গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন বিপর্যস্তঃ রূপকল্পের খসড়া নয়, বাস্তবায়ন চাই
পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় দেশের শিল্প কারখানায় উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বস্ত্রখাত। বিভিন্ন এলাকার টেক্সটাইল মিলের উত্পাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বন্ব্দ হয়ে গেছে বেশকিছু বড়-বড় প্রতিষ্ঠান; বন্ব্দের উপক্রম হয়েছে শত শত কলকারখানা। অসংখ্য কারখানা জেনারেটর দিয়ে চালিয়ে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসছে। ফলে স্বভাবতই স্লমকির মুখে পড়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতরকে জানিয়ে কোনো ফায়দা হচ্ছে না। সহসা সমাধানের আশ্বাস দিতে পারছে না তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিসিল্ট্রবিউশন কোম্পানি। মাঝে মধ্যে আশার কথা শোনালেও শেষ পর্যন্ত তা পরিণত হয়েছে কুহকে। সম্প্রতি টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ জানিয়েছে, প্রায় শ’খানেক বস্ত্র কারখানা বিগত ছয় মাস ধরে টানা গ্যাস সঙ্কটে রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টি কারখানায় উত্পাদন বন্ব্দ হওয়ার পথে। গ্যাসের অভাবে মানিকগঞ্জ, আশুলিয়া, গাজীপুর, সাভার, টাঙ্গাইলসহ বেশকিছু এলাকার বন্ব্দ কারখানার উত্পাদন কমে গেছে প্রায় ৭০ ভাগ। স্থান বিশেষে কয়েক মাস ধরে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একেবারেই গ্যাস সরবরাহ থাকছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান গ্যাসের অভাবে জেনারেটর চালিয়ে উত্পাদন অব্যাহত রাখলেও লোকসানের মুখে তা বন্ব্দ করে দেয়ার কথা ভাবছে। কারণ ৩ থেকে ৪ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি গ্যাসের চাপ) গ্যাস দিয়ে ২টির বেশি জেনারেটর সচল রাখা সম্ভব নয়। দেশজুড়ে গ্যাসের এই তীব্র সঙ্কট মোকাবিলা প্রসঙ্গে ২৪ অক্টোবর তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিসিল্ট্রবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, গ্যাসের প্রেসার কম থাকা বা কোথাও কোথাও না থাকার সমস্যা সমাধানের উপায় আপাতত তাদের হাতে নেই। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশে স্পিনিং মিল আছে ৩৪১টি। এসব মিলের দৈনিক উত্পাদন ১৬০০ মিলিয়ন কেজি সুতা। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ৪০০ ফেব্রিক মিলের দৈনিক উত্পাদন ২ হাজার মিলিয়ন মিটার। এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাস সঙ্কটের কারণে প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এখন স্লমকির মুখে। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন দেশে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের মতো অবস্থা নেই। এই প্রেক্ষাপটে গ্যাস তথা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার সমূহ সঙ্কট এড়িয়ে কেবল স্বপম্ন রচনার দিকেই বেশি মনোযোগী। জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ব্দানের জন্য দুটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করতে যাচ্ছে সরকার। চুক্তি অনুসারে প্রাপ্ত গ্যাসের ৮০ ভাগ রফতানির সুযোগ থাকবে ঠিকাদার কোম্পানিগুলোর। তাত্ক্ষণিকভাবেই এ চুক্তি প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন অনেকে। কেননা গ্যাস রফতানির সুযোগ রেখে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করলে তা হবে দেশের স্বার্থবিরোধী। সাদা কথায়, গ্যাস তুলতে আপত্তি নেই, কিন্তু রফতানি করা যাবে না। তা ছাড়া সেই সম্ভাবনাময় গ্যাস কবে পাইপলাইনে যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। অর্থাত্ সঙ্কট দুয়ারে, স্বপম্ন দূরস্ত্! এরই মধ্যে সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গ্যাসখাত উন্নয়নের একটি ‘রূপকল্প’ উপস্থাপন করেছে। সেই রূপকল্প অনুযায়ী আগামী ২০১২-১৩ সালে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করেও নাকি কিছু উদ্বৃত্ত থাকবে। বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের মজুত নির্ধারণ করা হবে। সম্পূর্ণ নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় একটিও নতুন গ্যাস কূপ খনন এবং চালু করা হয়নি। এ অবস্থায় খাতাকলমে রূপকল্পের খসড়া নয়, এবার চাই তার কার্যকর বাস্তবায়ন।
No comments