কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে-ভোগ্যপণ্যের যুক্তিহীন উচ্চমূল্য

পবিত্র রমজান মাসের জন্য সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও ভোজ্যতেল। সরকার চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি মিল গেটে ৪৩ ও খুচরা বাজারে ৪৭ টাকা। কিন্তু ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫২ টাকা পর্যন্ত।


খোলা সয়াবিন তেলের দাম সরকার নির্ধারণ করেছে লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, কিন্তু খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৩-৮৪ টাকায়। পাম তেলও বিক্রি হচ্ছে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে। এসব ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণগুলো খুঁজতে গেলে বাজারে একটা গোলমেলে পরিস্থিতি প্রতীয়মান হয়: স্তরে স্তরে অসংগতি ও অসাধুতার ইঙ্গিত মেলে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন তুলেছেন: সরকার নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে কেন? উত্তর মেলেনি। আমদানিকারক, মিল-মালিক, পাইকারি ও ডিও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে, তাঁরা পরস্পরের ওপর দায় চাপাতে চেয়েছেন। একজন মিল-মালিক বলেছেন, খুচরা বাজারে এখন যে চিনি বিক্রি হচ্ছে, তাঁর কারখানায় সে চিনির উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা। সেই চিনি বাজারে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কেন? একজন ডিও ব্যবসায়ী এ রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন: সব কারখানা থেকে সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না, কেজিপ্রতি চার টাকা বেশি দরে তিনি মিল গেটে চিনি কিনেছেন, এমন দৃষ্টান্তও তিনি দিয়েছেন। মিল-মালিকেরা বলছেন, তাঁরা মিল গেটে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন না। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? সরকারের আদেশ লঙ্ঘন করছে কোন পক্ষ? মিথ্যাচার করছে কারা?
পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামের যুক্তিহীন তারতম্যও বেশ গোলমেলে বিষয়। এখানেও এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর দোষ চাপাতে চায়। যেমন, খুচরা বিক্রেতারা এ মুহূর্তে বলছেন, তাঁরা সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করতে পারছেন না; কারণ, পাইকারি বাজারে দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তখন বলছেন, মিলগুলো সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এভাবে উৎপাদক ও ব্যবসায়ী পক্ষগুলোর মধ্যে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। কারা অসাধুতার আশ্রয় নিচ্ছে, তা ধরা যাবে না, এমন তো হতে পারে না। যখন প্রত্যেকে প্রত্যেককে দোষারোপ করেন, তখন সব পক্ষের দায় খতিয়ে দেখতে হয়।
মিল গেট থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত সর্বস্তরে কেনাবেচায় রসিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে কিছু সুফল ফলতে পারে। পণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত থাকতে সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তরের তরফ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে শুধু খুচরা বাজারে। এটা যথেষ্ট নয়, পাইকারি বাজার এবং মিল গেটেও কড়া নজরদারি ও ঝটিকা অভিযান চালাতে হবে। কোনো রকমের অসাধুতা ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের তরফে যাঁরা এসব দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদেরও সততা-আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.