জনশক্তি রফতানি-কর্মী পাঠানোর ব্যয় কমুক
প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন জাতীয় সংসদে ৫ জুন একটি সুখবর দিয়েছেন_ বাংলাদেশি কর্মীরা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া যেতে পারবে। তিনি আরও একটি মন্তব্য করেছেন_ আদম ব্যবসায়ী এবং এজেন্টদের কারণে বিদেশে জনশক্তি রফতানির ব্যয় বেড়ে যায়।
এ মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই। আর তিনি যে সুখবরটি দিয়েছেন, সেটা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হোক, এটাই চাইবে মালয়েশিয়ায় কাজ নিয়ে যেতে আগ্রহী লাখ লাখ বাংলাদেশি। পূর্ব এশিয়ার এ সমৃদ্ধ দেশটিতে বন্ধ থাকা শ্রমবাজার ফের উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে। সেখানে ৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মীকে বৈধতা প্রদানের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় নতুন করে যদি কর্মী নেওয়া শুরু হয় এবং তারা মাত্র ৩০-৪০ হাজার টাকা ব্যয় করেই যেতে পারেন, তার চেয়ে ভালো খবর আর কিছুই হতে পারে না। বাঁকা পথে ওই দেশের কাজের জন্য যেতে কী বিপুল অর্থ ব্যয় হয় সেটা প্রকাশ পেয়েছে ৭ জুন সমকালে 'মালয়েশিয়ায় পাঠানোর আগে চট্টগ্রামে ২৬ জন উদ্ধার' শিরোনামের খবরে। এতে বলা হয়, র্যাবের হাতে উদ্ধার পাওয়া এসব লোককে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া এবং আরও কোনো দেশে অবৈধভাবে পাঠানো হচ্ছিল। তাদের কাছ থেকে পাচারচক্র প্রথমে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয় এবং মালয়েশিয়া পেঁৗছে দেওয়ার পর নির্ধারিত দুই লাখ টাকার বাকি অংশ পরিশোধ করতে হয়। চরম ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানো প্রত্যেকের জন্যই এ ধরনের অর্থ নির্ধারিত ছিল। শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার আগে এমনকি বৈধপথেও যারা বিভিন্ন ম্যান পাওয়ার এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়া গেছে, তাদের পরিশোধিত অর্থের অঙ্কও ছিল দুই লাখ টাকার মতো। লিবিয়ায় শান্তি ফিরে আসতে না আসতেই সেখানেও অবৈধপথে লোক পাঠাতে একটি চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে, এমন খবর সংবাদপত্রে এসেছে। এ ধরনের অপকর্ম প্রতিযোগিতামূলক ও দুর্লভ শ্রমবাজারে প্রবেশের প্রক্রিয়া বিঘি্নত করবে তাতে সন্দেহ নেই। যারা এ অসততায় জড়িত তাদের শুধু সতর্ক করে দেওয়া যথেষ্ট হবে না, শাস্তি দিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যত অনুপস্থিত। প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্যয় কমিয়ে রাখার জন্য কয়েকটি দেশে সরকারিভাবে কর্মী প্রেরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপ সফল হলে দেশবাসী স্বাগত জানাবে। এ জন্য প্রয়োজন পড়বে আন্তরিকতা ও দক্ষতার। এক সময়ে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় জড়িত ছিল। কিন্তু সে অভিজ্ঞতা আদৌ সুখকর ছিল না। অদক্ষতা ও দুর্নীতি হাতে হাত মিলিয়ে চলেছিল এবং বেসরকারি খাত সে সুযোগেই জাঁকিয়ে বসে। প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কি সে দুঃসময় কাটিয়ে উঠেতে পেরেছে? মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা যে কম খরচে লোক পাঠানোর সুযোগ দিয়ে নিজেদের জন্যও কিছু অর্থ হাতিয়ে নেবেন না, তার নিশ্চয়তা রয়েছে কি? এটা হয়ে থাকলে ভালো কথা। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অভিজ্ঞতা বড়ই তিক্ত। বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে যেতে ইচ্ছুকদের ভোগান্তি ও ব্যয় কমানো এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সরকারকেও ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। একই সঙ্গে চাই সঠিক ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ। এ ক্ষেত্রেও সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
No comments