পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন-আমাদের ভেবে দেখা দরকার

সারা পৃথিবীতে যখন পারমাণবিক চুলি্ল স্থাপনের বিরুদ্ধে চলছে প্রতিবাদ। যখন ঘটে গেল জাপানের ফুকুশিমা দেইচি পারমাণবিক চুলি্লর বিপর্যয়ের মতো ঘটনা। সারা বিশ্বে যখন পারমাণবিক চুলি্লর বিরুদ্ধে জনমতের হার বাড়ছে; ঠিক তখনই বাংলাদেশের পাবনার রূপপুরে ৬০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াটের দুটি পারমাণবিক চুলি্ল স্থাপনের জন্য রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করছে বাংলাদেশ। খোদ রাশিয়াতেই যেখানে ২০০৫ সালে ৬১ শতাংশ এবং


বর্তমান ৮৩ শতাংশ মানুষ পারমাণবিক চুলি্লর বিরোধিতা করছে।পারমাণবিক চুলি্ল একদিকে যেমন শক্তির অবিরাম প্রবাহ নিশ্চিত করে, তেমনি সামান্য ভুলে ডেকে আনতে পারে মাত্রা ছাড়া মহাবিপদ! এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ১৯৫৭ সালে রাশিয়ায় মায়াক দুর্ঘটনা, যুক্তরাষ্ট্রের ইদাহো ফলস দুর্ঘটনা-১৯৬১, ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তির ইতিহাসে অন্যতম বড় দুর্ঘটনা, ১৯৮০ সালে ফ্রান্সের সেন্ট লরেন্ট দুর্ঘটনা, ১৯৮৬ সালের ইউক্রেনের চেরনোবিল দুর্ঘটনা। এ বছরের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের আগে জাপানে ভয়াবহতার দিক থেকে তালিকায় সবার ওপরে ছিল ২০০৪ সালের মিহামা দুর্ঘটনা এবং বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণব্যবস্থা থাকার পরও এ ধরনের দুর্ঘটনার কোনো পূর্বাভাস আঁচ করা যায়নি। যেসব স্থানে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, সেসব স্থানে ক্যান্সারজনিত রোগের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে, জন্ম নেওয়া সব শিশুই শারীরিক প্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়, মারাত্মকভাবে চিরদিনের জন্য বিনষ্ট হয় জমির উর্বরতা। পারমাণবিক চুলি্লতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার পর সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জীবজগৎ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। এসব বর্জ্য কমপক্ষে ১০ হাজার বছর বিশেষভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, যেন তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে না পারে। নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও কারিগরি ত্রুটি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কম-বেশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। কোনো দেশ বা জাতিকে বিপন্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা সে দেশের পারমাণবিক চুলি্লতে হামলা চালাতে পারে।
ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসির সহযোগিতায় 'গ্লোবস্ক্যান' পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, বর্তমানে পারমাণবিক চুলি্লর প্রতি বিশ্ববাসীর আগ্রহ প্রায় শূন্যের কোঠায়। সচেতন জনগণ মনে করছে, পারমাণবিক চুলি্লর ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সূর্য, বায়ু ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে জ্বালানি চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। খোদ ব্রিটেন ও আমেরিকার জনগণ দাবি তুলেছে, 'আগামী ২০ বছরের মধ্যে দেশের সব কয়টি কয়লা ও পারমাণবিক চুলি্লভিত্তিক প্রকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে পাল্টে ফেলা উচিত।'
সর্বোপরি বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতির দেশে, যেখানে জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার হয়ে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্যসঙ্গী, সেখানে পারমাণবিক চুলি্ল স্থাপন করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.