বাণিজ্য মেলায় সিন্ডিকেট-অধিক দেশের স্বচ্ছ অংশগ্রহণ প্রয়োজন

প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ঢাকায় শেরেবাংলা নগর এলাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা নামের একটি মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। কথা ছিল, বাংলাদেশের উৎপাদক এবং আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিদেশি ব্যবসায়ীরা এ মেলায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবেন। এ ধরনের বাণিজ্য মেলার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে বিভিন্ন দেশের পণ্য পরিচিত ও বৈধ আমদানি-রপ্তানি বিস্তৃত করা।


কিন্তু এ মেলায় প্রবেশ করলে কারো কাছে এটাকে আন্তর্জাতিক মেলা বলে মনে হয় না। মনে হয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ মেলা। ইরান, শ্রীলঙ্কাসহ আরো দু-একটি দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুবই ক্ষীণভাবে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, যা মোটেই চোখে পড়ে না। যথারীতি আগামী জানুয়ারিতেও এ মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের মেলায়ও প্রাথমিক তালিকায় ৪৭টি বিদেশি স্টলের মধ্যে ২০টি স্টল পাকিস্তানিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। গত বছর ৩৫টি স্টলের মধ্যে পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০টি। কিন্তু সমস্যা স্টলের সংখ্যা নিয়ে নয়, প্রধান অভিযোগটি উঠেছে এসব পাকিস্তানি ব্যবসায়ী একশ্রেণীর অসাধু বাংলাদেশির সঙ্গে মিলে পাকিস্তান থেকে নামে-বেনামে পণ্য আমদানি করছেন এবং তা এখানকার বাজারে সারা বছর বিক্রি করা হচ্ছে। এ জন্যই পাকিস্তানের এত স্টলের ভিড়। এ ক্ষেত্রে প্রধান লাভের বিষয়টি হলো, বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ব্যবসায়ীরা ৪০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেয়ে থাকেন। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হলো, বহু পাকিস্তানি ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে এসব ব্যবসা করছেন। অথচ দেশের আইন অনুযায়ী ট্যুরিস্ট ভিসা তো দূরের কথা, বিজনেস ভিসায় আসা কোনো বিদেশি নাগরিক সরাসরি স্থানীয় বাজারে বেচাকেনা করতে পারেন না। অবশ্য এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, বাণিজ্য মেলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ৩০ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
অভিযোগে উলি্লখিত এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ মেলা কাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক মেলার ভাবমূর্তি সৃষ্টি করতে পারছে না। এটি একটি সিন্ডিকেটের মেলায় পরিণত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মেলার নামে যে পণ্য এনে ঢাকার স্থানীয় বাজারে সারা বছর বিক্রি করা হচ্ছে তার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। অন্যদিকে অভিযোগ আছে, পাকিস্তানি এসব ব্যবসায়ী নানা ধরনের ওষুধসহ ক্ষতিকর দ্রব্য এনে থাকে, যা সমাজেও একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা মনে করি, সরকারের এ মেলা থেকে কঠোর হাতে দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট হটিয়ে একটি সত্যিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় চীন থেকে শুরু করে ব্রাজিল পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ দেশের ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করার একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। সেটা করতে পারলে বাণিজ্য বিস্তার হবে, বাণিজ্যিক পণ্যের নতুন বাজার সম্পর্কে দেশের ব্যবসায়ীদের ধারণা বাড়বে, বাংলাদেশে নতুন পণ্য আসবে এবং সর্বোপরি সরকার এ বাণিজ্য মেলা থেকে একটি ভালো আয় করতে সক্ষম হবে। বাণিজ্য মেলার নামে অসৎ ব্যবসাকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনোক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। হতে পারে, মেলায় একটি দেশের অনেক স্টল। সেটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই স্টলগুলো যাঁরা চালিয়ে আসছেন, তাঁরা কিভাবে পণ্য আমদানি করছেন, কতটা বাণিজ্য মেলায় বিক্রি করছেন, কী কী আইটেম এনেছেন এবং কিভাবে তা বিক্রি করছেন_এসব সম্পর্কে অবশ্যই সরকারের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকতে হবে। আমরা আশা করব, আগামী মেলায়ই ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা মহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের এ মেলায় অংশগ্রহণে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.