নিজেরা ভাগ করে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প by সজল জাহিদ
সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং কমিটির সদস্যদের চাপে পড়ে তাদের নির্বাচনী এলাকায় শত শত প্রকল্প নিতে বাধ্য হচ্ছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। হাজার কোটি টাকার এমন অন্তত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ ক'টি বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তা ছাড়া কয়েকটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষে জমি অধিগ্রহণ এবং দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় রয়েছে। জানা গেছে, তিন বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয়
কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প নিতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে থাকেন। পরে তাদের ডিও লেটারের (চাহিদাপত্র) পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব এলাকায় সহস্রাধিক কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কাজ দেখানোর জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে এমন প্রকল্প নিতে বাধ্য করেছেন। এর মধ্যে কমিটির সভাপতির এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, দেশের সব জায়গায় সব প্রকল্প চলবে না। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নিতে বলেছেন তারা।
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নেওয়া প্রকল্প সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের রাউজানে চারটি প্রকল্প নিয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ২৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ওই চারটি প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে এ সরকারের সময়।
কমিটির সভাপতির ডিও লেটারের মাধ্যমেই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে রাউজান থানার গহিরায় সীমিত আয়ের লোকদের কাছে বিক্রির জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় ১ হাজার ২২৪ বর্গফুট আয়তনের ২১৬টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। একই উপজেলার নোয়াপাড়ায় সম আয়তনের আরও ২১৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ১৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পরের দুটি প্রকল্প ২৮২ ও ২৬৬টি প্লটের। প্রথমটি ওই উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে এবং দ্বিতীয়টি চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে। এ দুটি প্রকল্প ২৩ কোটি ৮৩ লাখ এবং ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকায় শুরু হলেও পরে বরাদ্দ সংশোধন করে যথাক্রমে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ও ২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।
এসব প্রকল্প বিষয়ে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, যারা তাকে নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রতি তো তার কিছু দায়বদ্ধতা আছে। তা ছাড়া আগের মন্ত্রীদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কর্নেল যখন যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন সব প্রকল্প তার এলাকায় নিয়ে গেছেন। সাইফুর রহমান সব টাকা-পয়সা সিলেটে নিয়েছেন। কয়েক দিন আগেও একজন সব নিয়েছেন মাদারীপুরের জন্য। তাহলে তিনি চট্টগ্রামে নিলে সমস্যা কোথায়? তিনি বলেন, তার এলাকার জন্য ৪৩২ ফ্ল্যাটের প্রকল্প দেওয়া হলেও এটি বিক্রি হতে এক দিনের বেশি লাগবে না। এখানে আরও প্রয়োজন রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কমিটির অন্য প্রভাবশালী সদস্য নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তিনটি প্রকল্প নেওয়াতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প নিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের মধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় ওই ফ্ল্যাট আদৌ চলবে কি-না তা নিয়েও তাদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তবে এ প্রকল্পের সুপারিশ বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি ফজলে করিম চৌধুরী। একই এলাকায় দুটি সার্ভিসেস প্লটের প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ১৭৭টি প্লটের প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ এবং ১৬৬ প্লটের অন্য প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে বলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর এলাকা ঢাকার দোহারে ১ হাজার ২৯৮ বর্গফুটের ১৬৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা থেকে পরে সংশোধন করে এখন ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ১৫ তলাবিশিষ্ট তিনটি ভবনের জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এর বাইরে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস প্লটের জন্য ৭১৮টি প্লটের প্রস্তাব বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ লুৎফুর রহমান তার এলাকার জন্য করিয়ে নিয়েছেন তিনটি প্রকল্প। এর মধ্যে জেলার কলাতলীতে ৬৮০ বর্গফুটের ৫৭৫টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প সিভিল এভিয়েশনের মতামতের জন্য আটকে আছে। ১২৭ কোটি টাকায় আটতলা ২৩টি ভবনে এ ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। তা ছাড়া সাড়ে ৯৯ কোটি টাকায় জেলা শহরে ১ হাজার ৯৯৫টি সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট এবং চকরিয়ায় উপজেলায় নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য ৪৫টি বাণিজ্যিক ও ২২৬টি আবাসিক প্লট রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কিছুদিন আগে এ স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন কেএম খালিদ। কমিটিতে এসেই নিজ এলাকার জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের একটি প্রকল্প সম্প্রতি প্রণয়নে নেমেছেন তিনি। মুক্তাগাছা এলাকায় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের পাশে গণপূর্ত অধিদফতরের জায়গায় এ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে। গত অক্টোবরেও খালিদ ওই জায়গাটি উদ্ধারের জন্য কমিটির বৈঠকে কড়া বক্তব্য রাখেন। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে তারা প্রকল্পের লে-আউট প্রণয়ন শুরু করেছেন।
বর্তমানে কমিটিতে না থাকলেও শুরুতে যখন ছিলেন তখনই এনামুল হক তার নির্বাচনী এলাকা বাগমারায় ২০৪টি প্লটের একটি প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেন। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পে আড়াই ও ৬ কাঠার প্লট রয়েছে।
ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, প্রথমে যে ১০ জনকে নিয়ে কমিটি কাজ শুরু করেছিল তাদের প্রত্যেকের এলাকায় অন্তত একটি করে প্রকল্প দেওয়ার জন্য তারা কমিটি থেকে সুপারিশ করেছিলেন। তবে সব জায়গায় প্রকল্প হয়নি। পরে তিনি বলেন, কোনো না কোনো এলাকা থেকে শুরু করতে হবে। সে কারণে মন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতি এভাবে এগোনো যথেষ্ট কাজের বলে জানান তিনি।
এদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ সাফিয়া খাতুনের প্রস্তাবিত কোনো প্রকল্প গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এখনও গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ২৫ অক্টোবর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিনি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তার এলাকা কক্সবাজারের চকরিয়াতে একটি হাউজিং প্রকল্প নেওয়ার জন্য কমিটির মাধ্যমে অনুরোধ জানান।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য সাংসদের ডিও থাকলেও কেবল কমিটির সদস্যদের চাপ সামলাতেই অস্থির থাকছেন তারা। সে কারণে ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমেদসহ আরও কয়েকজনের ডিও উপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। অথচ ঢাকার ধামরাইয়ে প্লট বা ফ্ল্যাটের যে কোনো প্রকল্প করলেই তা সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারতেন তারা।
এসব প্রকল্প বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিএম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বলেন, সাংসদদের দিক থেকে সবসময়ই তাদের ওপর কিছু চাপ থাকে। আর কমিটির পক্ষ থেকে বাড়তি চাপ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে কমিটির সদস্যদের প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প নেওয়া হলেও তাদের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া এগুলো লোকসানি প্রকল্প হবে না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, দেশের সব জায়গায় সব প্রকল্প চলবে না। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নিতে বলেছেন তারা।
গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নেওয়া প্রকল্প সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের রাউজানে চারটি প্রকল্প নিয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ২৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ওই চারটি প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে এ সরকারের সময়।
কমিটির সভাপতির ডিও লেটারের মাধ্যমেই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে রাউজান থানার গহিরায় সীমিত আয়ের লোকদের কাছে বিক্রির জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় ১ হাজার ২২৪ বর্গফুট আয়তনের ২১৬টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। একই উপজেলার নোয়াপাড়ায় সম আয়তনের আরও ২১৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ১৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পরের দুটি প্রকল্প ২৮২ ও ২৬৬টি প্লটের। প্রথমটি ওই উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে এবং দ্বিতীয়টি চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে। এ দুটি প্রকল্প ২৩ কোটি ৮৩ লাখ এবং ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকায় শুরু হলেও পরে বরাদ্দ সংশোধন করে যথাক্রমে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ও ২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।
এসব প্রকল্প বিষয়ে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, যারা তাকে নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রতি তো তার কিছু দায়বদ্ধতা আছে। তা ছাড়া আগের মন্ত্রীদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কর্নেল যখন যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন সব প্রকল্প তার এলাকায় নিয়ে গেছেন। সাইফুর রহমান সব টাকা-পয়সা সিলেটে নিয়েছেন। কয়েক দিন আগেও একজন সব নিয়েছেন মাদারীপুরের জন্য। তাহলে তিনি চট্টগ্রামে নিলে সমস্যা কোথায়? তিনি বলেন, তার এলাকার জন্য ৪৩২ ফ্ল্যাটের প্রকল্প দেওয়া হলেও এটি বিক্রি হতে এক দিনের বেশি লাগবে না। এখানে আরও প্রয়োজন রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কমিটির অন্য প্রভাবশালী সদস্য নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তিনটি প্রকল্প নেওয়াতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প নিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের মধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় ওই ফ্ল্যাট আদৌ চলবে কি-না তা নিয়েও তাদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তবে এ প্রকল্পের সুপারিশ বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি ফজলে করিম চৌধুরী। একই এলাকায় দুটি সার্ভিসেস প্লটের প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ১৭৭টি প্লটের প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ এবং ১৬৬ প্লটের অন্য প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে বলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর এলাকা ঢাকার দোহারে ১ হাজার ২৯৮ বর্গফুটের ১৬৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা থেকে পরে সংশোধন করে এখন ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ১৫ তলাবিশিষ্ট তিনটি ভবনের জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এর বাইরে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস প্লটের জন্য ৭১৮টি প্লটের প্রস্তাব বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ লুৎফুর রহমান তার এলাকার জন্য করিয়ে নিয়েছেন তিনটি প্রকল্প। এর মধ্যে জেলার কলাতলীতে ৬৮০ বর্গফুটের ৫৭৫টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প সিভিল এভিয়েশনের মতামতের জন্য আটকে আছে। ১২৭ কোটি টাকায় আটতলা ২৩টি ভবনে এ ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। তা ছাড়া সাড়ে ৯৯ কোটি টাকায় জেলা শহরে ১ হাজার ৯৯৫টি সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট এবং চকরিয়ায় উপজেলায় নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য ৪৫টি বাণিজ্যিক ও ২২৬টি আবাসিক প্লট রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কিছুদিন আগে এ স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন কেএম খালিদ। কমিটিতে এসেই নিজ এলাকার জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের একটি প্রকল্প সম্প্রতি প্রণয়নে নেমেছেন তিনি। মুক্তাগাছা এলাকায় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের পাশে গণপূর্ত অধিদফতরের জায়গায় এ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে। গত অক্টোবরেও খালিদ ওই জায়গাটি উদ্ধারের জন্য কমিটির বৈঠকে কড়া বক্তব্য রাখেন। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে তারা প্রকল্পের লে-আউট প্রণয়ন শুরু করেছেন।
বর্তমানে কমিটিতে না থাকলেও শুরুতে যখন ছিলেন তখনই এনামুল হক তার নির্বাচনী এলাকা বাগমারায় ২০৪টি প্লটের একটি প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেন। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পে আড়াই ও ৬ কাঠার প্লট রয়েছে।
ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, প্রথমে যে ১০ জনকে নিয়ে কমিটি কাজ শুরু করেছিল তাদের প্রত্যেকের এলাকায় অন্তত একটি করে প্রকল্প দেওয়ার জন্য তারা কমিটি থেকে সুপারিশ করেছিলেন। তবে সব জায়গায় প্রকল্প হয়নি। পরে তিনি বলেন, কোনো না কোনো এলাকা থেকে শুরু করতে হবে। সে কারণে মন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতি এভাবে এগোনো যথেষ্ট কাজের বলে জানান তিনি।
এদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ সাফিয়া খাতুনের প্রস্তাবিত কোনো প্রকল্প গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এখনও গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ২৫ অক্টোবর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিনি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তার এলাকা কক্সবাজারের চকরিয়াতে একটি হাউজিং প্রকল্প নেওয়ার জন্য কমিটির মাধ্যমে অনুরোধ জানান।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য সাংসদের ডিও থাকলেও কেবল কমিটির সদস্যদের চাপ সামলাতেই অস্থির থাকছেন তারা। সে কারণে ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমেদসহ আরও কয়েকজনের ডিও উপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। অথচ ঢাকার ধামরাইয়ে প্লট বা ফ্ল্যাটের যে কোনো প্রকল্প করলেই তা সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারতেন তারা।
এসব প্রকল্প বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিএম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বলেন, সাংসদদের দিক থেকে সবসময়ই তাদের ওপর কিছু চাপ থাকে। আর কমিটির পক্ষ থেকে বাড়তি চাপ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে কমিটির সদস্যদের প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প নেওয়া হলেও তাদের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া এগুলো লোকসানি প্রকল্প হবে না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
No comments