টোয়েন্টি টোয়েন্টি দিয়ে শুরু হচ্ছে মিশন পাকিস্তান-পাকিস্তানকে কেন হারাতে পারে না বাংলাদেশ! by মাসুদ পারভেজ

দুই দলের পার্থক্যটা বহু চাকাবিশিষ্ট লরির সঙ্গে দুই চাকার সাইকেলের মতোই ব্যাপক! একটু খুলেই বলা যাক। দলে হয়তো এখন পারফরমার অনেক আছেন, কিন্তু ম্যাচ জিততে হলে ম্যাচ উইনারও থাকা চাই। এই সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়েছেন মুশফিকুর রহিমও। তবে মোটা দাগে দেখলে বাংলাদেশ দলে ম্যাচ উইনারের স্বীকৃতিটা তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের জন্যই বরাদ্দ থাকে। আর পাকিস্তান


দলে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক একের পর এক নাম বলে যেতে থাকলেন। ইউনিস খান, মিসবাহ-উল হক, মোহাম্মদ হাফিজ, শহীদ আফ্রিদি, সাঈদ আজমল, উমর গুল।
ছোট থেকেই এ দলটার খোঁজখবর রাখার অভিজ্ঞতায় বলছেন, 'পাকিস্তান দলে সব সময়ই পাঁচ থেকে ছয়জন ম্যাচ উইনার থাকে।' এখনো আছেন। বাংলাদেশ দলেও আছেন, তবে মাত্র দুজন। তারও আগে এ ব্যবধানটা আরো বেশি ছিল। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর অভিজাত পরিবারের আর সব সদস্যকে হারানো হয়ে গেলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে কখনো জিততে না পারার সহজ-সাধারণ এ ব্যাখ্যাই দিতে পারছেন মুশফিক। যে জন্য ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে মানে সেই আদিকালে পাকিস্তানকে হারানোর 'সবেধন নীলমণি সুখ' এখনো বর্তমান বাংলাদেশের!
অথচ ওই বিশ্বকাপ জিতেই ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ান রাজত্বের সূর্যোদয়। এর পর সময়ে সে মসনদ আরো পাকাপোক্ত করা অস্ট্রেলিয়াকেও ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের কার্ডিফে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের পর দুই বছর তিন মাসের মধ্যেই ২০০৭ বিশ্বকাপে হারিয়েছে আরেক পরাশক্তি ভারতকে। বাংলাদেশের কাছে দুবার হারের তেতো স্বাদ নিয়েছে ১৯৯৬-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাও। শৌর্য-বীর্য হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথা না হয় বাদই দিলেন। এখন টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের নাম্বার ওয়ান দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও মাত্র সাত মাসের মধ্যে দুবার জয়ের হাসি হেসেছে টাইগাররা। প্রথমবার গত বছর ইংল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে গিয়ে। পরেরবার এ বছরই দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে। ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বধ করা বাংলাদেশ কিনা পাকিস্তানকে আর হারাতেই পারছে না প্রায় ১৩ বছর হয়ে গেল।
পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা ২৬ ওয়ানডেতে জয় তাই মোটে একটাতেই। অবশ্য শুধুই যে ম্যাচ উইনারের তারতম্যের কারণে এত দিন সেটা অজেয় আকাঙ্ক্ষা হয়ে আছে, তাও বলছেন না মুশফিক। কারণ অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ইংল্যান্ড দলেও তো ম্যাচ উইনারের অভাব ছিল না। তাহলে? এখানে মুশফিকের অন্য ব্যাখ্যাটাও জেনে নিন, 'কারণ বলতে ওদের সঙ্গে যতগুলো সিরিজ বাংলাদেশ খেলেছে, কখনোই সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারেনি। হয়তো এক-দুজনের ব্যক্তিগত ঝলক ছিল। কিন্তু সম্মিলিত পারফরম্যান্স কখনোই হয়নি। সে জন্যই এত দিনের মধ্যে আর ওদের হারানো হয়ে ওঠেনি।' সেই সঙ্গে ম্যাচ উইনার তত্ত্বটা তো থাকছেই, 'একটা দলে যখন এতজন ম্যাচ উইনার থাকে, তখন আসলে তাদের হারানো কঠিন হয়ে যায়। দেখা গেল আপনি শতভাগই দিলেন কিন্তু ওদের কেউ এঙ্ট্রা অর্ডিনারি কিছু করে ম্যাচ বের করে নিচ্ছে।'
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের চিরকালীন দুঃখ হয়ে থাকা ২০০৩ সালের মুলতান টেস্টের অভিজ্ঞতাই এখানে সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে আসতে পারে। জয়ের কোল ঘেঁষে আসা বাংলাদেশকে হারের হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয়েছিল ইনজামাম-উল হকের অতিমানবীয় এক ইনিংসে। মাত্র ১ উইকেটের হারে কান্নায় ভেসেছিল জয়ের স্বপ্ন। এবারও তাই জয়ের স্বপ্ন দেখার আগে পাকিস্তানের কারো ম্যাচ বের করে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা আগাম ভেবে রাখতে হচ্ছে। মুশফিক ভেবে রাখছেনও, 'পাকিস্তান এমন একটা দল, এত কিছু হওয়ার পরেও তারা বরাবর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে যায়।' তাই প্রতিপক্ষকে অবধারিত ফেভারিট বলে ধরে নিয়েও বাংলাদেশ অধিনায়কের বিবেচনা এর কোনো বিকল্প দেখছে না, 'মাঠে আমাদের দিতে হবে শতভাগেরও বেশি।'
তা ছাড়া পাকিস্তানও আছে দুর্দান্ত ফর্মে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রীলঙ্কাকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েই ঢাকায় এসেছে মিসবাহ-উল হকের দল। তবে শতভাগের বেশি দিয়ে খেললে তাঁদেরও টেনে মাটিতে নামানোর বিশ্বাসটা আছে মুশফিকের, 'পাকিস্তান এখন ওয়ানডে এবং টেস্টে খুব ভালো ফর্মে আছে। তার মানে এই না যে ওরা আসবে এবং আমাদের হারিয়ে দিয়ে চলে যাবে। প্রত্যেকটা খেলাই প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। আর ওরা ভালো দল বলে যে ওদের খারাপ সময় আসবে না এমন তো কোনো কথা নেই। হয়তো বা এই সিরিজেই ওদের খারাপ সময় আসতে পারে। ওরাও তো মানুষ।'
১৩ বছরের প্রতীক্ষার অবসান যদি তাতে ঘটে!

No comments

Powered by Blogger.