সরজমিন: মুগদা হাসপাতাল, সিরিয়াল পেতেই পাঁচ দিন by পিয়াস সরকার
দুপুর
২টা। রাজধানীর ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। যেটি মুগদা
হাসপাতাল নামেই পরিচিত। হাসপাতালটির দোতলায় রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য
অপেক্ষা করছিলেন হযরত আলী। তার স্ত্রীর নাম শেফালি বেগম। বয়স ২৪। গত ৭ দিন
ধরে জ্বরে ভুগছেন তিনি। রোববার স্ত্রীকে নিয়ে আসেন এই হাসপাতালে।
কিন্তু রোগীর এত চাপ যে পরীক্ষা করার জো নেই। ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাকে। হযরত আলী পেশায় রিকশাচালক।
তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাদের ঘরে রয়েছে আড়াই বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান। হযরত আলী প্রতিদিন সিরিয়ালের জন্য আসতেন হাসপাতালে। অবশেষে বুধবার পান সিরিয়াল। সকাল ৯টায় রক্ত দেবার পর ফলাফল দেবার কথা ছিলো দুপুর ১২টায়। দুপুর ২টার সময়ে সেই ফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন এক এক করে ডাকা হচ্ছিল নাম। আর প্রায় কয়েকশ’ লোকের অপেক্ষা সেই ডাকের।
হযরত আলীর কাছে থাকা রশিদে চারটি পরীক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে। Dengue NS-1। এই পরীক্ষার জন্য রাখা হয়নি কোন টাকা। এছাড়াও রয়েছে CBS (১৫০ টাকা), Widal (৮০), Urine for R/ M/E (২০ টাকা)। সর্বমোট ২৫০ টাকা। তাকে এই রশিদের বাইরে বাড়তি কোন টাকা গুণতে হয়নি।
আমেনা বেগম। চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। থাকেন জামালপুরে। ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে এসেছেন ঢাকায়। ছেলের নাম হাফিজুল ইসলাম। বয়স ৩২। রক্ত পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই নাতীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার ছেলে ৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তারও সিরিয়াল পেতে সময় লেগেছে ৪দিন। তার ছেলে থাকেন কমলাপুর রেলওয়ে কলোনীতে।
একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেন হাসান আলী। তিনি থাকেন মানিকনগরে। ৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তাকে ৫দিন অপেক্ষা করে ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে। কারণ একটাই সিরিয়াল মেলেনি। তিনি প্রায় সুস্থ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আজকেই ছেড়ে দেয়া হবে তাকে।
এই সিরিয়াল পাওয়ার ভোগান্তির কথা বলেন আরো অনেকে। প্রত্যেকেরই সময় লেগেছে ৪ থেকে ৫ দিন করে। এর কারণ হিসেবে হাসপাতালটির ল্যাবের দায়িত্বে থাকা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন গুণ রক্ত পরীক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা কোন বিশ্রাম ছাড়া কাজ করে যাচ্ছি।
হাসপাতাল জুড়েই ডেঙ্গু রোগীদের ভিড়। মেডিসিন ওয়ার্ডে তিল ধারণের জায়গা নেই। বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩৯ জন। মারা গেছেন ২ জন। এর মধ্যে মোছা. নাছিমা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫ই আগস্ট। ৪২ বছর বয়সী মো. হানিফ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২রা আগস্ট থেকে।
হাসপাতালটিতে ঘুরে দখো যায়- সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীদের আনাগোনা। স্বজনদের চোখে শঙ্কা। মেডিসিন ওয়ার্ড হাসপাতালের ৯ তলায়। ১ বছর বয়সী সন্তানকে কোলে করে নিচে পানি আনতে যাচ্ছিলেন নাসরিন আক্তার। হঠাৎ ৩ তলা আসতেই মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন। সিঁড়িতে অন্যরা তাকে ধরে সেখানে বসিয়েই মাথায় পানি ঢালেন। কথা বলে জানা যায়, চারদিন ধরে তার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি। ঢাকায় থাকেন তারা একাই। তিনি ছাড়া আর কেউ নেই দেখাশুনা করার। আবার ছোট বাচ্চা। ঘুমানোর কোন অবকাশ পান না। সন্তান ও স্বামীকে দেখে রাখতে হয় দিন রাত এক করে।
মেডিসিন ওয়ার্ডে যেতেই শোনা যায় কান্নার রোল। একজন রোগীকে ঘিরে রয়েছেন স্বজনরা ও সেই সঙ্গে দেখা মেলে দুইজন সেবিকাকে। সেখানেও একই ঘটনা মাথা ঘুরে পরে গেছেন। তবে এবার পড়ে গেছেন রোগী মারিয়া আক্তার। তিনি গিয়েছিলেন টয়লেটে। সেখানে পড়ে যান। হাতে লাগানো ক্যানোলা দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। আর ব্যাথা পান মাথাতেও। তার চার বছর বয়সী ছেলে ও মায়ের কান্নায় স্তব্ধ চারপাশ। মারিয়ার স্বামী, সেবিকা ও আশেপাশের লোকজনও থামাতে পারছিলেন না কান্না।
এই হাসপাতালে ৫শ’ শয্যা হলেও বাড়তি ১শ’ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। মুগদা হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাও বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
কিন্তু রোগীর এত চাপ যে পরীক্ষা করার জো নেই। ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাকে। হযরত আলী পেশায় রিকশাচালক।
তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাদের ঘরে রয়েছে আড়াই বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান। হযরত আলী প্রতিদিন সিরিয়ালের জন্য আসতেন হাসপাতালে। অবশেষে বুধবার পান সিরিয়াল। সকাল ৯টায় রক্ত দেবার পর ফলাফল দেবার কথা ছিলো দুপুর ১২টায়। দুপুর ২টার সময়ে সেই ফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন এক এক করে ডাকা হচ্ছিল নাম। আর প্রায় কয়েকশ’ লোকের অপেক্ষা সেই ডাকের।
হযরত আলীর কাছে থাকা রশিদে চারটি পরীক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে। Dengue NS-1। এই পরীক্ষার জন্য রাখা হয়নি কোন টাকা। এছাড়াও রয়েছে CBS (১৫০ টাকা), Widal (৮০), Urine for R/ M/E (২০ টাকা)। সর্বমোট ২৫০ টাকা। তাকে এই রশিদের বাইরে বাড়তি কোন টাকা গুণতে হয়নি।
আমেনা বেগম। চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। থাকেন জামালপুরে। ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে এসেছেন ঢাকায়। ছেলের নাম হাফিজুল ইসলাম। বয়স ৩২। রক্ত পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই নাতীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার ছেলে ৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তারও সিরিয়াল পেতে সময় লেগেছে ৪দিন। তার ছেলে থাকেন কমলাপুর রেলওয়ে কলোনীতে।
একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেন হাসান আলী। তিনি থাকেন মানিকনগরে। ৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তাকে ৫দিন অপেক্ষা করে ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে। কারণ একটাই সিরিয়াল মেলেনি। তিনি প্রায় সুস্থ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আজকেই ছেড়ে দেয়া হবে তাকে।
এই সিরিয়াল পাওয়ার ভোগান্তির কথা বলেন আরো অনেকে। প্রত্যেকেরই সময় লেগেছে ৪ থেকে ৫ দিন করে। এর কারণ হিসেবে হাসপাতালটির ল্যাবের দায়িত্বে থাকা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন গুণ রক্ত পরীক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা কোন বিশ্রাম ছাড়া কাজ করে যাচ্ছি।
হাসপাতাল জুড়েই ডেঙ্গু রোগীদের ভিড়। মেডিসিন ওয়ার্ডে তিল ধারণের জায়গা নেই। বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩৯ জন। মারা গেছেন ২ জন। এর মধ্যে মোছা. নাছিমা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫ই আগস্ট। ৪২ বছর বয়সী মো. হানিফ হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২রা আগস্ট থেকে।
হাসপাতালটিতে ঘুরে দখো যায়- সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীদের আনাগোনা। স্বজনদের চোখে শঙ্কা। মেডিসিন ওয়ার্ড হাসপাতালের ৯ তলায়। ১ বছর বয়সী সন্তানকে কোলে করে নিচে পানি আনতে যাচ্ছিলেন নাসরিন আক্তার। হঠাৎ ৩ তলা আসতেই মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন। সিঁড়িতে অন্যরা তাকে ধরে সেখানে বসিয়েই মাথায় পানি ঢালেন। কথা বলে জানা যায়, চারদিন ধরে তার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি। ঢাকায় থাকেন তারা একাই। তিনি ছাড়া আর কেউ নেই দেখাশুনা করার। আবার ছোট বাচ্চা। ঘুমানোর কোন অবকাশ পান না। সন্তান ও স্বামীকে দেখে রাখতে হয় দিন রাত এক করে।
মেডিসিন ওয়ার্ডে যেতেই শোনা যায় কান্নার রোল। একজন রোগীকে ঘিরে রয়েছেন স্বজনরা ও সেই সঙ্গে দেখা মেলে দুইজন সেবিকাকে। সেখানেও একই ঘটনা মাথা ঘুরে পরে গেছেন। তবে এবার পড়ে গেছেন রোগী মারিয়া আক্তার। তিনি গিয়েছিলেন টয়লেটে। সেখানে পড়ে যান। হাতে লাগানো ক্যানোলা দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। আর ব্যাথা পান মাথাতেও। তার চার বছর বয়সী ছেলে ও মায়ের কান্নায় স্তব্ধ চারপাশ। মারিয়ার স্বামী, সেবিকা ও আশেপাশের লোকজনও থামাতে পারছিলেন না কান্না।
এই হাসপাতালে ৫শ’ শয্যা হলেও বাড়তি ১শ’ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। মুগদা হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাও বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
No comments