পবিত্র কোরআনের আলো-বনিইসরাইলরা তাদের পুণ্যভূমিতে ফিরে এসেছিল

৩৬. ফানতাক্বামনা মিনহুম ফাআগ্রাক্বনা-হুম ফিল ইয়াম্মি বিআন্নাহুম কায্যাবূবিআয়া-তিনা ওয়াকা-নূ আ'নহা গা-ফিলীন।১৩৭. ওয়া আওরাছনাল ক্বাওমাল্লাযীনা কা-নূ ইউছ্তাদ্বআ'ফূনা মাশা-রিক্বাল আরদ্বি ওয়ামাগা-রিবাহাল্লাতী বা-রাকনা ফীহা; ওয়াতাম্মাত কালিমাতু রাবি্বকাল হুছনা আ'লা বানী ইছরা-ঈলা বিমা সাবারূ; ওয়া দাম্মারনা মা কা-না ইয়াসনাউ' ফিরআ'ওনু ওয়া ক্বাওমুহূ ওয়া মা কা-নূ ইয়া'রিশূন।১৩৮. ওয়া জা-ওয়ায্না বিবানী


ইছরা-ঈলাল বাহ্রা ফাআতাও আ'লা ক্বাওমিন ইয়া'কুফূনা আ'লা আসনা-মিন লাহুম; ক্বা-লূ ইয়া-মূছাজ্ আ'ল্ লানা ইলা-হান কামা লাহুম আ-লিহাহ্; ক্বা-লা ইন্নাকুম ক্বাওমুন তাজহালূন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৩৬-১৩৮]
অনুবাদ
১৩৬. সুতরাং আমি তাদের থেকে বদলা নিলাম এবং তাদের সাগরে ডুবিয়ে মারলাম। কেননা তারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিল এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন থেকে উদাসীন হয়ে পড়েছিল।
১৩৭. এবার আমি তাদেরই ক্ষমতার আসনে বসিয়ে দিলাম, যাদের (দাস বানিয়ে) দুর্বল করে রাখা হয়েছিল। তাদের আমি এ রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকারী বানিয়ে দিয়েছি, আর সেখানে আমি প্রভূত কল্যাণ ছড়িয়ে দিয়েছি। এভাবেই বনিইসরাইলের প্রতি তোমার প্রভুর কল্যাণবাণী সত্যে পরিণত হলো, কেননা তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। (আর সেই সঙ্গে) ফেরাউন ও তার জাতির শিল্পকর্ম এবং উঁচু প্রাসাদ, যা তারা নির্মাণ করেছিল, আমি সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
১৩৮. আমি বনিইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম। (ফেরাউনের বাহিনীকে ডুবিয়ে মারার পর) অতঃপর সমুদ্রের ওপারে তারা এমন একটি জাতির কাছে এসে পেঁৗছল, যারা মূর্তিপূজায় রত ছিল। বনিইসরাইলের লোকরা বলল, হে মুসা! এদের যেমন দেবতা আছে, তেমনি আমাদের জন্যও কোনো দেবতা বানিয়ে দিন। মুসা বললেন, তোমরা তো দেখছি, একেবারেই এক মূর্খ জাতি।
ব্যাখ্যা
১৩৬ নম্বর আয়াতে ফেরাউনের বাহিনীকে সাগরে ডুবিয়ে মারার ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনাটি আরো বিস্তারিতভাবে সুরা ইউনুস (১০:৮৯-৯২), সুরা তোয়াহা (২০:৭৭) ও সুরা শুআরায় (২৬:৬০-৬৬) বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো তাফসিরকারের মতে, এটা নীল নদ পার হওয়ার কথা বলা হয়েছে, আবার অধিকাংশের মতে এটা লোহিত সাগর পার হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১৩৭ নম্বর আয়াতে যে কল্যাণময় ভূমির কথা বলা হয়েছে, তা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন অঞ্চল। তাওরাত ও ইঞ্জিলের বর্ণনা মতে, ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের তীর থেকে শুরু করে পূর্বে দজলা নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ বনিইসরাইলের অধিকারভুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই আয়াতের মর্মার্থ দ্বারা বোঝা যায়, মিসরের অত্যাচারী ফারাওরা যাদের দাস বানিয়ে রেখেছিল, সেই বনিইসরাইলদের মিসরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের মালিক বানিয়ে দেওয়া হলো। তবে এ অঞ্চলে বনিইসরাইলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফেরাউন সাগরে ডুবে মরার আরো দীর্ঘকাল পর। তাদের সেই আধিপত্য খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় হাজার বছর ধরে অব্যাহত ছিল। সুরা বাকারায় ২৪৬ থেকে ২৫৬ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বর্ণনা আছে। বর্তমান আয়াতে মিসরীয়দের ক্ষয়িষ্ণু সমাজের চিত্র তুলে ধরতে তাদের অবিস্মরণীয় শিল্পকর্ম ও সুউচ্চ স্থাপনার নির্মাণকাজের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মিসরের পিরামিডসহ অবিস্মরণীয় স্থাপনাগুলোর কথাই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ফারাওদের অত্যাচার, অবিচার ও পথভ্রষ্টতার কারণে যে আল্লাহ তায়ালা সেই সমৃদ্ধ সভ্যতা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, সে বিষয়টির উল্লেখ করাই এখানকার মূল কথা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.