ট্রাম্প-ইমরান সংহতি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান অংশীদারিত্বে নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করতে পারে by আলী জে সিদ্দিকি
ওয়াশিংটন
ডিসিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে গত ২২ জুলাই প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠক ছিল একটি সম্পর্ক পুনঃবিন্যাসের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই
অংশীদারিত্ব উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কঠিন ও
লক্ষ্যহীন হয়ে পড়েছিল।
উভয় নেতাই বৈঠকের শুরুতেই একে অপরকে পছন্দ করে ফেলেন বলে মনে হয়েছে। দুজনেই ক্ষমতায় আসার আগেই ছিলেন সেলিব্রেটি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরিবর্তনের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। আর স্থিতিবস্থা গুঁড়িয়ে দিতে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইমরান খান গুটিকতেক এলিটের জন্য নয়, বরং সব নাগরিকের জন্য নয়া পাকিস্তান গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের থিমও একই। দুই নেতার কেউই আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে আবদ্ধ না হয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না।
ইমরান খান ভালোভাবেই জানেন, আফগানিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি ভালোভাবেই সচেতন রয়েছেন যে ট্রাম্প উত্তরাধিকার সূত্রে এই যন্ত্রণাদায়ক সঙ্ঘাত পেয়েছেন। নানা সমালোচনার মধ্যেও ট্রাম্প শান্তির পথে সাহসী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে সুফল দেখা যাচ্ছে। অনেক চ্যলেঞ্জ রয়ে গেলেও শান্তির সম্ভাবনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উজ্জ্বল বলে মনে হয়েছে।
ইমরান খান ভালোভাবেই জানেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে হলে, পারস্পরিকভাবে কল্যাণকর নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নির্মাণ করতে হলে আফগান সঙ্ঘাতের স্থায়ী সমাধান অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।
তবে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাকিস্তানি প্রয়াসকে যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করার চেষ্টা বলে ভুল ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না। পাকিস্তান নিজের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্যই এটা করছে। একটি শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান হবে পাকিস্তানের নিজের সীমিত সম্পদ তার নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারা।
শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। ৯/১১-এর পর থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিযে ৭০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক প্রাণ দিয়েছেন। এই সময়কালে অর্থনীতিতে সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরোক্ষ মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে বিপুল পরিমাণে ক্ষতি করে।
সন্ত্রাস দমন করার জন্য আফগান সীমান্তের উপজাতীয় এলাকাগুলোতে প্রায় দুই লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। বিশ্বে এটিই বৃহত্তম সন্ত্রাসবিরোধী প্রয়াস। ব্যয়বহুল ও বেদনাদায়ক সামরিক অভিযানের ফলে পাকিস্তান এখন অনেক বেশি নিরাপদ। সন্ত্রাসী ঘটনা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৪ সালের পর থেকে বেসামরিক মৃত্যু ৮০ ভাগের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে সাবেক উপজাতীয় এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নেই। রাজনৈতিকভাবে এসব উপজাতীয় এলাকাকে খাইবার পাকতুনখাওয়ার সাথে একীভূত করা হয়েছে। এখন রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল ও মার্কেট বানানোর কাজ চলছে।
পাকিস্তানের অনন্য কৃতিত্ব হলো এই যে সে কেবল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইই করেনি, সে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির সম্মিলিত ব্যবহার করে এতে জয়ীও হয়েছে। পাকিস্তানি মডেল প্রয়োগ করে আফগানিস্তানেও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
মুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র প্রয়াসে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল। ৯/১১-এর পর আমাদের সহযোগিতায় আল কায়েদা শেষ হয়েছে। পাকিস্তান এখন আফগানিস্তানিবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছে।
এতে একমাত্র প্রত্যাশা হলো, আফগানিস্তানের মাটি যেন পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে ব্যবহৃত না হয়। শান্তির প্রতি আঞ্চলিক গতি আরো বেগবান হতে পারে শান্তি সংলাপে পাকিস্তান ও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহিতকরণে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংলাপের মাধ্যমে ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলে আসছেন।
অধিকন্তু, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা কেবল আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমিত থাকা উচিত নয়, তা সঙ্ঘাত এলাকায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনার ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত। সমৃদ্ধিই দীর্ঘ মেয়াদি শান্তির নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।
দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে বর্ধিত সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তান হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, স্টিল স্ক্র্যাপ, সয়াবিন ও প্রযুক্তি পরিষেবার ক্রেতা, আর এসবের রফতানিকারক হলো যুক্তরাষ্ট্র। আবার পাকিস্তানি রফতানির বড় ক্ষেত্র হলো যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য সম্পর্কে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
জোরালো বন্ধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া, দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। এটি একটি দারুণ সুযোগ।
>>>লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
উভয় নেতাই বৈঠকের শুরুতেই একে অপরকে পছন্দ করে ফেলেন বলে মনে হয়েছে। দুজনেই ক্ষমতায় আসার আগেই ছিলেন সেলিব্রেটি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরিবর্তনের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। আর স্থিতিবস্থা গুঁড়িয়ে দিতে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইমরান খান গুটিকতেক এলিটের জন্য নয়, বরং সব নাগরিকের জন্য নয়া পাকিস্তান গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের থিমও একই। দুই নেতার কেউই আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে আবদ্ধ না হয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না।
ইমরান খান ভালোভাবেই জানেন, আফগানিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি ভালোভাবেই সচেতন রয়েছেন যে ট্রাম্প উত্তরাধিকার সূত্রে এই যন্ত্রণাদায়ক সঙ্ঘাত পেয়েছেন। নানা সমালোচনার মধ্যেও ট্রাম্প শান্তির পথে সাহসী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে সুফল দেখা যাচ্ছে। অনেক চ্যলেঞ্জ রয়ে গেলেও শান্তির সম্ভাবনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উজ্জ্বল বলে মনে হয়েছে।
ইমরান খান ভালোভাবেই জানেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে হলে, পারস্পরিকভাবে কল্যাণকর নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নির্মাণ করতে হলে আফগান সঙ্ঘাতের স্থায়ী সমাধান অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।
তবে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাকিস্তানি প্রয়াসকে যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করার চেষ্টা বলে ভুল ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না। পাকিস্তান নিজের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্যই এটা করছে। একটি শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান হবে পাকিস্তানের নিজের সীমিত সম্পদ তার নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারা।
শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। ৯/১১-এর পর থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিযে ৭০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক প্রাণ দিয়েছেন। এই সময়কালে অর্থনীতিতে সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরোক্ষ মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে বিপুল পরিমাণে ক্ষতি করে।
সন্ত্রাস দমন করার জন্য আফগান সীমান্তের উপজাতীয় এলাকাগুলোতে প্রায় দুই লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। বিশ্বে এটিই বৃহত্তম সন্ত্রাসবিরোধী প্রয়াস। ব্যয়বহুল ও বেদনাদায়ক সামরিক অভিযানের ফলে পাকিস্তান এখন অনেক বেশি নিরাপদ। সন্ত্রাসী ঘটনা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৪ সালের পর থেকে বেসামরিক মৃত্যু ৮০ ভাগের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে সাবেক উপজাতীয় এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নেই। রাজনৈতিকভাবে এসব উপজাতীয় এলাকাকে খাইবার পাকতুনখাওয়ার সাথে একীভূত করা হয়েছে। এখন রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল ও মার্কেট বানানোর কাজ চলছে।
পাকিস্তানের অনন্য কৃতিত্ব হলো এই যে সে কেবল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইই করেনি, সে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির সম্মিলিত ব্যবহার করে এতে জয়ীও হয়েছে। পাকিস্তানি মডেল প্রয়োগ করে আফগানিস্তানেও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
মুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র প্রয়াসে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল। ৯/১১-এর পর আমাদের সহযোগিতায় আল কায়েদা শেষ হয়েছে। পাকিস্তান এখন আফগানিস্তানিবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছে।
এতে একমাত্র প্রত্যাশা হলো, আফগানিস্তানের মাটি যেন পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে ব্যবহৃত না হয়। শান্তির প্রতি আঞ্চলিক গতি আরো বেগবান হতে পারে শান্তি সংলাপে পাকিস্তান ও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহিতকরণে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংলাপের মাধ্যমে ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলে আসছেন।
অধিকন্তু, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা কেবল আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমিত থাকা উচিত নয়, তা সঙ্ঘাত এলাকায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনার ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত। সমৃদ্ধিই দীর্ঘ মেয়াদি শান্তির নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।
দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে বর্ধিত সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তান হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, স্টিল স্ক্র্যাপ, সয়াবিন ও প্রযুক্তি পরিষেবার ক্রেতা, আর এসবের রফতানিকারক হলো যুক্তরাষ্ট্র। আবার পাকিস্তানি রফতানির বড় ক্ষেত্র হলো যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য সম্পর্কে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
জোরালো বন্ধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া, দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। এটি একটি দারুণ সুযোগ।
>>>লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments