কাশ্মির: পরাশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের এখনই সময় by ইমাদ জাফর
একসময়
শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য ও শান্তিপ্রিয় জনগণের জন্য পরিচিত সুন্দর উপত্যকা
কাশ্মির এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত
হয়েছে। উপত্যকাটি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত। ফলে স্বাধীন পাকিস্তান ও
ভারত হওয়ার অনেক আগে থেকে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা লোকজন এখন বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়েছে। চলতি সপ্তাহে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতীয় সংবিধানের ধারা
৩৭০ বাতিল করেছে। এই ধারার ফলেই মুসলিম প্রাধান্যবিশিষ্ট ভারতীয় কাশ্মির
ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত।
ভারত সরকার কাশ্মির রাজ্যের মর্যাদা পরিবর্তন করে একে কেন্দ্র শাসিত ভূখণ্ড হিসেবে একটি বিল পার্লামেন্টে পেশ করেছে। ভারতে রাজ্য সরকারগুলো স্থানীয় ইস্যুগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। কিন্তু কেন্দ্র শাসিত ভূখণ্ডে নয়া দিল্লিই সব বিষয় তদারকি করে। বিজেপির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাস হয়ে গেছে। এছাড়া সংবিধানের ধারা ৩৫-ক ধারাও বাতিল করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী কেবল স্থানীয় কাশ্মিরিরাই সেখানকার জমি ও ব্যবসা কেনার অধিকারী ছিল। এখন থেকে ভারতের বাকি অংশের লোকজন কাশ্মিরে জমি কিনতে পারবে, ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।
কাশ্মিরিরা এই পদক্ষেপকে রাজ্যের জনচিত্র পরিবর্তনের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা আশঙ্কা করছে, অকাশ্মিরিরা এসে কাশ্মিরে ব্যবসা করবে, শিগগিরই কাশ্মির মুসলিম সংখ্যালঘু এলাকায় পরিণত হবে। বিজেপি লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মির থেকে আলাদা করার পরিকল্পনা করছে। লাদাখ হলো স্বল্প জনবসতির এলাকা। এখানকার বেশির ভাগ লোক বৌদ্ধ ও হিন্দু।
উগ্র হিন্দু জাতীয়বাদের ভাষ্য নিয়ে বিজেপি চলতি বছর পুনঃনির্বাচিত হয়। দলটির নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, জয়ী হলে তিনি ধারা ৩৭০ বাতিল করবেন। তবে তিনি যেভাবে এ কাজটি করলেন তাতে নৈতিক ও আইনগত ব্যাপার নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য বিজেপির প্রয়োজন ছিল জম্মু ও কাশ্মিরের বিধান সভায় ধারা ৩৭০ বাতিল অনুমোদন করার একটি বিল। কিন্তু গত বছর বিজেপি জম্মু ও কাশ্মিরে তার জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সরকারের পতন ঘটে। রাজ্যটি এখন গভর্নরের মাধ্যমে শাসিত হচ্ছে। ফলে পদক্ষেপটি সুপ্রিম কোর্টে নেয়া হলে সেখানে তা বাতিল হতে পারে। তবে বিচক্ষণ বিজেপি নেতারা জানেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে তারা প্রতিকারের ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবেন। বিশেষ করে অকাশ্মিরিরা জমি ও ব্যবসা কিনে ফেলতে পারবে। আদালত তাদের সরিয়ে দিতে পারবে না। কারণ তখন রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবে।
নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি চতুরভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলেও তারা এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের প্রতিক্রিয়া জানানোর শক্তির অবমূল্যায়ন করেছে। বর্তমানে কাশ্মির উপত্যকায় কারফিউয়ের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতের আধাসামরিক সদস্যরা রাস্তায় রাস্তা টহল দিচ্ছে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছে। কাশ্মিরের জনগণের প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।
কড়াকড়ি হ্রাস পাওয়ামাত্র কাশ্মিরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা মোদি সরকারের জন্য হবে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো, বিভক্তির সময় কাশ্মিরের শাসকেরা স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাশ্মিরের দখল প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় শাসকেরা ভারতের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এই শর্তে যে নয়া দিল্লি তাদেরকে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দেবে। মোদির সাম্প্রতিক পদক্ষেপে তার সমর্থকেরা খুশি হলেও এর মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দীর্ঘ দিনের একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করল।
কাশ্মির সবসময়ই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধের একটি বিষয়। এটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকরণ করা এলাকা। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে কিছু কিছু কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখলেও উভয় দেশই পুরো কাশ্মির দাবি করে। কাশ্মির দীর্ঘ দিন ধরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর নৃশংস আচরণের শিকার হয়ে আসছে।
আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে কাশ্মির থেকে ব্যাপক সংখ্যায় হিন্দুদের সরে যাওয়া। ইসলামি বিদ্রোহীদের কারণে তারা পালিয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী স্লোগানগুলো অব্যাহতভাবে শোনা যায়। ফলে মোদি কার্যত আগুন নিয়ে খেলছেন।
ভারত ও পাকিস্তানি সৈন্যরা ইতোমধ্যেই কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধের অবস্থায় রয়েছে। কোন পক্ষ আগ্রাসী তা চিহ্নিত না করেই বলা যায়, এর নির্মম শিকার হচ্ছে নিরীহ কাশ্মিরিরা।
এখন সময় এসেছে পরাশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ করার ও দীর্ঘ দিন ধরে চলা যুদ্ধ থেকে কাশ্মিরকে রক্ষা করার। জাতিসংঘের উচিত হবে ধারা ৩৭০ রদের নিন্দা করা এবং ধর্ম ও জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের নামে কাশ্মিরিদের আরো নির্যাতন থেকে মোদিকে বিরত রাখা।
ভারত সরকার কাশ্মির রাজ্যের মর্যাদা পরিবর্তন করে একে কেন্দ্র শাসিত ভূখণ্ড হিসেবে একটি বিল পার্লামেন্টে পেশ করেছে। ভারতে রাজ্য সরকারগুলো স্থানীয় ইস্যুগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। কিন্তু কেন্দ্র শাসিত ভূখণ্ডে নয়া দিল্লিই সব বিষয় তদারকি করে। বিজেপির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাস হয়ে গেছে। এছাড়া সংবিধানের ধারা ৩৫-ক ধারাও বাতিল করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী কেবল স্থানীয় কাশ্মিরিরাই সেখানকার জমি ও ব্যবসা কেনার অধিকারী ছিল। এখন থেকে ভারতের বাকি অংশের লোকজন কাশ্মিরে জমি কিনতে পারবে, ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।
কাশ্মিরিরা এই পদক্ষেপকে রাজ্যের জনচিত্র পরিবর্তনের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা আশঙ্কা করছে, অকাশ্মিরিরা এসে কাশ্মিরে ব্যবসা করবে, শিগগিরই কাশ্মির মুসলিম সংখ্যালঘু এলাকায় পরিণত হবে। বিজেপি লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মির থেকে আলাদা করার পরিকল্পনা করছে। লাদাখ হলো স্বল্প জনবসতির এলাকা। এখানকার বেশির ভাগ লোক বৌদ্ধ ও হিন্দু।
উগ্র হিন্দু জাতীয়বাদের ভাষ্য নিয়ে বিজেপি চলতি বছর পুনঃনির্বাচিত হয়। দলটির নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, জয়ী হলে তিনি ধারা ৩৭০ বাতিল করবেন। তবে তিনি যেভাবে এ কাজটি করলেন তাতে নৈতিক ও আইনগত ব্যাপার নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য বিজেপির প্রয়োজন ছিল জম্মু ও কাশ্মিরের বিধান সভায় ধারা ৩৭০ বাতিল অনুমোদন করার একটি বিল। কিন্তু গত বছর বিজেপি জম্মু ও কাশ্মিরে তার জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সরকারের পতন ঘটে। রাজ্যটি এখন গভর্নরের মাধ্যমে শাসিত হচ্ছে। ফলে পদক্ষেপটি সুপ্রিম কোর্টে নেয়া হলে সেখানে তা বাতিল হতে পারে। তবে বিচক্ষণ বিজেপি নেতারা জানেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে তারা প্রতিকারের ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবেন। বিশেষ করে অকাশ্মিরিরা জমি ও ব্যবসা কিনে ফেলতে পারবে। আদালত তাদের সরিয়ে দিতে পারবে না। কারণ তখন রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবে।
নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি চতুরভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলেও তারা এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের প্রতিক্রিয়া জানানোর শক্তির অবমূল্যায়ন করেছে। বর্তমানে কাশ্মির উপত্যকায় কারফিউয়ের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতের আধাসামরিক সদস্যরা রাস্তায় রাস্তা টহল দিচ্ছে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছে। কাশ্মিরের জনগণের প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।
কড়াকড়ি হ্রাস পাওয়ামাত্র কাশ্মিরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা মোদি সরকারের জন্য হবে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো, বিভক্তির সময় কাশ্মিরের শাসকেরা স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাশ্মিরের দখল প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় শাসকেরা ভারতের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এই শর্তে যে নয়া দিল্লি তাদেরকে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দেবে। মোদির সাম্প্রতিক পদক্ষেপে তার সমর্থকেরা খুশি হলেও এর মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দীর্ঘ দিনের একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করল।
কাশ্মির সবসময়ই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধের একটি বিষয়। এটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকরণ করা এলাকা। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে কিছু কিছু কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখলেও উভয় দেশই পুরো কাশ্মির দাবি করে। কাশ্মির দীর্ঘ দিন ধরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর নৃশংস আচরণের শিকার হয়ে আসছে।
আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে কাশ্মির থেকে ব্যাপক সংখ্যায় হিন্দুদের সরে যাওয়া। ইসলামি বিদ্রোহীদের কারণে তারা পালিয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী স্লোগানগুলো অব্যাহতভাবে শোনা যায়। ফলে মোদি কার্যত আগুন নিয়ে খেলছেন।
ভারত ও পাকিস্তানি সৈন্যরা ইতোমধ্যেই কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধের অবস্থায় রয়েছে। কোন পক্ষ আগ্রাসী তা চিহ্নিত না করেই বলা যায়, এর নির্মম শিকার হচ্ছে নিরীহ কাশ্মিরিরা।
এখন সময় এসেছে পরাশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ করার ও দীর্ঘ দিন ধরে চলা যুদ্ধ থেকে কাশ্মিরকে রক্ষা করার। জাতিসংঘের উচিত হবে ধারা ৩৭০ রদের নিন্দা করা এবং ধর্ম ও জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের নামে কাশ্মিরিদের আরো নির্যাতন থেকে মোদিকে বিরত রাখা।
No comments