এসইসি ও ডিএসইর তদারকিতে শেয়ারবাজারের নাটকীয় মোড়-দিনশেষে ডিএসইতে সূচক বাড়ল ১৬০ পয়েন্ট

শুরুর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই সূচক পতন ১৫৬ পয়েন্ট। এরপর আরো কয়েক দফা ওঠানামা। তারপর একেবারে ঊর্ধ্বমুখী গতি। পড়ে যাওয়া ১৫৬ পয়েন্টের বিপরীতে ২১৬ পয়েন্ট যোগ ঘটে। তাতে দিনশেষে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচকে আগের দিনের সঙ্গে ১৬০ পয়েন্ট যোগ হয়। ডিএসইর লেনদেন শেষ হয় পাঁচ হাজার ২২৫ পয়েন্টে।দিনভর এই পতন ও উত্থান নিয়ে তাই বিনিয়োগকারীদের গবেষণার অন্ত ছিল না। উদ্যোক্তা


পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বিষয়েই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বেশি। আর সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পরও দরপতন হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন ছিল প্রায় সব বিনিয়োগকারীর মুখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ২১টি সিদ্ধান্ত ঘোষণার দ্বিতীয় কার্যদিবস রবিবার ৩০৮ পয়েন্ট সূচক পতনের পর গতকাল আবার দরপতন শুরু হলে সরকারের উচ্চ মহলও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই গতকাল যখন সূচক ১৫৬ পয়েন্ট নেমে যায়, তখন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) মনিটরিং বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তা ও ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) ১০ কর্মকর্তা দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক পরিদর্শনে যায়। বড় লটের শেয়ার কারা বিক্রি করছে তা খুঁজে বের করতে এই টিম মাঠে নামে। অন্যদিকে এসইসির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজার ধরে রাখার জন্য শেয়ার কিনতে অনুরোধ করা হয়। এর ফলে বাজার দ্রুত ঘুরে যায়। সরকারি একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, 'সকালে দরপতন শুরু হলে এসইসি ও আইসিবি থেকে আমাদের শেয়ার বিক্রি করতে নিষেধ করে। তারা আমাদের শেয়ার কেনার জন্য অনুরোধ করে। আমরা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করতে নিষেধ করেছি। নিজেরা কিনেছি। তাদেরও কিনতে বলেছি।'
এদিকে গতকাল সকালে দরপতন শুরু হলে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা এসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন। বিনিয়োগকারীরা এসইসির চেয়ারম্যানের কাছে সার্ভিলেন্স জোরদার করার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, যেসব পরিচালক শেয়ার বিক্রি করে বাজারে ম্যানুপুলেশন করছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিন। তাঁরা সারকারের ২১ দফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানান। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার জন্য এসইসির হস্তক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা। ঐক্য পরিষদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আতাউল্লাহ নাঈম কালের কণ্ঠকে এসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করেন।
অন্যদিকে অভিন্ন অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ১৩৭টি কম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট স্পট মার্কেটে লেনদেন গতকালের শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। নগদ টাকায় লেনদেন হওয়ায় কমে যায় লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে গতকাল ৩৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা রবিবারের তুলনায় ১২০ কোটি টাকা কম। দিনশেষে ডিএসইতে ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২২৫টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে ২৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার ৯৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৮৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের রেকর্ড ডেটের জন্য সোমবার থেকে ডিএসইতে স্পট মার্কেটে লেনদেন শুরু হয়েছে। স্পট মার্কেট চলবে আরো দুদিন। এদিকে গতকাল ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়েছে বস্ত্র খাতের জাহিন টেঙ্টাইল এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস।
প্রথম দিনে জাহিন টেঙ্রে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৮৪ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৪৬ টাকা ১০ পয়সা এবং রংপুর ডেইরির প্রতিটি শেয়ার ১১৬ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৯ টাকায়। লেনদেনের ভিত্তিতে গতকালের প্রধান ১০টি কম্পানি হলো_ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বেঙ্মিকো লিমিটেড, জাহিন টেঙ্টাইল, গ্রামীণফোন, ইউসিবিএল, ফু-ওয়াং সিরামিকস্, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও আফতাব অটোমোবাইলস্।
মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে গতকালের ১০টি কম্পানি হলো_আরডি ফুড, জাহিন টেঙ্টাইল, মেট্রো স্পিনিং, লিগেসি ফুটওয়্যার, বিডি কম, গ্রামীণ ১, সিনোবাংলা, পিপলস্ ইনসু্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স ও ড্যাফোডিল কম্পিউটার।
অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কম্পানি হলো_মেঘনা পেট্রোলিয়াম, শমরিতা হাসপাতাল, অষ্টম আইসিবি, প্রথম বিএসআরএস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, গ্লাঙ্ােস্মিথ ক্লাইন, জেমিনী সি ফুড, শ্যামপুর সুগার ও আইসিবি এএমসিএল প্রথম।

No comments

Powered by Blogger.