অবরুদ্ধ কাশ্মীরে ধরপাকড়: পাকিস্তানের দাবি, নিহত ১২
টানা
চতুর্থ দিনের মতো বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগহীন অবস্থা পার করেছে
কাশ্মীরের জনগণ। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা। জারি রয়েছে কারফিউ।
এর মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা। বিক্ষোভ প্রবল হচ্ছে সেখানে। স্থানীয় ও
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ৬০০
মানুষকে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সোমবার থেকে এখন
পর্যন্ত অন্তত ১২ কাশ্মীরির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এমন দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।
গত সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার। ধারা রদের ফলে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার সহ বিশেষ সুবিধা হারায় কাশ্মীর। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে দেয়া এক ঘোষণায় এই ধারা রদের কথা জানান। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে আলাদা দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হবে। এ ঘোষণা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানসহ একাধিক দেশ এ ঘোষণার সমালোচনা করেছে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমপর্ক অবনমন করেছে পাকিস্তান।
১২ কাশ্মীরির মৃত্যুর দাবি পাকিস্তানের: বৃহসপতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আমার শেষ ব্রিফিং থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন কাশ্মীরি শাহাদাতবরণ করেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শত। তিনি বলেন, দখলীকৃত কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। তারা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা হলো নির্যাতন। এখন মানবিক সংকটে রয়েছে ওই এলাকা। দখলীকৃত ওই উপত্যকায় যে ভয়াবহ নির্যাতন চলছে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দখলীকৃত কাশ্মীর ইস্যুতে সব পক্ষই অভিন্ন অবস্থানে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের জরুরি যৌথ অধিবেশন এ অবস্থানকেই অনুমোদন দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, কাশ্মীরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত জাতিসংঘের।
কাশ্মীর ইস্যুতে আগে থেকেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে ভারত-পাকিস্তান। ভারত সরকারের সামপ্রতিক পদক্ষেপে ফের ওই উত্তেজনা ফুঁসে উঠেছে। বুধবার এক জরুরি বৈঠক শেষে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমপর্ক সীমিত করবে ও সকল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিত করে দেবে। জাতিসংঘে এ ঘোষণার বিপক্ষে প্রস্তাব উত্থাপনের কথা জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া, ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার ও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত তাদের হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়েছে। এর প্রভাব দেখা গেছে বৃহসপতিবারই। পাকিস্তানের লাহোর এবং ভারতের দিল্লি ও আত্তারির মধ্যে চলাচলকারী ট্রেনটি সাময়িক সময়ের জন্য দুই দেশের মধ্যবর্তী ওয়াগা সীমান্তে আটকে দেয় পাকিস্তান।
কাশ্মীর ইস্যুতে উঠে এসেছে কর্তারপুর করিডোরও। ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের জন্য ওই করিডোর খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও সেই প্রতিশ্রুতিতে অটুট থাকবে পাকিস্তান- এমন কথা পুনর্বার তুলে ধরেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র।
এদিকে, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সমপর্ক ছিন্ন করা নিয়ে নয়াদিল্লি বলেছে, বিশ্বের কাছে বিপজ্জনক ছবি তুলে ধরার জন্যই পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিন্ন করছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে পাকিস্তানকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলেছে, পাকিস্তানের সমপর্ক ছিন্নের এই সিদ্ধান্ত ‘একতরফা’। পাকিস্তানকে তাদের সিদ্ধান্ত ফের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার: এদিকে, বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের হাজার হাজার মানুষ রীতিমতো বন্দি তাদের বাড়িতে। তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত। টানা চতুর্থ দিনের মতো কারফিউ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে। কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের বাসিন্দা রশিদ আলী জানান, পুরো উপত্যকা এখন একটি কারাগারের মতো। বাধা নিষেধ উঠে গেলেই মানুষ রাস্তায় নামবে।
কাশ্মীরে বর্তমানে অবস্থান করছে কেন্দ্রীয় সরকারের মোতায়েন করা প্রায় ৪০ হাজার সেনা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক অঞ্চলগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে পৃথিবীর ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীর। বন্ধ রয়েছে মার্কেট, স্কুল-কলেজ। বিক্ষোভের আশংকায় কোথাও চারজনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে কয়েকশ’ স্থানীয় নেতাকে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে জানান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে ভারতশাসিত কাশ্মীরের জনগণ।
বাড়ছে বিক্ষোভ, ধৃত ৫ শতাধিক: কাশ্মীরের অবরুদ্ধ অবস্থা অঞ্চলটির বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভারত সরকারের এমন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হচ্ছে। বুধবার বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভের খবর মিললেও বৃহসপতিবার তা প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো অঞ্চল থেকেই ভারত সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে আওয়াজ তুলছেন কাশ্মীরিরা। অসিম আব্বাস নামের এক কাশ্মীরি বলেন, আমাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার পরিণতি হবে বিপজ্জনক। এটা আমাদের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারিত্বকেই মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে পাথরের যুগে ফিরে গেছি। বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে আমাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, কাশ্মীর তার স্বাধীনতা হারিয়েছে ও ভারতের দাসত্বে চলে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। বারামুলার অধিবাসী আব্দুল খালিক নজর বলেন, এটা তারা পনের আগস্টের পরই করতে পারতো। সামনে আমাদের ঈদ।
কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাস্তাঘাট এখনো আটকে রাখা হয়েছে। চেকপয়েন্টগুলোতে পুলিশ ও সশস্ত্র আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে কড়া পাহারায়। চলাচল খুবই সীমিত। অবশ্য পুলিশের একজন কর্মকর্তা কয়েকদিনের মধ্যে বিধিনিষেধ কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাও চালু হবে।
এদিকে, বার্তা সংস্থা পিটিআইকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, বুধবার মধ্যরাতে শ্রীনগর, বারমুল্লা ও গারেজ শহরে ঘেরাও অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কমপক্ষে ৫৬০ জনকে। রাজনীতিক ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ব্যবসায়ী নেতা ও অধিকার কর্মীরা। তাদেরকে অস্থায়ী বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে।
ভারতের সিদ্ধান্তে লাদাখেও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থায় কাশ্মীরে কাজের উদ্দেশে যাওয়া শত শত শ্রমিক পালানো শুরু করেছে। তারা উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলো থেকে সেখানে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। তাদের অনেকে বুধবার অভিযোগ করেছেন, জম্মু-কাশ্মীর সফরে বিধিনিষেধ আরোপ করার পর কাশ্মীরে তাদের যারা কাজে নিয়েছিলেন তারা তাদের মজুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের কাজ বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে বলেছেন। এদিন জম্মুর বিভিন্ন রেল স্টেশনে এমন শ্রমিকের ভিড় দেখা গেছে। তারা বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। এমন এক শ্রমিক সুতার সুরজিৎ সিং এনডিটিভিকে জানান, কাশ্মীর নিরাপত্তার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই তিনি বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এমন দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।
গত সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার। ধারা রদের ফলে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার সহ বিশেষ সুবিধা হারায় কাশ্মীর। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে দেয়া এক ঘোষণায় এই ধারা রদের কথা জানান। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে আলাদা দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হবে। এ ঘোষণা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানসহ একাধিক দেশ এ ঘোষণার সমালোচনা করেছে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমপর্ক অবনমন করেছে পাকিস্তান।
১২ কাশ্মীরির মৃত্যুর দাবি পাকিস্তানের: বৃহসপতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আমার শেষ ব্রিফিং থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন কাশ্মীরি শাহাদাতবরণ করেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শত। তিনি বলেন, দখলীকৃত কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। তারা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা হলো নির্যাতন। এখন মানবিক সংকটে রয়েছে ওই এলাকা। দখলীকৃত ওই উপত্যকায় যে ভয়াবহ নির্যাতন চলছে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দখলীকৃত কাশ্মীর ইস্যুতে সব পক্ষই অভিন্ন অবস্থানে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের জরুরি যৌথ অধিবেশন এ অবস্থানকেই অনুমোদন দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, কাশ্মীরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত জাতিসংঘের।
কাশ্মীর ইস্যুতে আগে থেকেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে ভারত-পাকিস্তান। ভারত সরকারের সামপ্রতিক পদক্ষেপে ফের ওই উত্তেজনা ফুঁসে উঠেছে। বুধবার এক জরুরি বৈঠক শেষে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমপর্ক সীমিত করবে ও সকল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিত করে দেবে। জাতিসংঘে এ ঘোষণার বিপক্ষে প্রস্তাব উত্থাপনের কথা জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া, ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার ও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত তাদের হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়েছে। এর প্রভাব দেখা গেছে বৃহসপতিবারই। পাকিস্তানের লাহোর এবং ভারতের দিল্লি ও আত্তারির মধ্যে চলাচলকারী ট্রেনটি সাময়িক সময়ের জন্য দুই দেশের মধ্যবর্তী ওয়াগা সীমান্তে আটকে দেয় পাকিস্তান।
কাশ্মীর ইস্যুতে উঠে এসেছে কর্তারপুর করিডোরও। ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের জন্য ওই করিডোর খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও সেই প্রতিশ্রুতিতে অটুট থাকবে পাকিস্তান- এমন কথা পুনর্বার তুলে ধরেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র।
এদিকে, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সমপর্ক ছিন্ন করা নিয়ে নয়াদিল্লি বলেছে, বিশ্বের কাছে বিপজ্জনক ছবি তুলে ধরার জন্যই পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিন্ন করছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে পাকিস্তানকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলেছে, পাকিস্তানের সমপর্ক ছিন্নের এই সিদ্ধান্ত ‘একতরফা’। পাকিস্তানকে তাদের সিদ্ধান্ত ফের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার: এদিকে, বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের হাজার হাজার মানুষ রীতিমতো বন্দি তাদের বাড়িতে। তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত। টানা চতুর্থ দিনের মতো কারফিউ পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে। কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের বাসিন্দা রশিদ আলী জানান, পুরো উপত্যকা এখন একটি কারাগারের মতো। বাধা নিষেধ উঠে গেলেই মানুষ রাস্তায় নামবে।
কাশ্মীরে বর্তমানে অবস্থান করছে কেন্দ্রীয় সরকারের মোতায়েন করা প্রায় ৪০ হাজার সেনা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক অঞ্চলগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে পৃথিবীর ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীর। বন্ধ রয়েছে মার্কেট, স্কুল-কলেজ। বিক্ষোভের আশংকায় কোথাও চারজনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে কয়েকশ’ স্থানীয় নেতাকে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে জানান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে ভারতশাসিত কাশ্মীরের জনগণ।
বাড়ছে বিক্ষোভ, ধৃত ৫ শতাধিক: কাশ্মীরের অবরুদ্ধ অবস্থা অঞ্চলটির বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভারত সরকারের এমন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হচ্ছে। বুধবার বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভের খবর মিললেও বৃহসপতিবার তা প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো অঞ্চল থেকেই ভারত সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে আওয়াজ তুলছেন কাশ্মীরিরা। অসিম আব্বাস নামের এক কাশ্মীরি বলেন, আমাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার পরিণতি হবে বিপজ্জনক। এটা আমাদের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারিত্বকেই মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে পাথরের যুগে ফিরে গেছি। বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে আমাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, কাশ্মীর তার স্বাধীনতা হারিয়েছে ও ভারতের দাসত্বে চলে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। বারামুলার অধিবাসী আব্দুল খালিক নজর বলেন, এটা তারা পনের আগস্টের পরই করতে পারতো। সামনে আমাদের ঈদ।
কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাস্তাঘাট এখনো আটকে রাখা হয়েছে। চেকপয়েন্টগুলোতে পুলিশ ও সশস্ত্র আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে কড়া পাহারায়। চলাচল খুবই সীমিত। অবশ্য পুলিশের একজন কর্মকর্তা কয়েকদিনের মধ্যে বিধিনিষেধ কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাও চালু হবে।
এদিকে, বার্তা সংস্থা পিটিআইকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, বুধবার মধ্যরাতে শ্রীনগর, বারমুল্লা ও গারেজ শহরে ঘেরাও অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কমপক্ষে ৫৬০ জনকে। রাজনীতিক ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ব্যবসায়ী নেতা ও অধিকার কর্মীরা। তাদেরকে অস্থায়ী বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে।
ভারতের সিদ্ধান্তে লাদাখেও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থায় কাশ্মীরে কাজের উদ্দেশে যাওয়া শত শত শ্রমিক পালানো শুরু করেছে। তারা উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলো থেকে সেখানে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। তাদের অনেকে বুধবার অভিযোগ করেছেন, জম্মু-কাশ্মীর সফরে বিধিনিষেধ আরোপ করার পর কাশ্মীরে তাদের যারা কাজে নিয়েছিলেন তারা তাদের মজুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের কাজ বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে বলেছেন। এদিন জম্মুর বিভিন্ন রেল স্টেশনে এমন শ্রমিকের ভিড় দেখা গেছে। তারা বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। এমন এক শ্রমিক সুতার সুরজিৎ সিং এনডিটিভিকে জানান, কাশ্মীর নিরাপত্তার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই তিনি বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
No comments