তিন বীমা কোম্পানিতে অডিটর নিয়োগ by শেখ আবদুল্লাহ

র্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বেসরকারি খাতের তিন বীমা কোম্পানির তদন্ত শুরু করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে পৃথক তিনটি অডিটর ফার্ম নিয়োগ করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ওই তিনটি কোম্পানি জনসাধারণের শেয়ার প্রাথমিক বাজারে (আইপিও) না ছাড়ার কারণে তাদের আর্থিক পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা যাচাই করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে বায়রা লাইফ


ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। গতকাল বুধবার আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ অ্যাকচুয়ারি ভিন্ন ভিন্ন তিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়ে অডিটর নিয়োগ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যানের চিঠিতে বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানি তিনটির মূল্যায়ন রিপোর্ট আইডিআরএর কাছে রয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করলেও কোম্পানি তিনটি লাভজনক (সারপ্লাস) হতে পারেনি। যে কারণে বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ যথাযথভাবে নিরাপদ নয়। এ জন্য বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানি তিনটির আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অডিটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, কোম্পানি তিনটির আর্থিক পরিস্থিতি বেশি ভালো নয়। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা কোম্পানি তিনটির জন্য এখন চ্যালেঞ্জিং। নানান অনিয়মের কারণে বর্তমানে কোম্পানি তিনটি ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, বায়রা ও গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০০ সালে ব্যবসা শুরু করে। আর হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ব্যবসা শুরু করে ১৯৯৬ সালে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই কোম্পানিগুলো লোকসান দেখিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। অথচ আইন অনুযায়ী ব্যবসা শুরু করার তিন বছরের মধ্যে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৬২টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি জীবন বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে ১০টি জীবন বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।
জানা গেছে, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে অডিটের জন্য এমজে আবেদিন অ্যান্ড কোম্পানি, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে অডিটের জন্য হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি এবং হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অডিটের জন্য মেসার্স অ্যাকনাবিন অ্যান্ড কোম্পানিকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস কোম্পানিকে নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী বছরের ২৯ মার্চের মধ্যে অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে আইডিআরএর কাছে। এই তিন কোম্পানি অডিট করতে অডিটর কোম্পানির ফি হিসেবে আইডিআরএর ব্যয় হচ্ছে ২৬ লাখ টাকা।
কোম্পানি তিনটির গত পাঁচ বছরের আয়, ব্যয়, সম্পদ ইত্যাদি বিষয়ে অডিট করা হবে। এই অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে এই তিন বীমা কোম্পানির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আইডিআরএ। জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম (কিস্তি) আয়, কী সংখ্যক প্রিমিয়াম বাতিল হয়েছে ও আউটস্টান্ডিং প্রিমিয়াম (মোট কিস্তি) কত তা অডিট করা হবে। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে কত সংখ্যক পলিসি নবায়ন হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট আদায় কত, এ পর্যন্ত কী পরিমাণ বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে, বীমা দাবি পরিশোধে বিলম্ব হয়েছে কিনা, বিশেষ করে ৫০টি বড় বীমা দাবি যেগুলো যথাযথ নিয়মে পরিশোধ করা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, এজেন্টদের কমিশন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা, সিইও এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোম্পানিতে কোনো বীমা করেছেন কি-না, করলে কোনো বীমা দাবি গ্রহণ করেছে কি-না, শীর্ষ ২৫ পলিসি হোল্ডারের মধ্যে এদের কেউ আছে কি-না দেখা হবে। পাশাপাশি কোম্পানির বিনিয়োগ, ঋণ এবং অগ্রিম, পণ্যমূল্য নির্ধারণ ও ভ্যালুয়েশন, স্থায়ী সম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ, গাড়ি, জমি ও বিল্ডিং, নগদ টাকা, ট্যাক্স ও ভ্যাট, চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা কী পরিমাণ সম্মানী ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন তার পর্যালোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে আইডিআরএর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, এই তিন বীমা কোম্পানি যে মূল্যায়ন রিপোর্ট আইডিআরএর কাছে রয়েছে তাতে অধিকাংশ সূচকই নেতিবাচক। কোম্পানি তিনটি বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে।

এজন্য গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানি তিনটির প্রকৃত অবস্থা জানার উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। যাতে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে সহজ হয় এবং ঝুঁকি এড়ানো যায়।

No comments

Powered by Blogger.