সরকারকে আরও সময় দেওয়ার চিন্তা-কঠোর কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি by তানভীর সোহেল

১১ জুনের সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে তারা সরকারকে আরও সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে মনে করেন, এ সরকারের মেয়াদ আরও দেড় বছর আছে।


এ দীর্ঘ সময় ধরে টানা কর্মসূচি পালন করা ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে সম্ভব নয়। আর এটা জনগণও ভালোভাবে নেবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর কর্মসূচি বলতে হরতালকে বোঝানো হয়। আপাতত হয়তো হরতালের দিকে তাঁদের দল যাবে না। তবে দাবি আদায়ে অবরোধ, সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি থাকবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়—এমন কর্মসূচি তাঁরা দিতে চান না।
এর আগে গত ১২ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৯০ দিন অর্থাৎ ১০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। তিনি বলেছিলেন, দাবি না মানলে ১১ জুন ঢাকায় সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কিন্তু সম্প্রতি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়া আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। এখন কেবল ১১ জুন ঢাকায় বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, কয়েকটি কারণে বিএনপি টানা ও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এর মধ্যে সারা দেশে দলীয় নেতাদের মামলা ও গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা, দল গুছিয়ে নেওয়া, জোট কার্যকর ও আকার বড় করা, নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা, বিদেশি কূটনীতিকদের চাওয়া ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে সরকার কী করতে চায় তা পর্যবেক্ষণ করা অন্যতম কারণ। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরম ও সামনে দুটি ঈদের কারণে সময়টা টানা আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত নয়। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বিরোধী দল তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান দাবি করেন, এটাকে বিরোধী দলের পিছু হটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা জনদুর্ভোগ না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তাঁর দল নির্দলীয় সরকারের দাবি মানাতে সরকারকে চাপে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি। তাঁর মতে, দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে হবে সরকারের শেষ সময়ে। এত আগে সময় বেঁধে দেওয়া যৌক্তিক হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী বছর থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার চিন্তা করছে বিএনপি। চলতি বছর দলটি নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিতে সাদামাটা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। রোজার আগে জেলাপর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় সমাবেশ করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ঢাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ করবে বিএনপি, ১৮ দলীয় জোট ও অঙ্গ সংগঠনগুলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি হরতাল দিতে চায় না। তবে সরকার যদি কর্মসূচি করতে না দেয়, তখন ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, বিএনপি প্রত্যাশা করে, সরকার তাদের দাবি মানবে এবং বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে সমস্যার সমাধান করবে। দেশের ক্ষতি হয়, এমন কিছু বিএনপি করতে চায় না।

No comments

Powered by Blogger.