ডেঙ্গুর প্রভাব: ক্রেতাশূন্য নার্সারি by মারুফ কিবরিয়া
ঢাকার
নার্সারিগুলোতে এখন শুধু গাছই আছে। টবে টবে সাজিয়ে রোপণ করা গাছগুলো ঠাঁই
দাঁড়িয়ে নার্সারিতে। কেউ কেনার নেই। মাঝে মধ্যে দুই একজন ঢুঁ মারলেও তা
কেবলই দেখার জন্য। কারণ একটাই, রাজধানীবাসী এই মৌসুমে খুব একটা বাসাবাড়িতে
বৃক্ষ রোপন করতে চান না। তারওপর চলতি সময়ে ডেঙ্গু মহামারির কারণে আরো
অনাগ্রহ। নার্সারি মালিকরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়ে এখন বাসাবাড়িতে ছোটখাট বাগান
করার জন্য কেউ গাছ কিনতে আসছেন না। গত দুই মাস ধরে মোটেই বিক্রি হচ্ছে না।
যারা আসেন ঘোরাঘুরি করে চলে যান। রাজধানীর বেশকিছু নার্সারি ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকেই চেয়ারে বসে নার্সারির সামনে অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনশ’ ফিট সড়কের গাছ বিক্রেতা শাহিন আলম। গত কিছুদিন ধরেই এভাবে বসে থাকেন। সময় সময় উঠে পরিচর্যা করেন। গাছে পানি দেন। আগাছা জন্মালে সেগুলো পরিষ্কার করেন। তাছাড়া কোনো কাজ নেই। শাহিন বলেন, শীতের সময় বেশি মানুষ আসা যাওয়া করে। এই সিজনটাতে কম থাকলেও এখন তো একবারেই নাই।
নার্সারি নিয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছি। গত এক-দুই মাস ধরে কেউ কিনতে আসেন না। শাহিনের পাশেই আরেকটি নার্সারির মালিক মোতালেব মিয়া জানান, সারা বছরই টুকটাক কাস্টমার থাকে। এদিকে অনেকে বেড়াতে আসে। যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে গাছ কিনে নিয়ে যান। কয়েকমাস ধরে কোনো বেচাকেনা নাই। বৌ-বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমার ছোটভাইরে দিয়ে একটা ফুচকার দোকান চালাইতেছি। নইলে না খেয়ে মরা লাগতো। এই ব্যবসা কতদিন ধরে করছেন জানতে চাইলে মোতালেব মিয়া বলেন, আমার বড় ভাই বিশ বছর আগে শুরু করে। সে বিদেশ চলে যাওয়ার পর আমিই এ কাজ করতেছি। এখন এই নার্সারির মালিকানাও আমার। কিন্তু এই দুই মাসে লস ছাড়া কিছু নাই। একটা কাস্টমার আসে না।
রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে বেরাইদ পর্যন্ত ১শ ফিট সড়কেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নার্সারি। ধীরে ধীরে আবাসিক এলাকা ও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হওয়ার ফলে প্রচুর মানুষের সমাগম হয় সেখানে। কেউ কেউ বেড়াতেও আসেন একশ ফিট সড়কে। আসা যাওয়ার পথে প্রায়শই ঢুঁ মারেন রাস্তার পাশে বেড়ে ওঠা নার্সারিগুলোতে। তবে এখন কোনো ক্রেতা নেই। নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ কোনো ক্রেতা আসেন না। শফিকুল হোসেন প্রায় পাঁচ বছর ধরে ১শ ফিটের নার্সারি গড়ে তুলেছেন। দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার গাছও বিক্রি করেছেন গত এপ্রিল-মে মাসে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে ক্রেতা সংকট থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। ৩-৪ দিন পরপর একটি বা দুটি গাছ বিক্রি হয় তার নার্সারি থেকে। শফিকুল বলেন, এত মানুষ গেল কই। কেউ গাছ কিনতে আসে না। ৪দিন আগে ‘ভার্সিটির’ দুই আপা আসছিল। তারা গাছ কিনেন। আগেও কিনতেন। নার্সারির ভেতরে ঢুইকা গাছ দেইখা রাইখা গেলেন। যাইতে যাইতে ডেঙ্গুর কথা বইলা গেছেন। মনে হয় ডেঙ্গুর কারণেই এখন আমাগো ব্যবসা নাই। কিন্তু এই অবস্থা হইলে চলমু কেমনে? একশ ফিট সড়কের ব্রিজ অতিক্রম করে গেলে আরেকটি নার্সারি রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন ঘুরোঘুরি করছেন। এই গাছ ওই গাছের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তবে কিছুক্ষণ পর চলে যান তারা। ওই নার্সারির মালিক মাহবুব উদ্দিন বলেন, সবাই দেখে যায়। কেউ কিনতে আসে না। কালকে একজন কাস্টমার পাইছি ৫দিন পরে। খুব বাজে অবস্থা যাচ্ছে আমাদের। এই লাইনে যত নার্সারি আছে সবার একই অবস্থা।
রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসের পেছনে লেকের পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি নার্সারি। সেখানেও দেখা যায় নার্সারির মালিকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন আবার কেউ বা বসে আছেন। এক নার্সারির মালিক সেকান্দার তার গাছের যত্ন নিচ্ছেন। ষাটোর্ধ্ব সেকান্দার বলেন, কোনো কাজ নেই। ১৮ বছর ধরে এই নার্সারির কাজ করছি। গাছপালা নিয়ে কাজ করতেই ভালোবাসি। এটা দিয়েই আয় রোজগার। গত দুই মাস কোনো বেচাকেনা নেই। শুধু গাছগুলোর যত্নই নিচ্ছি। এখানে অনেকে ভিসার কাজে আসেন। মাঝে মধ্যে কেউ গাছ নিয়ে যান। কিন্তু এখন কোনো বেচাকেনা নাই। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে সেকান্দার বলেন, এমনিই এই সিজনে গাছ বিক্রি কম হয়। তার মধ্যে ডেঙ্গুর কারণে কেউ বাসাবাড়িতে গাছের চারা লাগাচ্ছেন না। কিন্তু অনেকে এটা বোঝেন না ঠিকমত যত্ন নিলে ডেঙ্গু কেন কোনো পোকাও টবের ভেতর বসবে না। সেকান্দারের পাশেই সাইফুলের নার্সারি। তার নার্সারিও ক্রেতা শূন্য। তিনি জানান, এক মাসে ১০টি গাছও বিক্রি করতে পারেননি।
বারিধারা লেকের নার্সারিগুলোয় সবসময়ই লোকসমাগম থাকে। লেকের ধারে হাঁটাহাঁটি করতে এসেও অনেকে গাছের চারা নিয়ে যান। কিন্তু ডেঙ্গুর এই মহামারীর সময় ক্রেতার সংকট বলে জানান সেখানকার আরেক নার্সারির কর্মচারি মিলন। তিনি বলেন, এই নার্সারির মালিকের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করছি। গত ২২ দিন হলো কাজ করছি। এখানকার বেশিরভাগ গাছ বিভিন্ন অফিসে অর্ডার করা থাকে। কিন্তু গত কিছুদিনে কোনো বেচাকেনা নাই। শুধু বারিধারা লেকে নয়, বনানী, আগারগাঁও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিশু একাডেমির পাশের নার্সারিগুলোতেও একই চিত্র। নার্সারিতে কর্মরতরা বসে অলস সময়ই কাটাচ্ছেন।
যারা আসেন ঘোরাঘুরি করে চলে যান। রাজধানীর বেশকিছু নার্সারি ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকেই চেয়ারে বসে নার্সারির সামনে অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনশ’ ফিট সড়কের গাছ বিক্রেতা শাহিন আলম। গত কিছুদিন ধরেই এভাবে বসে থাকেন। সময় সময় উঠে পরিচর্যা করেন। গাছে পানি দেন। আগাছা জন্মালে সেগুলো পরিষ্কার করেন। তাছাড়া কোনো কাজ নেই। শাহিন বলেন, শীতের সময় বেশি মানুষ আসা যাওয়া করে। এই সিজনটাতে কম থাকলেও এখন তো একবারেই নাই।
নার্সারি নিয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছি। গত এক-দুই মাস ধরে কেউ কিনতে আসেন না। শাহিনের পাশেই আরেকটি নার্সারির মালিক মোতালেব মিয়া জানান, সারা বছরই টুকটাক কাস্টমার থাকে। এদিকে অনেকে বেড়াতে আসে। যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে গাছ কিনে নিয়ে যান। কয়েকমাস ধরে কোনো বেচাকেনা নাই। বৌ-বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমার ছোটভাইরে দিয়ে একটা ফুচকার দোকান চালাইতেছি। নইলে না খেয়ে মরা লাগতো। এই ব্যবসা কতদিন ধরে করছেন জানতে চাইলে মোতালেব মিয়া বলেন, আমার বড় ভাই বিশ বছর আগে শুরু করে। সে বিদেশ চলে যাওয়ার পর আমিই এ কাজ করতেছি। এখন এই নার্সারির মালিকানাও আমার। কিন্তু এই দুই মাসে লস ছাড়া কিছু নাই। একটা কাস্টমার আসে না।
রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে বেরাইদ পর্যন্ত ১শ ফিট সড়কেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নার্সারি। ধীরে ধীরে আবাসিক এলাকা ও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হওয়ার ফলে প্রচুর মানুষের সমাগম হয় সেখানে। কেউ কেউ বেড়াতেও আসেন একশ ফিট সড়কে। আসা যাওয়ার পথে প্রায়শই ঢুঁ মারেন রাস্তার পাশে বেড়ে ওঠা নার্সারিগুলোতে। তবে এখন কোনো ক্রেতা নেই। নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ কোনো ক্রেতা আসেন না। শফিকুল হোসেন প্রায় পাঁচ বছর ধরে ১শ ফিটের নার্সারি গড়ে তুলেছেন। দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার গাছও বিক্রি করেছেন গত এপ্রিল-মে মাসে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে ক্রেতা সংকট থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। ৩-৪ দিন পরপর একটি বা দুটি গাছ বিক্রি হয় তার নার্সারি থেকে। শফিকুল বলেন, এত মানুষ গেল কই। কেউ গাছ কিনতে আসে না। ৪দিন আগে ‘ভার্সিটির’ দুই আপা আসছিল। তারা গাছ কিনেন। আগেও কিনতেন। নার্সারির ভেতরে ঢুইকা গাছ দেইখা রাইখা গেলেন। যাইতে যাইতে ডেঙ্গুর কথা বইলা গেছেন। মনে হয় ডেঙ্গুর কারণেই এখন আমাগো ব্যবসা নাই। কিন্তু এই অবস্থা হইলে চলমু কেমনে? একশ ফিট সড়কের ব্রিজ অতিক্রম করে গেলে আরেকটি নার্সারি রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন ঘুরোঘুরি করছেন। এই গাছ ওই গাছের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তবে কিছুক্ষণ পর চলে যান তারা। ওই নার্সারির মালিক মাহবুব উদ্দিন বলেন, সবাই দেখে যায়। কেউ কিনতে আসে না। কালকে একজন কাস্টমার পাইছি ৫দিন পরে। খুব বাজে অবস্থা যাচ্ছে আমাদের। এই লাইনে যত নার্সারি আছে সবার একই অবস্থা।
রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসের পেছনে লেকের পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি নার্সারি। সেখানেও দেখা যায় নার্সারির মালিকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন আবার কেউ বা বসে আছেন। এক নার্সারির মালিক সেকান্দার তার গাছের যত্ন নিচ্ছেন। ষাটোর্ধ্ব সেকান্দার বলেন, কোনো কাজ নেই। ১৮ বছর ধরে এই নার্সারির কাজ করছি। গাছপালা নিয়ে কাজ করতেই ভালোবাসি। এটা দিয়েই আয় রোজগার। গত দুই মাস কোনো বেচাকেনা নেই। শুধু গাছগুলোর যত্নই নিচ্ছি। এখানে অনেকে ভিসার কাজে আসেন। মাঝে মধ্যে কেউ গাছ নিয়ে যান। কিন্তু এখন কোনো বেচাকেনা নাই। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে সেকান্দার বলেন, এমনিই এই সিজনে গাছ বিক্রি কম হয়। তার মধ্যে ডেঙ্গুর কারণে কেউ বাসাবাড়িতে গাছের চারা লাগাচ্ছেন না। কিন্তু অনেকে এটা বোঝেন না ঠিকমত যত্ন নিলে ডেঙ্গু কেন কোনো পোকাও টবের ভেতর বসবে না। সেকান্দারের পাশেই সাইফুলের নার্সারি। তার নার্সারিও ক্রেতা শূন্য। তিনি জানান, এক মাসে ১০টি গাছও বিক্রি করতে পারেননি।
বারিধারা লেকের নার্সারিগুলোয় সবসময়ই লোকসমাগম থাকে। লেকের ধারে হাঁটাহাঁটি করতে এসেও অনেকে গাছের চারা নিয়ে যান। কিন্তু ডেঙ্গুর এই মহামারীর সময় ক্রেতার সংকট বলে জানান সেখানকার আরেক নার্সারির কর্মচারি মিলন। তিনি বলেন, এই নার্সারির মালিকের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করছি। গত ২২ দিন হলো কাজ করছি। এখানকার বেশিরভাগ গাছ বিভিন্ন অফিসে অর্ডার করা থাকে। কিন্তু গত কিছুদিনে কোনো বেচাকেনা নাই। শুধু বারিধারা লেকে নয়, বনানী, আগারগাঁও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিশু একাডেমির পাশের নার্সারিগুলোতেও একই চিত্র। নার্সারিতে কর্মরতরা বসে অলস সময়ই কাটাচ্ছেন।
No comments