীর প্রমুখ। প্রেসক্লাব, তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন ও কোতোয়ালি থানার বিভিন্ন এলাকায় দিনব্যাপী গণসংযোগ করেন তাঁরা।
জাসাসের নির্বাহী কমিটির মতবিনিময় : সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাসাসের সঙ্গে বিএনপির এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাসাস সভাপতি এম এ মালেক। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু এমপি, মো. শাহজাহান, ঢাকা মহানগর সদস্যসচিব মো. আবদুস সালাম, জাসাস সাধারণ সম্পাদক মনির খান, জাসাস নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ চপল, মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন, রফিকুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, সালাউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, সিরাজুল ইসলাম খান, মাহমুদুল হক সঞ্চয় প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের ডাকে এবং খালেদা জিয়ার আহ্বানে আগামী ১১ জুনের ঢাকার সমাবেশকে সফল করতে নেতা-কর্মীদের তৃণমূল পর্যায় থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মেডিক্যাল উপকমিটির সভা : সমাবেশ সফল করতে গতকাল বিকেল ৩টায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে মেডিক্যাল উপকমিটির সভা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. শাহজাহান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, অধ্যাপক ডা. আবদুস সালাম, অধ্যাপক ডা. আতিক, ডা. সাইফুদ্দিন নিসারসহ নার্স, প্যারামেডিক, ফিজিওথেরাপিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবকরা। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১১ জুন ঢাকায় সমাবেশ সর্বাত্মক সফল করার জন্য ১৮টি মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক সমাবেশস্থলে ও আশপাশে জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে। প্রত্যেক টিমে চারজন চিকিৎসক, দুজন নার্স, দুজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ও দুজন করে স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসাসেবায় প্রস্তুত থাকবেন। এ ছাড়া আটটি অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্যে মোবাইল মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা কার্যক্রম চালাবেন।

No comments

Powered by Blogger.