স্থানীয় সরকার-প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে বিস্তর গরমিল
বিকেন্দ্রীকরণ ও বর্তমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শীর্ষক আলোচনা সভায় দলমত নির্বিশেষে সাধারণ অভিমত এসেছে_ বাংলাদেশে সংবিধান, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও জনমত উপেক্ষা করে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা সংকুচিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নেটওয়ার্ক ব্যাপক বিস্তৃত। ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। আরও রয়েছে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। জেলা পরিষদ গঠনেরও তোড়জোড় চলছে।
আরও অনেক জেলা শহরে সিটি করপোরেশন গঠিত হবে_ এমন অঙ্গীকারও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যক্ত হয়েছে এবং ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুরে এ ধরনের সংস্থা গঠন এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার নজির। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে এবং তা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকৃত। কিন্তু স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা সীমিত রাখা হলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচিত হয়েছে প্রায় তিন বছর। দুর্ভাগ্যজনক যে, এখনও নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও দু'জন ভাইস চেয়ারম্যান এমনকি ঠিকভাবে কাজও শুরু করতে পারেননি। এ সংস্থায় সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য যে ভূমিকা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আদৌ সন্তুষ্ট নন। সিটি করপোরেশনগুলো নগর সরকার হিসেবে কাজ করবে, এমন প্রত্যাশা তো সুদূরপরাহতই রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা আরও ক্ষমতা দাবি করছেন, কিন্তু সে বিষয়টিও উপেক্ষিত। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালা অনুসরণে অঙ্গীকারবদ্ধ মহাজোট সরকার স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগী হবে, এটাই কাম্য। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও মনে রাখতে হবে যে, অধিকারের সঙ্গে দায়িত্ব ও সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব কাজ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়, তা অবশ্যই যথাযথভাবে পালন করার যোগ্যতা অর্জন করা চাই। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। স্থানীয় সরকারে নির্বাচিতরা অনিয়ম-দুর্নীতিতে যুক্ত, এমন অভিযোগও কিন্তু নতুন নয়। অধিকারের আওতা প্রসারের দাবির পাশাপাশি নিজেদের অভিযোগমুক্ত করার বিষয়েও মনোযোগী থাকা চাই।
No comments