সাদাকালো-মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মেলন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার by আহমদ রফিক
ডিসেম্বর ৩, ২০১১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে বিশাল আয়োজন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের জাতীয় কনভেনশন, সম্মেলন শব্দটার ব্যবহারই বোধ হয় ভালো হতো। সারা দেশ থেকে সাড়ে সাত শ প্রতিনিধি এবং সমমনা দেশি-বিদেশি অতিথি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। বেশ কয়েকজন বিদেশি অতিথি অসুস্থতা ও অনিবার্য কারণে সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি, কিন্তু সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁদের বার্তায়। ফোরামের সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে
খন্দকার বর্তমান সরকারের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আসা, বসা, চলাফেরায় কোনো প্রটোকল-বাধা ছিল না। অনুষ্ঠানে জেনারেল সফিউল্লাহ, জেনারেল হারুনুর রশিদ প্রমুখের কিছু বক্তব্যের পর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিকতা ও ট্রাইব্যুনালের মান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও যুক্তি উত্থাপন করেন। তিনি প্রসঙ্গক্রমে নুরেমবার্গ বিচার, টোকিও বিচার, ইসরায়েল কর্তৃক দীর্ঘকাল পর আইখম্যানের বিচারের কথা তুলে বাংলাদেশে বর্তমান বিচারের বাস্তবতা ও মান সম্বন্ধে সদর্থক ব্যাখ্যা দেন।
আইনগত যৌক্তিকতা প্রশ্নে মিজানুর রহমান যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে একজন অভিযুক্ত সাত দফা দাবি উত্থাপন করে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন, যা আন্তর্জাতিক বিচারিক নিয়মনীতিরও বিরোধী। আমরা জানি, এ বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিচার বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ কাজের কাজী জামায়াতে ইসলামী, সহযোগী বিএনপি। আমরা এ কথাও জানি, যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এর দায় মাথায় থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে নানা উপায়ে চেষ্টা চলছে বিচার ট্রাইব্যুনালকে অকার্যকর করে তোলার। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ময়দানে তাদের সহযোগীদের তৎপরতাও লক্ষ করার মতো। সে ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশই প্রধান বিষয়। ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
একাত্তরের গণহত্যাসহ ব্যক্তি বা পারিবারিক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা এতটা প্রকাশ্যে ঘটানো হয়েছে যে অনেক তথ্য-উপাত্ত বিলুপ্ত হওয়ার পরও যা কিছু প্রমাণ আছে, তা বিচারের জন্য যথেষ্ট। সে জন্যই সংশ্লিষ্ট দলগুলোর এত ভয়। একাত্তরের আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশের ছক মেলাতে গেলে বুঝতে কষ্ট হয় না, কেন ইউরোপ-আমেরিকার কর্তৃপক্ষ এখনো অপরাধীকুলের মাথায় ছাতা ধরতে উদগ্রীব। একটা বিষয় এখানে হিসাবে মেলে না, একাত্তরের শত্রু এখন মিত্র হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতেও মার্কিন নীতি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের, গণঘাতকদের বিচারের প্রশ্নে কেন বড় একটা আগ্রহী নয়। তাদের কি ধারণা, পাকিস্তান সমর্থক স্থানীয় রাজাকার-জামায়াত চক্রের বিচার যথারীতি সম্পন্ন হলে মানুষ ঘাতক পাকিস্তানের সেনাদের বিচারের দাবি জানাবে? সে ক্ষেত্রে তাদের মিত্র রাষ্ট্র পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হবে। সে জন্যই কি তাদের লক্ষ্য আইন-কানুনের প্যাঁচে ফেলে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করা, সম্ভব হলে শেষ পর্যন্ত তা অকার্যকর করে তোলা? কিন্তু বাংলাদশ তো এখনো মার্কিন প্রভাব-বলয়ের 'জি-হুজুর' রাষ্ট্র, তাহলে প্রসন্ন দৃষ্টির অভাব কেন?
সে যা-ই হোক, একটি বিষয় মিজানুর রহমান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এ কথা বলে যে বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিধিবিধানে আপিলের সুযোগসহ এমন কিছু কিছু সুবিধা রয়েছে, যা বিশ্বের এ জাতীয় ট্রাইব্যুনালে দেখা যায় না। তাঁর মতে, ট্রাইব্যুনালের নিয়ম-কানুন আরো কঠোর হওয়া উচিত, এর তৎপরতা আরো গতিশীল হওয়া উচিত। আমরাও মনে করি, যে গতিতে ট্রাইব্যুনালের কাজ চলছে, হয়তো আন্তর্জাতিক সমালোচনার ভয়ে, তাতে ঘাতকদের বিচারের এত বড় আয়োজন বিফলে যেতে পারে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বিচারকাজ শেষ নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের শাসনকালে অপরাধী সবাই বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে এবং বহুগুণ অপতৎপরতায় তারা দেশের সেক্যুলার পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে। এ বাস্তব সত্যটা বর্তমান সরকারের মাথায় রাখা খুবই জরুরি।
অবশ্য এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত এ ধরনের কথা অন্যদের মুখে অনেক শোনা গেছে। তিনি বাহাত্তরে অপরাধীদের বিচার না করতে পারার ভুল স্বীকার করে বলেন, 'এদের বিচার না হলে জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে না।' তাকে সবিনয়ে বলি, বিষয়টা জাতির কলঙ্কমুক্ত হওয়ারই নয়, এটা অপরাধীর বিচার, মানবিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন_যা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে সত্য। এ সত্য দায়বদ্ধতার। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে চাই। এ নিয়ে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। এ বিচার না হওয়ার অর্থ লাখো শহীদ ও লাঞ্ছিত-নির্যাতিত মানবতার চরম অপমান।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, তাদের তৎপরতার ফলে যে বিচারকাজ শুরু হয়েছে, তার সুষ্ঠু সমাপনের অতন্দ্র প্রহরী তাদেরই হতে হবে, যাতে কোনো প্রকার শিথিলতার সুযোগে সূচিত বিচারকাজ বিলম্বিত না হয়।
এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টা রাজনীতিকদের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা আত্মসর্বনাশের নামান্তর হবে। হবে আরো এ জন্য যে যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী প্রতিপক্ষ যথেষ্ট শক্তিমান, তাদের পেছনে রাজনৈতিক সমর্থন কম নেই। বিচারপ্রক্রিয়া ভণ্ডুল করতে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। ইতিমধ্যে তেমন আলামত লক্ষ করা গেছে। দেখা যাচ্ছে এখনো। এর বিরোধিতার চেষ্টা চলছে নানা আইনি মারপ্যাঁচ কষে। এবং আশ্চর্য, যে বিএনপি একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের হাতে গঠিত, যেখানে বহুসংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতি সেই বিএনপি সরাসরি এবং নানা কূটকৌশলে শরিক দলের যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে তৎপর। তাই তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার মন্তব্য_'এ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামো ও বিচার কার্যক্রমের ওপর বিএনপির আস্থা নেই।' ট্রাইব্যুনাল নাকি 'অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে।' অথচ এর বিপরীত কথাই শুনে এলাম আইনজীবী মিজানুর রহমানের দীর্ঘ বক্তৃতার যুক্তিতর্কে। কিন্তু এর বিপরীত অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বুঝতে কষ্ট হয় না যে জামায়াতকে রক্ষা করতে বিএনপির এ উদ্যোগ। তারা চাইছে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাতিল করতে। কিছুদিন আগে তাদের দলীয় প্রধানের বক্তৃতায় শোনা গেছে বিচারের বিরোধিতার কথা। ভাবতে অবাক লাগে, দলীয় রাজনীতির স্বার্থ দলের সদস্যদের এতটা অন্ধ করে ফেলে যে নীতি-আদর্শ সব উধাও হয়ে যায়। তাই বিএনপির জাতিসত্তাবিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে তাদের দলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে একটি বাক্যও উচ্চারিত হতে শোনা যায়নি। তাঁরা তাদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা ও নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ_সব কিছুই দলীয় স্বার্থের খাঁচায় জমা দিয়ে রেখেছেন বলে মনে হয়।
অন্যদিকে বিএনপির প্রভাবশালী এক নীতিনির্ধারক বলেছেন, সম্প্রতি সদ্য নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রাইব্যুনালের বিধিবিধান ও তৎপরতা নিয়ে যেসব সুপারিশ করেছেন, তা কার্যকর করতে হবে, তা না হলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম তাদের কাছে বৈধতা পাবে না। বলতে হয়, কী চমৎকার! বিদেশি সহায়ক শক্তির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মোকাবিলা করতে চায়।
আর সরকারকেও বলি, যাদের আটক করা হয়েছে এবং আটক করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের অপরাধ এত গুরুতর, এত প্রকাশ্য যে মানুষ এখনো সেসব মনে রেখেছে। এখানে তো দ্বিধা-সংশয়ের, দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই। তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কথা ভেবে কেন বৃথা খাল কেটে কুমির আনা, কেন নিজেদের জানা বিষয় নিয়ে, তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আত্মবিশ্বাস নষ্ট করা? যা সত্য বলে জানি, তা বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট ঘরোয়া সমস্যার সমাধানে কোনো প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না। অন্য বিষয়ে যা-ই হোক, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে ইসরায়েলি দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস আমাদের অনুসরণযোগ্য বলে মনে হয়। দ্বিধা-সংশয়ের অনিশ্চয়তার ফাঁদে আর পা দেওয়া নয়। যে ভুল বাহাত্তরে একবার করা হয়েছে, আর সে ভুলের পুনরাবৃত্তি নয়।
অন্তত এই একটি বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতি আমাদের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিচ্ছন্ন ও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আর দুর্বলতা নয়, ধর্মের নামেও নয়। দু-চারজন নিরপেক্ষ পাকিস্তানি সমাজকর্মী ও সাংবাদিকের ভূমিকা দিয়ে পাকিস্তানের বিচার করলে ভুল হবে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আমরা জানি, পাকিস্তানবাসী শিক্ষিত-অশিক্ষিত শ্রেণী বাংলাদেশ ও বাঙালি সম্বন্ধে আপত্তিকর বিরূপ মনোভাব পোষণ করে।
এ মনোভাব যেমন দেখা গেছে সাতচলি্লশ-উত্তর (১৯৪৭) পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে, শিক্ষিত শ্রেণীতে; তেমনি ১৯৭১-এর যুদ্ধোত্তর পর্বেও পাকিস্তানি মাত্রের মধ্যে। আগেই বলেছি, মাত্র দু-চারজন ব্যতিক্রম। সম্মেলনে উপস্থিত বিদেশি অতিথি সাংবাদিক আর্নল্ড জেটলিন তাঁর বক্তৃতায় পূর্বোক্ত বিরূপ মানসিকতার অন্য একটি দিক তুলে ধরেছেন। তিনি দেখে এসেছেন, পাকিস্তানি স্কুলছাত্রদের মধ্যে তাদের শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বাঙালিবিদ্বেষ গেঁথে দিচ্ছে_এক কথায় ব্রেইনওয়াশ এবং তা একাত্তরের যুদ্ধ ও পাকিস্তান ভাঙা উপলক্ষে।
আর্নল্ড বলেছেন, ছাত্রদের শেখানো হচ্ছে যে পাকিস্তানি জমানায় পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু অধ্যাপক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের শিক্ষা ও প্রভাবের কারণে বাঙালি মুসলমান জাতীয়তাবাদী চেতনায় দীক্ষিত ও পাকিস্তানবিরোধী হয়ে ওঠে। তাদের কানে বিচ্ছিন্নতার মন্ত্র দেওয়া হয়, যে জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে তাদের দমন করতে রাজপথে ও মাঠে নামতে হয়। আর্নল্ড তাঁর বক্তৃতায় এ রকম সাতটি সূত্র উল্লেখ করেছেন।
বাঙালি মুসলমান মাত্রেরই অজানা নয় যে ওই তথ্য মস্তবড় ঐতিহাসিক মিথ্যা। এ মিথ্যা অবিভক্ত পাকিস্তানেও শোনা গেছে। পূর্ববঙ্গকে দমিয়ে রাখতে, সেখানে শাসন-শোষণ নিশ্চিত করতে এ ধরনের অপপ্রচারের প্রয়োজন ছিল। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বর আক্রোশের প্রধান শিকার ছিল বাঙালি হিন্দু সমাজ। বিদেশি সাংবাদিকদের ভাষ্যে ও আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তেমন প্রমাণ মেলে।
বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ভাবমূর্তি এভাবে নষ্ট করেছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং এখনো করে চলেছে। তাই বাংলাদেশের বেশ কিছুসংখ্যক বাঙালি মুসলমানের পাকিস্তানপ্রীতি ও অনুরাগ দেখে, তাদের হীনম্মন্যতার পরিচয় পেয়ে আমরা বিস্ময় নয় শুধু, লজ্জাবোধ করি। আর তখন মধ্যযুগীয় কবি আবদুল হাকিমের কাব্যপঙক্তি স্মরণ করে বাঙালি নামীয় পাকিস্তানিদের তাদের স্বদেশ পাকিস্তানে হিজরতে পাঠিয়ে দিতে সরকারকে অনুরোধ জানাতে ইচ্ছা করে। অবশ্য একাত্তরে এমন দৃষ্টান্ত রেখেছেন রাজনীতিক মাহমুদ আলীর মতো একাধিক বাঙালি। এ বিজাতীয় মানসিকতা স্বদেশ-বৈরিতার নামান্তর, এমন মানসিকতা আমাদের রাজনৈতিক দুর্দশারও পরোক্ষ কারণ। এ পটভূমিতে শুধু বাঙালি রাজাকার-ঘাতকদেরই বিচার নয়, আমার মনে হয়, বাহাত্তরে সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানি সেনাদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা দরকার। কাজটা কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া নিঃসন্দেহে জরুরি। মনে রাখা দরকার যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এখনো একাত্তরের গণহত্যার অপরাধ স্বীকার করে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। সে কাজটা তাদের করতেই হবে এবং তার জন্য আমাদেরও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আর দরকার পাকিস্তানে যেতে ইচ্ছুক বিহারিদের তাদের স্বদেশভূমি পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো।
লেখক : রবীন্দ্র গবেষক, ভাষাসংগ্রামী
কবি ও প্রাবন্ধিক
আইনগত যৌক্তিকতা প্রশ্নে মিজানুর রহমান যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে একজন অভিযুক্ত সাত দফা দাবি উত্থাপন করে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন, যা আন্তর্জাতিক বিচারিক নিয়মনীতিরও বিরোধী। আমরা জানি, এ বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিচার বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ কাজের কাজী জামায়াতে ইসলামী, সহযোগী বিএনপি। আমরা এ কথাও জানি, যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এর দায় মাথায় থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে নানা উপায়ে চেষ্টা চলছে বিচার ট্রাইব্যুনালকে অকার্যকর করে তোলার। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ময়দানে তাদের সহযোগীদের তৎপরতাও লক্ষ করার মতো। সে ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশই প্রধান বিষয়। ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
একাত্তরের গণহত্যাসহ ব্যক্তি বা পারিবারিক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা এতটা প্রকাশ্যে ঘটানো হয়েছে যে অনেক তথ্য-উপাত্ত বিলুপ্ত হওয়ার পরও যা কিছু প্রমাণ আছে, তা বিচারের জন্য যথেষ্ট। সে জন্যই সংশ্লিষ্ট দলগুলোর এত ভয়। একাত্তরের আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশের ছক মেলাতে গেলে বুঝতে কষ্ট হয় না, কেন ইউরোপ-আমেরিকার কর্তৃপক্ষ এখনো অপরাধীকুলের মাথায় ছাতা ধরতে উদগ্রীব। একটা বিষয় এখানে হিসাবে মেলে না, একাত্তরের শত্রু এখন মিত্র হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতেও মার্কিন নীতি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের, গণঘাতকদের বিচারের প্রশ্নে কেন বড় একটা আগ্রহী নয়। তাদের কি ধারণা, পাকিস্তান সমর্থক স্থানীয় রাজাকার-জামায়াত চক্রের বিচার যথারীতি সম্পন্ন হলে মানুষ ঘাতক পাকিস্তানের সেনাদের বিচারের দাবি জানাবে? সে ক্ষেত্রে তাদের মিত্র রাষ্ট্র পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হবে। সে জন্যই কি তাদের লক্ষ্য আইন-কানুনের প্যাঁচে ফেলে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করা, সম্ভব হলে শেষ পর্যন্ত তা অকার্যকর করে তোলা? কিন্তু বাংলাদশ তো এখনো মার্কিন প্রভাব-বলয়ের 'জি-হুজুর' রাষ্ট্র, তাহলে প্রসন্ন দৃষ্টির অভাব কেন?
সে যা-ই হোক, একটি বিষয় মিজানুর রহমান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এ কথা বলে যে বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিধিবিধানে আপিলের সুযোগসহ এমন কিছু কিছু সুবিধা রয়েছে, যা বিশ্বের এ জাতীয় ট্রাইব্যুনালে দেখা যায় না। তাঁর মতে, ট্রাইব্যুনালের নিয়ম-কানুন আরো কঠোর হওয়া উচিত, এর তৎপরতা আরো গতিশীল হওয়া উচিত। আমরাও মনে করি, যে গতিতে ট্রাইব্যুনালের কাজ চলছে, হয়তো আন্তর্জাতিক সমালোচনার ভয়ে, তাতে ঘাতকদের বিচারের এত বড় আয়োজন বিফলে যেতে পারে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বিচারকাজ শেষ নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের শাসনকালে অপরাধী সবাই বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে এবং বহুগুণ অপতৎপরতায় তারা দেশের সেক্যুলার পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে। এ বাস্তব সত্যটা বর্তমান সরকারের মাথায় রাখা খুবই জরুরি।
অবশ্য এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত এ ধরনের কথা অন্যদের মুখে অনেক শোনা গেছে। তিনি বাহাত্তরে অপরাধীদের বিচার না করতে পারার ভুল স্বীকার করে বলেন, 'এদের বিচার না হলে জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে না।' তাকে সবিনয়ে বলি, বিষয়টা জাতির কলঙ্কমুক্ত হওয়ারই নয়, এটা অপরাধীর বিচার, মানবিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন_যা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে সত্য। এ সত্য দায়বদ্ধতার। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে চাই। এ নিয়ে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। এ বিচার না হওয়ার অর্থ লাখো শহীদ ও লাঞ্ছিত-নির্যাতিত মানবতার চরম অপমান।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, তাদের তৎপরতার ফলে যে বিচারকাজ শুরু হয়েছে, তার সুষ্ঠু সমাপনের অতন্দ্র প্রহরী তাদেরই হতে হবে, যাতে কোনো প্রকার শিথিলতার সুযোগে সূচিত বিচারকাজ বিলম্বিত না হয়।
এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টা রাজনীতিকদের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা আত্মসর্বনাশের নামান্তর হবে। হবে আরো এ জন্য যে যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী প্রতিপক্ষ যথেষ্ট শক্তিমান, তাদের পেছনে রাজনৈতিক সমর্থন কম নেই। বিচারপ্রক্রিয়া ভণ্ডুল করতে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। ইতিমধ্যে তেমন আলামত লক্ষ করা গেছে। দেখা যাচ্ছে এখনো। এর বিরোধিতার চেষ্টা চলছে নানা আইনি মারপ্যাঁচ কষে। এবং আশ্চর্য, যে বিএনপি একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের হাতে গঠিত, যেখানে বহুসংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতি সেই বিএনপি সরাসরি এবং নানা কূটকৌশলে শরিক দলের যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে তৎপর। তাই তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার মন্তব্য_'এ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামো ও বিচার কার্যক্রমের ওপর বিএনপির আস্থা নেই।' ট্রাইব্যুনাল নাকি 'অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে।' অথচ এর বিপরীত কথাই শুনে এলাম আইনজীবী মিজানুর রহমানের দীর্ঘ বক্তৃতার যুক্তিতর্কে। কিন্তু এর বিপরীত অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বুঝতে কষ্ট হয় না যে জামায়াতকে রক্ষা করতে বিএনপির এ উদ্যোগ। তারা চাইছে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাতিল করতে। কিছুদিন আগে তাদের দলীয় প্রধানের বক্তৃতায় শোনা গেছে বিচারের বিরোধিতার কথা। ভাবতে অবাক লাগে, দলীয় রাজনীতির স্বার্থ দলের সদস্যদের এতটা অন্ধ করে ফেলে যে নীতি-আদর্শ সব উধাও হয়ে যায়। তাই বিএনপির জাতিসত্তাবিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে তাদের দলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে একটি বাক্যও উচ্চারিত হতে শোনা যায়নি। তাঁরা তাদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা ও নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ_সব কিছুই দলীয় স্বার্থের খাঁচায় জমা দিয়ে রেখেছেন বলে মনে হয়।
অন্যদিকে বিএনপির প্রভাবশালী এক নীতিনির্ধারক বলেছেন, সম্প্রতি সদ্য নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রাইব্যুনালের বিধিবিধান ও তৎপরতা নিয়ে যেসব সুপারিশ করেছেন, তা কার্যকর করতে হবে, তা না হলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম তাদের কাছে বৈধতা পাবে না। বলতে হয়, কী চমৎকার! বিদেশি সহায়ক শক্তির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মোকাবিলা করতে চায়।
আর সরকারকেও বলি, যাদের আটক করা হয়েছে এবং আটক করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের অপরাধ এত গুরুতর, এত প্রকাশ্য যে মানুষ এখনো সেসব মনে রেখেছে। এখানে তো দ্বিধা-সংশয়ের, দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই। তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কথা ভেবে কেন বৃথা খাল কেটে কুমির আনা, কেন নিজেদের জানা বিষয় নিয়ে, তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আত্মবিশ্বাস নষ্ট করা? যা সত্য বলে জানি, তা বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট ঘরোয়া সমস্যার সমাধানে কোনো প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না। অন্য বিষয়ে যা-ই হোক, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে ইসরায়েলি দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস আমাদের অনুসরণযোগ্য বলে মনে হয়। দ্বিধা-সংশয়ের অনিশ্চয়তার ফাঁদে আর পা দেওয়া নয়। যে ভুল বাহাত্তরে একবার করা হয়েছে, আর সে ভুলের পুনরাবৃত্তি নয়।
অন্তত এই একটি বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতি আমাদের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিচ্ছন্ন ও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আর দুর্বলতা নয়, ধর্মের নামেও নয়। দু-চারজন নিরপেক্ষ পাকিস্তানি সমাজকর্মী ও সাংবাদিকের ভূমিকা দিয়ে পাকিস্তানের বিচার করলে ভুল হবে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আমরা জানি, পাকিস্তানবাসী শিক্ষিত-অশিক্ষিত শ্রেণী বাংলাদেশ ও বাঙালি সম্বন্ধে আপত্তিকর বিরূপ মনোভাব পোষণ করে।
এ মনোভাব যেমন দেখা গেছে সাতচলি্লশ-উত্তর (১৯৪৭) পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে, শিক্ষিত শ্রেণীতে; তেমনি ১৯৭১-এর যুদ্ধোত্তর পর্বেও পাকিস্তানি মাত্রের মধ্যে। আগেই বলেছি, মাত্র দু-চারজন ব্যতিক্রম। সম্মেলনে উপস্থিত বিদেশি অতিথি সাংবাদিক আর্নল্ড জেটলিন তাঁর বক্তৃতায় পূর্বোক্ত বিরূপ মানসিকতার অন্য একটি দিক তুলে ধরেছেন। তিনি দেখে এসেছেন, পাকিস্তানি স্কুলছাত্রদের মধ্যে তাদের শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বাঙালিবিদ্বেষ গেঁথে দিচ্ছে_এক কথায় ব্রেইনওয়াশ এবং তা একাত্তরের যুদ্ধ ও পাকিস্তান ভাঙা উপলক্ষে।
আর্নল্ড বলেছেন, ছাত্রদের শেখানো হচ্ছে যে পাকিস্তানি জমানায় পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু অধ্যাপক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের শিক্ষা ও প্রভাবের কারণে বাঙালি মুসলমান জাতীয়তাবাদী চেতনায় দীক্ষিত ও পাকিস্তানবিরোধী হয়ে ওঠে। তাদের কানে বিচ্ছিন্নতার মন্ত্র দেওয়া হয়, যে জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে তাদের দমন করতে রাজপথে ও মাঠে নামতে হয়। আর্নল্ড তাঁর বক্তৃতায় এ রকম সাতটি সূত্র উল্লেখ করেছেন।
বাঙালি মুসলমান মাত্রেরই অজানা নয় যে ওই তথ্য মস্তবড় ঐতিহাসিক মিথ্যা। এ মিথ্যা অবিভক্ত পাকিস্তানেও শোনা গেছে। পূর্ববঙ্গকে দমিয়ে রাখতে, সেখানে শাসন-শোষণ নিশ্চিত করতে এ ধরনের অপপ্রচারের প্রয়োজন ছিল। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বর আক্রোশের প্রধান শিকার ছিল বাঙালি হিন্দু সমাজ। বিদেশি সাংবাদিকদের ভাষ্যে ও আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তেমন প্রমাণ মেলে।
বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ভাবমূর্তি এভাবে নষ্ট করেছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং এখনো করে চলেছে। তাই বাংলাদেশের বেশ কিছুসংখ্যক বাঙালি মুসলমানের পাকিস্তানপ্রীতি ও অনুরাগ দেখে, তাদের হীনম্মন্যতার পরিচয় পেয়ে আমরা বিস্ময় নয় শুধু, লজ্জাবোধ করি। আর তখন মধ্যযুগীয় কবি আবদুল হাকিমের কাব্যপঙক্তি স্মরণ করে বাঙালি নামীয় পাকিস্তানিদের তাদের স্বদেশ পাকিস্তানে হিজরতে পাঠিয়ে দিতে সরকারকে অনুরোধ জানাতে ইচ্ছা করে। অবশ্য একাত্তরে এমন দৃষ্টান্ত রেখেছেন রাজনীতিক মাহমুদ আলীর মতো একাধিক বাঙালি। এ বিজাতীয় মানসিকতা স্বদেশ-বৈরিতার নামান্তর, এমন মানসিকতা আমাদের রাজনৈতিক দুর্দশারও পরোক্ষ কারণ। এ পটভূমিতে শুধু বাঙালি রাজাকার-ঘাতকদেরই বিচার নয়, আমার মনে হয়, বাহাত্তরে সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানি সেনাদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা দরকার। কাজটা কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া নিঃসন্দেহে জরুরি। মনে রাখা দরকার যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এখনো একাত্তরের গণহত্যার অপরাধ স্বীকার করে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। সে কাজটা তাদের করতেই হবে এবং তার জন্য আমাদেরও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আর দরকার পাকিস্তানে যেতে ইচ্ছুক বিহারিদের তাদের স্বদেশভূমি পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো।
লেখক : রবীন্দ্র গবেষক, ভাষাসংগ্রামী
কবি ও প্রাবন্ধিক
No comments