বামন বৃক্ষ আদৃত মানব নয় by আলম শাইন
বনসাই হচ্ছে এক ধরনের শোভাবর্ধক উদ্ভিদ, যা বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষকে ছোট আকারে রেখে টবে পালন করা হয়। জানা যায়, এটি চীন দেশে উদ্ভূত এবং জাপানে বিকশিত। আপাতদৃষ্টিতে চীনকে বনসাইর জনক বলা হয়ে থাকলেও আসলে তা সঠিক নয়। চার হাজার বছর খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসরীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৃতীয় ফারাও রামসেস পাথর কেটে পাত্র বানিয়ে তাতে জলপাই, খেজুরসহ অন্যান্য গাছ লাগিয়ে মন্দিরে সরবরাহ করতেন এবং
রাজরাজড়াদের উপঢৌকন পাঠাতেন। এতে প্রতীয়মান হয়, বনসাইর জনক মিসরীয়রাই। প্রাচীন চীনা শব্দ 'পেনজাই' থেকে জাপানি 'বনসাই' শব্দের উৎপত্তি। বনসাই শব্দের প্রকৃত অর্থ অগভীর পাত্রের গাছ। জাপানি ভাষায় 'বন' বলতে বোঝায় অগভীর ট্রে বা সিরামিকের পাত্রকে। অপরদিকে 'সাই' হচ্ছে গাছ। আর দুয়ে মিলে নামকরণ হয়েছে 'বনসাই'। তবে জাপানিরা বনসাই নাম দেওয়ার আগে এটিকে 'হাচি-নো-কি' (গামলার গাছ) নামে ডাকত।
বর্তমানে বনসাই এশিয়াতে ব্যাপক সমাদৃত। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা এ দেশের ধনী এবং শৌখিন লোকদের ড্রয়িংরুমে অনায়াসে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এতে মূলত দুটি জিনিস বেঝাচ্ছেন তারা। এক. তার রুচিবোধ বেশ চওড়া। দুই. তার রয়েছে অর্থবিত্ত। না হলে এত আকাশছোঁয়া দাম দিয়ে একটি বুনো গাছ কিনে ঘরের ভেতর বন্দি করে রাখার মানেটাই-বা কী? এ নিয়ে আমাদের মোটেও মাথাব্যথা নেই। তার কড়ি সে জলে ঢালুক না হয় চুলায় ফেলুক_ সেটা তার একান্ত ব্যাপার। তার সেই বনসাই বৃক্ষে কলা ধরুক কি করলা ধরুক সেটাও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের ওসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বনসাইর ব্যাপারে মাথাব্যথা না থাকলেও অন্য একটি ব্যাপারে আমাদের মাথাব্যথা রয়েছে। ব্যাপারটি হচ্ছে বামন মানবদের নীরব কান্না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি বিত্তশালীদের কাছে যেমনি রয়েছে বামন বৃক্ষের কদর, ঠিক তেমনি উল্টোটি রয়েছে বামন মানবদের ক্ষেত্রে। শুধু বিত্তশালীদের কাছেই নয়, সাধারণ মানুষদের কাছেও দেখেছি বামন মানব নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। এমনকি একজন রাস্তার ভিক্ষুক পর্যন্ত তাকে নিয়ে অনায়াসে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছেন। এমনটি তো হওয়ার কথা নয়! একটি স্মার্ট শতাব্দীতে এসেও আমরা এখনও শুনছি সমাজের বামন মানবদের আহাজারি। তারা অনেকটাই চিড়িয়াখানার পশুদের মতো অসহায় হয়ে মানুষের মনোরঞ্জন জোগাতে ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে সার্কাস কিংবা ম্যাজিশিয়ানদের ভাঁড় বা সঙের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এটি হবে কেন? তার জন্য কি অন্য কোনো সম্মানজনক কাজের ব্যবস্থা রাষ্ট্র রাখেনি? সন্তান অস্বাভাবিক বেঁটে হলে বাবা-মায়েরাও অস্বস্তিতে পড়ে যান। সামর্থ্য থাকলেও অনেকে তাদের লেখাপড়া শেখাতে আগ্রহী হন না। ফলে তাদের জীবনটা অভিশপ্ত হয়ে উঠতে আর সময়ের প্রয়োজন হয় না। বিয়েশাদীতে তৈরি হয় নানা সমস্যা। অনেকটা অপাত্র বা অপাত্রীর হাতে তুলে দিতে হয় ওদের। সমগ্র বিশ্বেই এ চিত্রটি কমবেশি নজরে পড়ছে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পড়েছে যে, বামন মানব এখনও সমাজের অভিশপ্ত হয়ে আছেন। আধুনিক যুগে এসে এমনটি কি কারও কাম্য? সরকার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে এত সরব হলেও বামনদের ব্যাপারে এত নীরব কেন_ তা আমাদের বোধগম্য নয়।
alamshine@gmail.com
বর্তমানে বনসাই এশিয়াতে ব্যাপক সমাদৃত। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা এ দেশের ধনী এবং শৌখিন লোকদের ড্রয়িংরুমে অনায়াসে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এতে মূলত দুটি জিনিস বেঝাচ্ছেন তারা। এক. তার রুচিবোধ বেশ চওড়া। দুই. তার রয়েছে অর্থবিত্ত। না হলে এত আকাশছোঁয়া দাম দিয়ে একটি বুনো গাছ কিনে ঘরের ভেতর বন্দি করে রাখার মানেটাই-বা কী? এ নিয়ে আমাদের মোটেও মাথাব্যথা নেই। তার কড়ি সে জলে ঢালুক না হয় চুলায় ফেলুক_ সেটা তার একান্ত ব্যাপার। তার সেই বনসাই বৃক্ষে কলা ধরুক কি করলা ধরুক সেটাও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের ওসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বনসাইর ব্যাপারে মাথাব্যথা না থাকলেও অন্য একটি ব্যাপারে আমাদের মাথাব্যথা রয়েছে। ব্যাপারটি হচ্ছে বামন মানবদের নীরব কান্না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি বিত্তশালীদের কাছে যেমনি রয়েছে বামন বৃক্ষের কদর, ঠিক তেমনি উল্টোটি রয়েছে বামন মানবদের ক্ষেত্রে। শুধু বিত্তশালীদের কাছেই নয়, সাধারণ মানুষদের কাছেও দেখেছি বামন মানব নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। এমনকি একজন রাস্তার ভিক্ষুক পর্যন্ত তাকে নিয়ে অনায়াসে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছেন। এমনটি তো হওয়ার কথা নয়! একটি স্মার্ট শতাব্দীতে এসেও আমরা এখনও শুনছি সমাজের বামন মানবদের আহাজারি। তারা অনেকটাই চিড়িয়াখানার পশুদের মতো অসহায় হয়ে মানুষের মনোরঞ্জন জোগাতে ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে সার্কাস কিংবা ম্যাজিশিয়ানদের ভাঁড় বা সঙের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এটি হবে কেন? তার জন্য কি অন্য কোনো সম্মানজনক কাজের ব্যবস্থা রাষ্ট্র রাখেনি? সন্তান অস্বাভাবিক বেঁটে হলে বাবা-মায়েরাও অস্বস্তিতে পড়ে যান। সামর্থ্য থাকলেও অনেকে তাদের লেখাপড়া শেখাতে আগ্রহী হন না। ফলে তাদের জীবনটা অভিশপ্ত হয়ে উঠতে আর সময়ের প্রয়োজন হয় না। বিয়েশাদীতে তৈরি হয় নানা সমস্যা। অনেকটা অপাত্র বা অপাত্রীর হাতে তুলে দিতে হয় ওদের। সমগ্র বিশ্বেই এ চিত্রটি কমবেশি নজরে পড়ছে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পড়েছে যে, বামন মানব এখনও সমাজের অভিশপ্ত হয়ে আছেন। আধুনিক যুগে এসে এমনটি কি কারও কাম্য? সরকার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে এত সরব হলেও বামনদের ব্যাপারে এত নীরব কেন_ তা আমাদের বোধগম্য নয়।
alamshine@gmail.com
No comments