গদ্যকার্টুন-নিরীহ কৌতুক by আনিসুল হক
বিয়ের রাতে বিড়াল মারার গল্পটা জানেন? সেটা পরে বলব। তার আগে বেয়াদব তোতাপাখির গল্পটা বলে নিই। একজন নিঃসঙ্গ প্রবীণা ঠিক করলেন যে তাঁর এই একাকী জীবনের একঘেয়েমি দূর করার জন্য তিনি একটা তোতাপাখি কিনবেন। তিনি গেলেন নীলক্ষেত পশুপাখির দোকানে।
খাঁচার ভেতরে নানা রঙের পশুপাখি। সাদা খরগোশ, সবুজ টিয়া। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, কে যেন বলে উঠল, ‘বাহ্, কী সুন্দর একজন ভদ্রমহিলা এসেছেন! কী অভিজাত তাঁর চেহারা!’
‘কে কথা কয়?’
‘ভদ্রমহিলা শুধু দেখতে সুন্দর তা নয়, খুবই স্মার্ট।’
তিনি চমকে উঠলেন। তাকিয়ে দেখলেন, একটা খাঁচায় একটা তোতাপাখি।
তিনি বললেন, ‘তুমিই কি কথা বললে?’
‘জি, ম্যাডাম। আপনার মতো স্মার্ট মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। আপনি এসেছেন, আর এই দোকানটা স্নিগ্ধতায় ভরে উঠল।’
‘তোমার মতো তোতাপাখিও আমি দেখিনি। কী সুন্দর করে কথা বলো! আচ্ছা, তুমি কি আমার সাথে যাবে? আমি তোমাকে পুষব।’
‘তাহলে তো আমার জীবন ধন্য হবে, ম্যাডাম। আমি যদি আপনার কাছাকাছি থাকতে পারি!’
ভীষণ খুশি হয়ে ভদ্রমহিলা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তোতাপাখিটাকে কিনে নিয়ে বাসায় এলেন।
বাসায় আসার পর তোতাপাখি বলল, ‘বুড়ি, খিদা লাগসে, খাইতে দে।’
ভদ্রমহিলা চমকে উঠলেন। এ কেমন ধারা কথা বলার ছিরি!
‘এই, তুমি এইভাবে কথা বলছ কেন? সুন্দর করে কথা বলো।’
‘খাইতে দিস না। আবার আমারে কথা কওন শিখাস। বুড়িগুলান সব সময় হাড় জ্বালাইনাই হয়।’ তোতাপাখিটা বলল।
‘শোনো, আরেকটা কথা বললে কিন্তু আমি ভীষণ রেগে যাব।’
‘রাইগা যাবি তো যা। রাইগা গিয়া কী করবি?’
‘তোমাকে শাস্তি দেব।’
‘আয় দেখি আভাইগা বুড়ি। কাছে আয়। দেখি কে কারে শাস্তি দেয়।’
ভদ্রমহিলা যেই না পাখিটার কাছে গেলেন, অমনি পাখিটা তাঁকে ঠুকরে দিল।
‘যন্ত্রণা তো! এই, তোমাকে কিন্তু আমি ভীষণ সাজা দেব।’ ভদ্রমহিলা চোখমুখ শক্ত করে বললেন।
‘আমি জানি বুড়িরা কী শাস্তি দেয়। আমারে ছাইড়া দিবি। আমি উইড়া আবার দোকানে যামু। দোকানে আরও কত পশুপাখি আছে! তাগো লগে থাকুম। দোকানি আমারে কত আদর করবে!’
ভদ্রমহিলা আবার রেগে পাখিটার কাছে গেলেন। অমনি পাখিটা তাঁকে আবারও ঠুকরে দিল। মহিলার হাতের আঙুল কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে লাগল।
এবার তিনি পাখিটাকে খাঁচাসমেত তাঁর বিশাল ফ্রিজটার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন।
পাঁচ মিনিট পর পাখিটাকে বের করলেন। পাখিটা বলল, ‘আমি আর কোনো দিনও আপনার সঙ্গে বেয়াদবি করব না। আচ্ছা, বলুন তো ম্যাডাম, ওই মোরগটা কী বেয়াদবি করেছিল? আপনাকে কি ঠুকরে দিয়েছিল? তা না হলে আপনি তার চামড়া ছিলেছেন কেন?’
এরপর আর কোনো দিন পাখিটা বেয়াদবি করেনি।
এবার আরেকটা গল্প।
নতুন বউ বিয়ে করে ফিরছে বর। একটা ঘোড়ার পিঠে চড়ে তারা দুজন কনের বাড়ি থেকে ফিরছে বরের বাড়ি। ঘোড়াটা খুবই দুর্বল। দুজনকে নিয়ে চলতে তার অসুবিধা হচ্ছে। এদিকে বরের কোমরে একটা পিস্তল।
ঘোড়াটা একবার হোঁচট খেল।
বর বলল, এই একবারই আমি ক্ষমা করি। আরেকবার হোঁচট খেলে কিন্তু ক্ষমা করব না।
আবার মাঝপথে ঘোড়ার পিঠে চলছে সদ্য বিবাহিত নববধূ।
ঘোড়াটার পা একটা পাথরের সঙ্গে বাঁধল। সে হোঁচট খেল।
সঙ্গে সঙ্গে বউকে নিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে বরটা তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি চালাল। ঘোড়াটা মারা গেল মরুভূমির বুকে কাতরাতে কাতরাতে।
বউ বলল, ঘোড়াটাকে তুমি গুলি না করলেও পারতে।
বর বলল, আমি আমার কাজের সমালোচনা একবার সহ্য করব। দ্বিতীয়বার আর সহ্য করব না। এক...
এরপর এই মহিলা আর কোনো দিন তার স্বামীর কোনো কথা বা কাজের প্রতিবাদ করেনি।
(এই গল্পটা ভীষণ পুরুষবাদী। আমি ক্ষমা চাচ্ছি গল্পটা বলার জন্য। প্রথম রাতে বিড়াল মারার গল্পটা তাই আর বলছি না। তবে বুঝতেই পারছেন, একই গল্প, বাসররাতে এক লাথিতে বিড়াল কেন মেরেছিল বর।)
কিন্তু এই গল্প বলার পেছনে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে, তা হলো, শাস্তি হলো দৃষ্টান্তমূলক। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যেথা সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। সুবিচার হলে কাউকে শাস্তি দিয়ে বিচারক আনন্দ পান না। দণ্ডিতের মতো তাঁর হূদয়ও বিদীর্ণ হয়। কিন্তু তবু তিনি শাস্তি দেন। কারণ আর কেউ যেন এই অপরাধ না করে। এই দেখো, এই অপরাধ একজন করেছিল, তার কী হলো পরিণতি। এই দৃষ্টান্ত দেখে বাকিরা শিক্ষা নেয়। তারা অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে।
বলা হচ্ছে, সামরিক শাসন তো সাংবিধানিক পন্থায় আসে না। এটা তো আইনকানুন-সংবিধানকে বন্দুকের মুখে দলিত-মথিত করেই আসে। আইন দিয়ে কি তার আবির্ভাব বন্ধ করা যায়?
আমরা বলব, দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি হয়েছে, দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলে তা কাজে দিতেও পারে।
তবে এ আমার পাপ, এ তোমার পাপ। সামরিক শাসকের সঙ্গে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, সাংবাদিক এমনকি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও ছিলেন।
আমাদের সবারই অনুতপ্ত হতে হবে।
তবু সংবিধান লঙ্ঘনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা গেলে একটা সুফল আসতেও পারে।
অন্যদিকে সরকারদলীয় সাংসদেরা বিচারের আগেই যদি বিচার-প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে যান, তাহলে স্থাপিত হয় খারাপ দৃষ্টান্ত। পুরো বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক, চুলচেরা বিশ্লেষণ হোক পরিস্থিতির, তারপর বিচারে যদি কেউ নির্দোষ, নিরপরাধ বলে প্রমাণিত হন, মাননীয় বিচারক তাঁকে নিশ্চয়ই বেকসুর খালাস দেবেন, তিনি মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসবেন, জনতা তাঁদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেবে। আর যদি তিনি অপরাধী হন, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তাঁর সাজা হবে। যা-ই হোক না কেন, সরকারের ওপর জনতার আস্থা বাড়বে, আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নয়, আইন সবার জন্য সমান, এই আপ্তবাক্য যথার্থ বলে প্রমাণিত হবে।
নাকি আইন আসলে সবার জন্য সমান নয়? আইন সবার জন্য সমান, কারও কারও জন্য একটু বেশি সমান।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
‘কে কথা কয়?’
‘ভদ্রমহিলা শুধু দেখতে সুন্দর তা নয়, খুবই স্মার্ট।’
তিনি চমকে উঠলেন। তাকিয়ে দেখলেন, একটা খাঁচায় একটা তোতাপাখি।
তিনি বললেন, ‘তুমিই কি কথা বললে?’
‘জি, ম্যাডাম। আপনার মতো স্মার্ট মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। আপনি এসেছেন, আর এই দোকানটা স্নিগ্ধতায় ভরে উঠল।’
‘তোমার মতো তোতাপাখিও আমি দেখিনি। কী সুন্দর করে কথা বলো! আচ্ছা, তুমি কি আমার সাথে যাবে? আমি তোমাকে পুষব।’
‘তাহলে তো আমার জীবন ধন্য হবে, ম্যাডাম। আমি যদি আপনার কাছাকাছি থাকতে পারি!’
ভীষণ খুশি হয়ে ভদ্রমহিলা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তোতাপাখিটাকে কিনে নিয়ে বাসায় এলেন।
বাসায় আসার পর তোতাপাখি বলল, ‘বুড়ি, খিদা লাগসে, খাইতে দে।’
ভদ্রমহিলা চমকে উঠলেন। এ কেমন ধারা কথা বলার ছিরি!
‘এই, তুমি এইভাবে কথা বলছ কেন? সুন্দর করে কথা বলো।’
‘খাইতে দিস না। আবার আমারে কথা কওন শিখাস। বুড়িগুলান সব সময় হাড় জ্বালাইনাই হয়।’ তোতাপাখিটা বলল।
‘শোনো, আরেকটা কথা বললে কিন্তু আমি ভীষণ রেগে যাব।’
‘রাইগা যাবি তো যা। রাইগা গিয়া কী করবি?’
‘তোমাকে শাস্তি দেব।’
‘আয় দেখি আভাইগা বুড়ি। কাছে আয়। দেখি কে কারে শাস্তি দেয়।’
ভদ্রমহিলা যেই না পাখিটার কাছে গেলেন, অমনি পাখিটা তাঁকে ঠুকরে দিল।
‘যন্ত্রণা তো! এই, তোমাকে কিন্তু আমি ভীষণ সাজা দেব।’ ভদ্রমহিলা চোখমুখ শক্ত করে বললেন।
‘আমি জানি বুড়িরা কী শাস্তি দেয়। আমারে ছাইড়া দিবি। আমি উইড়া আবার দোকানে যামু। দোকানে আরও কত পশুপাখি আছে! তাগো লগে থাকুম। দোকানি আমারে কত আদর করবে!’
ভদ্রমহিলা আবার রেগে পাখিটার কাছে গেলেন। অমনি পাখিটা তাঁকে আবারও ঠুকরে দিল। মহিলার হাতের আঙুল কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে লাগল।
এবার তিনি পাখিটাকে খাঁচাসমেত তাঁর বিশাল ফ্রিজটার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন।
পাঁচ মিনিট পর পাখিটাকে বের করলেন। পাখিটা বলল, ‘আমি আর কোনো দিনও আপনার সঙ্গে বেয়াদবি করব না। আচ্ছা, বলুন তো ম্যাডাম, ওই মোরগটা কী বেয়াদবি করেছিল? আপনাকে কি ঠুকরে দিয়েছিল? তা না হলে আপনি তার চামড়া ছিলেছেন কেন?’
এরপর আর কোনো দিন পাখিটা বেয়াদবি করেনি।
এবার আরেকটা গল্প।
নতুন বউ বিয়ে করে ফিরছে বর। একটা ঘোড়ার পিঠে চড়ে তারা দুজন কনের বাড়ি থেকে ফিরছে বরের বাড়ি। ঘোড়াটা খুবই দুর্বল। দুজনকে নিয়ে চলতে তার অসুবিধা হচ্ছে। এদিকে বরের কোমরে একটা পিস্তল।
ঘোড়াটা একবার হোঁচট খেল।
বর বলল, এই একবারই আমি ক্ষমা করি। আরেকবার হোঁচট খেলে কিন্তু ক্ষমা করব না।
আবার মাঝপথে ঘোড়ার পিঠে চলছে সদ্য বিবাহিত নববধূ।
ঘোড়াটার পা একটা পাথরের সঙ্গে বাঁধল। সে হোঁচট খেল।
সঙ্গে সঙ্গে বউকে নিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে বরটা তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি চালাল। ঘোড়াটা মারা গেল মরুভূমির বুকে কাতরাতে কাতরাতে।
বউ বলল, ঘোড়াটাকে তুমি গুলি না করলেও পারতে।
বর বলল, আমি আমার কাজের সমালোচনা একবার সহ্য করব। দ্বিতীয়বার আর সহ্য করব না। এক...
এরপর এই মহিলা আর কোনো দিন তার স্বামীর কোনো কথা বা কাজের প্রতিবাদ করেনি।
(এই গল্পটা ভীষণ পুরুষবাদী। আমি ক্ষমা চাচ্ছি গল্পটা বলার জন্য। প্রথম রাতে বিড়াল মারার গল্পটা তাই আর বলছি না। তবে বুঝতেই পারছেন, একই গল্প, বাসররাতে এক লাথিতে বিড়াল কেন মেরেছিল বর।)
কিন্তু এই গল্প বলার পেছনে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে, তা হলো, শাস্তি হলো দৃষ্টান্তমূলক। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যেথা সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। সুবিচার হলে কাউকে শাস্তি দিয়ে বিচারক আনন্দ পান না। দণ্ডিতের মতো তাঁর হূদয়ও বিদীর্ণ হয়। কিন্তু তবু তিনি শাস্তি দেন। কারণ আর কেউ যেন এই অপরাধ না করে। এই দেখো, এই অপরাধ একজন করেছিল, তার কী হলো পরিণতি। এই দৃষ্টান্ত দেখে বাকিরা শিক্ষা নেয়। তারা অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে।
বলা হচ্ছে, সামরিক শাসন তো সাংবিধানিক পন্থায় আসে না। এটা তো আইনকানুন-সংবিধানকে বন্দুকের মুখে দলিত-মথিত করেই আসে। আইন দিয়ে কি তার আবির্ভাব বন্ধ করা যায়?
আমরা বলব, দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি হয়েছে, দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলে তা কাজে দিতেও পারে।
তবে এ আমার পাপ, এ তোমার পাপ। সামরিক শাসকের সঙ্গে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের মধ্যে রাজনীতিক, আমলা, সাংবাদিক এমনকি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও ছিলেন।
আমাদের সবারই অনুতপ্ত হতে হবে।
তবু সংবিধান লঙ্ঘনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা গেলে একটা সুফল আসতেও পারে।
অন্যদিকে সরকারদলীয় সাংসদেরা বিচারের আগেই যদি বিচার-প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে যান, তাহলে স্থাপিত হয় খারাপ দৃষ্টান্ত। পুরো বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক, চুলচেরা বিশ্লেষণ হোক পরিস্থিতির, তারপর বিচারে যদি কেউ নির্দোষ, নিরপরাধ বলে প্রমাণিত হন, মাননীয় বিচারক তাঁকে নিশ্চয়ই বেকসুর খালাস দেবেন, তিনি মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসবেন, জনতা তাঁদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেবে। আর যদি তিনি অপরাধী হন, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তাঁর সাজা হবে। যা-ই হোক না কেন, সরকারের ওপর জনতার আস্থা বাড়বে, আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নয়, আইন সবার জন্য সমান, এই আপ্তবাক্য যথার্থ বলে প্রমাণিত হবে।
নাকি আইন আসলে সবার জন্য সমান নয়? আইন সবার জন্য সমান, কারও কারও জন্য একটু বেশি সমান।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments