বিপন্ন পৃথিবী-রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে

সুন্দর এই পৃথিবীর আলো-বাতাস দূষিত হয়ে মানুষের জীবন সংহারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে! এমন কথা কেউই ভাবতে নারাজ। কিন্তু বাস্তবতা সেদিকেই যাচ্ছে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্টনি বারনস্কির নেতৃত্বাধীন একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদই বদলে যাবে পৃথিবী।


তার আলামত এখনই স্পষ্ট। লক্ষণগুলো এতই ভয়াবহ যে বিপন্ন পৃথিবীর অবস্থা বোঝাতে গিয়ে ১২ হাজার বছরের মধ্যে বিরল বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ১২ হাজার বছর আগে প্রবল হিমবাহ ঘটনার পর এ পর্যন্ত পৃথিবী এত বিপর্যয়ের মুখে কখনো পড়েনি বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। এর অন্যতম কারণ, পৃথিবীর বুকে থাকা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষের চাপ। কোটি কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিপর্যস্ত এই পৃথিবীকে নিজ ক্ষমতায় অক্ষুণ্ন রাখার জন্য কতটুকু চেষ্টা করছে মানুষ। বিপন্ন পৃথিবীর কথা চিন্তা করতে গেলে এ প্রসঙ্গটি অবশ্যই এসে যায়। সচেতন মানুষের দাবিদাওয়া ও আবেদন-নিবেদনের পর সরকারগুলোর টনক নড়ে মাঝেমধ্যে। সম্মেলন হয়, চুক্তিও হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কাজের কাজ খুব একটা হয় না। কিয়োটো সম্মেলনের মতো অনেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষজ্ঞ ও সরকারপ্রধান কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে। এ মাসেই আবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে এমনি আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখানে হয়তো ৭০১তম চুক্তিও সম্পাদন হবে। কিন্তু বাস্তবতার দিকে আমাদের নজর কতটা থাকবে?
উন্নত বিশ্ব কার্বন নির্গমন করছে নিজেদের ইচ্ছামতো। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের ফলে দক্ষিণ মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে অস্বাভাবিক। জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে সেই সূত্রে। এর প্রভাবে পৃথিবীর জলবায়ুর যে কুপরিবর্তন হচ্ছে, তার দায় বহন করতে হচ্ছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গরিব দেশগুলোকে। তারা নিজেরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ না হলেও দুর্ভোগের সিংহভাগই পড়ছে তাদের ঘাড়ে। রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ব্রাজিলেরই উদাহরণ কাজে লাগানো যেতে পারে। আমাজন বনাঞ্চল ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার কাজে তারা সফল হয়েছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ দেশের অন্যতম বাংলাদেশকে আত্মরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ এলাকা ডুবে যাবে। আইলা ও সিডরের মতো আরো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে থাকবে বাংলাদেশে। উন্নত বিশ্বকে বুঝতে হবে, পৃথিবীকে ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে তা বন্ধ করতে হবে। কারণ পৃথিবীটা আমাদের সবারই বসবাসের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.