সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অভিমত-তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে দুই দলকে আলোচনায় বসতে হবে

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুই দলকে আলোচনায় বসতে হবে। তাদের ঠিক করতে হবে, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি থাকবে কি না; থাকলে নতুন আকারে, না আগের মতোই থাকবে, তাও তাদের নির্ধারণ করতে হবে।'গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য নাগরিক আন্দোলন' (সিটিজেনস মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস_সিডিএইচআর) নামের নতুন


সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রফিক-উল হক এ কথা বলেন। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ব্যারিস্টার রফিক এ সংগঠনের আহ্বায়ক।
সংবাদ সম্মেলনে রফিক-উল হক বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে ১০ মে একটি অসম্পূর্ণ রায় হয়েছে। এ রায় সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সংবিধান সংশোধন হয়ে গেল। বিচার বিভাগের উচিত ছিল রায়টি সম্পূর্ণ করা। কিন্তু তারা নিজেদের রীতি ভঙ্গ করে রায়টি ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে, না নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা দুই দল ঠিক করবে। এ নিয়ে দুই দল মারামারি করবে না, হানাহানি করবে না, বরং নাগরিক উন্নয়নের জন্য তারা একসঙ্গে কাজ করবে_এটি আমরা আশা করি।'
নাগরিক আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, 'এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তবে এটি একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সমস্ত কর্মক্ষেত্রের প্রতিনিধি ও সুধী সমাজ একত্রিত হয়েছি। কারো সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ
নেই। তবে সব ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দল সফল নয়। গণতন্ত্র নেই, এ কথা বলব না। কিন্তু আমরা যতটা আশা করি, এখনো গণতন্ত্র ততটা বিকশিত হয়নি। আমরা গণতন্ত্রের উন্নয়নে ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করতে চাই।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে রফিক-উল-হক বলেন, 'বিরোধী দল তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে মনে করি। তাদের সংসদ যাওয়া উচিত।'
অনুষ্ঠানে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সদ্য ঘোষিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংগঠনের অন্য ২১ জন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁরা হচ্ছেন : বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক, গণস্বাস্থ্য প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দ্য নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক পিয়াস করিম, অধ্যাপক শরীফুল্লা ভূঁইয়া, স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, পাহাড়ি নেতা গৌতম দেওয়ান, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আকরাম, শিক্ষক মাহবুব কামাল, শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন, শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু, সাংস্কৃতিককর্মী আশফাহ হক লোপা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রধান ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী এমপি ও সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান আলমগীর। পরে তাঁরা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে খানিকটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বি. চৌধুরী বলেন, 'এখন যে গণতন্ত্র চলছে, তা অত্যন্ত পচা মানের ও নিচু শ্রেণীর গণতন্ত্র। সুস্থ গণতন্ত্রের বিকাশে আপনারা কাজ করুন। ছুটুক বাতাস, উঠুক তুফান, ফিরব নাকো ঘরে_বলে আপনারা যাত্রা করুন!'
মাহমুদুর রহমান মান্না সংগঠনের ঘোষণাপত্র পাঠ করে বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শিল্প-বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান খাতে ব্যর্থতা, আইনবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন, গুম-খুন, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি, শাসকদলের জন্য একতরফা দায়মুক্তি, ভিন্নমতকে রুদ্ধকরণ, জ্বালানি সংকট, নাগরিকদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে সীমাহীন উদাসীনতা, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি মানুষের জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আর এসব উপদ্রব প্রতিরোধ করার জন্য রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে বিরোধী দলও ব্যর্থ হয়ে চলেছে।
সাংবাদিক নুরুল কবির বলেন, 'আইনের চোখে সকলে সমান_এ কথা আপনারা জানেন। আমরা চাই যে মূল্যবোধকে সামনে রেখে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি, সেই মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তথা নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম, ধনী-গরিব সবার জন্য সমান আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে।'

No comments

Powered by Blogger.