যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া হয়ে গেছে ১০৬টি ব্যাংকঃ বুদ্বুদ ফেটে গেলে এমনই হয়
যুক্তরাষ্ট্রে ১০৬টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস যে খবর পরিবেশন করেছে, তাতে মানুষের চোখ কপালে ওঠার মতো পরিবেশ এখন আর নেই। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন অর্থনীতি গোত্তা খেয়ে চলছে। বুশ এবং তার নব্য রক্ষণশীল সঙ্গীসাথীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে যে একেবারে ফোকলা করে ছেড়েছে সেটা এখন আর গোপন নেই।
তবে এ খবরের পাশাপাশি আরও যে তথ্য ক্রমে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে সেটা হলো, মার্কিন অর্থনীতিকে যতটা বিশাল করে দেখানো হতো সেটা ছিল অনেকটা বাতাস ভর্তি বেলুন অথবা বড় আকারের বুদ্বুুদের মতো। এখন বুদ্বুদটা ফেটে যাওয়ায় আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। সে চেহারা এতটাই কাহিল যে, মনে হয় হাঁটা দূরে থাকুক মার্কিন অর্থনীতি এখন হামাগুড়ি দেয়ার সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাওয়া আকস্মিক ঘটনা নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকাকালেও দেশটিতে প্রতি বছর অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ব্দ হয়ে যায়; দায়দেনার ভারে দিশেহারা হয়ে অনেকে (ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। কিন্তু একসঙ্গে এত বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটা বড় ‘ঘটনা’। এরকম কাণ্ড সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৯২ সালে প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের আমলে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের ১৮১টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। কথা উঠতে পারে সেবার অনেক বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়া সত্ত্বেও তেমন হইচই হয়নি; এবার দুনিয়াজুড়ে এতো আলোড়ন কেন? এর উত্তর হচ্ছে সেবারও আলোড়ন উঠেছিল। কিন্তু এরশাদের সামরিক শাসনের পতনের আনন্দে মশগুল থাকায় এদেশের পত্রপত্রিকায় মার্কিন অর্থনীতির ওঠানাম নিয়ে ততটা মনোযোগী ছিল না। দ্বিতীয়ত, তখনো বিশ্বায়নের যুগ শুরু না হওয়ায় মার্কিন অর্থনীতির বেকায়দাদশা বিশ্ব অর্থনীতিকে রুগ্ন করতে পারেনি। তৃতীয়ত, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গিয়েছিল, সেটা ছিল স্বল্পকাল স্থায়ী টর্নেডো; এখন বইছে দীর্ঘস্থায়ী সাইক্লোন। তবে সেই টর্নেডোর আঘাতে ধরাশায়ী হয়েছিলেন সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট বুশের বাবা সিনিয়র বুশ। তিনি যে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন না, বিল ক্লিনটনের হাতে ধরাশায়ী হলেন, তার প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক মন্দা সামাল দিতে না পারা। সেবার মন্দার ধাক্কায় প্রথমে কুপোকাত হলো বড় ব্যাংকগুলো। কিন্তু এখন যেসব ব্যাংক মৃত্যুপথযাত্রী সেগুলো সবই মাঝারি অথবা ছোট। চেষ্টা হচ্ছে ব্যাংকগুলো বিক্রি করে দায়দেনা কমানোর। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকের প্রবাহ থেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই। বর্তমানে ব্যাংক দেউলিয়া ও বন্ব্দের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া ও ইলিনয় অন্ব্দরাজ্যে। আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না বলে বারবার ঘোষণা দেয়া হলেও মানুষের দুশ্চিন্তা কাটছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। আসলে মাতব্বরি ফলাতে গিয়ে এবং তেললবীর খাই মেটাতে গিয়ে বুশ সাহেব যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক কিছুর মধ্যে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেছিলেন যে, রাষ্ট্রের ভাঁগারে ভালো মতো টান পড়েছিল। এর সঙ্গে আইটি খাতের শেয়ার নিয়ে অস্বাভাবিক ফটকাবাজি এবং ব্যাংকগুলোর বেপরোয়া আচরণ এমন চাপ সৃষ্টি করে যে, মার্কিন অর্থনীতি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়। তারই ধকল এখন ওবামা সরকারকে বহন করতে হচ্ছে এবং আরও দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলবে বলে আশঙ্কা করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। এর ধাক্কায় মার্কিন অর্থনীতি নাম্বার ওয়ান র্যাংকিং শেষ পর্যন্ত হারিয়ে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
No comments