বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর সাফল্য: এক ওষুধেই বহু ভাইরাস দমন!
অঙ্কোটার্গেট জার্নালের মে সংখ্যার প্রচ্ছদ |
বর্ষাকাল। বৃষ্টি কম হোক আর বেশি হোক, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বিশেষত
জলাবদ্ধতাই এ মৌসুমের একমাত্র বাস্তবতা। আর বদ্ধ জল মানেই মশার উত্তম
প্রজননক্ষেত্র, যা অবধারিতভাবেই নিয়ে আসে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। গত কয়েক
বছরে বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ মাত্রায় গিয়ে
পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসকে (ডিইএনভি) প্রতিহত করতে পারে—এমন
কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে অচিরেই সে রকম ওষুধ ধরা দিতে পারে মানুষের
হাতে, যা শুধু ডেঙ্গু নয়, এমন বহু ভাইরাসকে আক্ষরিক অর্থেই নখদন্তহীন করে
দেবে। এমন একটি পথেরই সন্ধান দিয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী হেমায়েত উল্লাহ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হেমায়েত উল্লাহ বর্তমানে আমেরিকার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। সেখানেই একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা পান এমন এক পথের, যা শুধু ডেঙ্গু নয়, অনেক ভাইরাসজনিত রোগের ওষুধ তৈরির দিশা দিচ্ছে।
বিজ্ঞানী হেমায়েত উল্লাহর আবিষ্কৃত এ নতুন পথ এরই মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত ১৪ মে এ সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধটি অঙ্কোটার্গেট জার্নালের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম (টিভি চ্যানেল) ফক্স ফাইভের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর সাক্ষাৎকার।
বিষয়টি নিয়ে ড. হেমায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা হলো ই–মেইলের মাধ্যমে। তাঁর ভাষায়, ‘গবেষণাগারে আমরা একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন নিয়ে কাজ করছিলাম। পরে আবিষ্কার করি, এই একই প্রোটিন বহু ক্ষতিকর ভাইরাস পোষক–দেহে নিজের বিস্তৃতির জন্য ব্যবহার করে। মানুষের দেহেও এ প্রোটিন রয়েছে, যাকে ব্যবহার করে বহু ভাইরাস। বিষয়টি বোঝার পর আমরা এই প্রোটিনের কার্যক্রম প্রতিহত করতে একটি ওষুধ তৈরি করি, যাতে এটি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। গবেষণার প্রথম ধাপে আমরা সফল হয়েছি।’
ভাইরাসজনিত রোগের প্রচলিত ওষুধের একটি বড় সংকট হচ্ছে, এগুলো কিছু কিছু পোষক–দেহে অকার্যকর হয়ে যায়। বিষয়টি অনেকটা শত্রুর শক্তি বিচারে নিজের শক্তি বৃদ্ধির মতো। ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কোনো একটি ওষুধ তৈরির জন্য মানুষ যেমন ভাইরাসটি পর্যবেক্ষণ করে, তেমনি ভাইরাসটিও বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ওষুধের কাজের ধরন। নিজেকে অভিযোজিত করে ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে ওঠে ভাইরাসটি। ফলে অনেক সময়ই দেখা যায়, একসময় কার্যকর বিবেচিত হলেও পরে একই ভাইরাস দমনে ওষুধটি আর কাজ করছে না। এখানেই বিরাট ব্যতিক্রম হেমায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণালব্ধ পথটি। কারণ, এটি ভাইরাসকে নিয়ে নয়, পোষক–দেহের সেই বিভীষণকে নিয়ে কাজ করে, যা ঘরে বসেই ঘর ভাঙার কাজ করে।
হেমায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় কাজ করেছেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের দুই গবেষক কি ট্যাং ও সার্গেই নেখাই। তাঁরা রিসেপ্টর ফর অ্যাকটিভেটেড সি কিন্যাজ ওয়ান (র্যাক-১) নামের বিশেষ এ প্রোটিনের সন্ধান পান। এ প্রোটিন বেশ কিছু ভাইরাসকে বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এসব ভাইরাসের মধ্যে হেপাটাইটিস সি (এইচসিভি), পোলিও, ড্রোসোফিলা সি (ডিসিভি), ডেঙ্গু, ক্রিকেট প্যারালাইসিস, হারপেস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-১ (এইচএসভি-১) উল্লেখযোগ্য। গবেষকেরা এই র্যাক-১ প্রোটিনকে কার্যক্রম সীমায়িত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন।
হেমায়েত উল্লাহ ও তাঁর দল অ্যরাবিডোপসিস গণভুক্ত একটি গাছে র্যাক-১ প্রোটিনের অস্তিত্ব পায়। এই প্রোটিন নিয়েই তাঁরা কাজ শুরু করেন। প্রোটিনটির কাঠামো বিশ্লেষণ করে এর কার্যক্রম প্রতিহতের জন্য তাঁরা কিছু রাসায়নিকের ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা এইচএসভি-১ ভাইরাসকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ ক্ষেত্রে তাঁরা সাফল্য পান। তাঁরা এমন একটি যৌগ তৈরি করেছেন, যা ভাইরাসের সঙ্গে পোষক–দেহের র্যাক-১ প্রোটিনের যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করবে।
হেমায়েত উল্লাহ ও তাঁর দলের এ গবেষণালব্ধ ফলাফলকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা অ্যান্থনি কি উথের ভাষায়, ‘ড. (হেমায়েত) উল্লাহ ও তাঁর দল ভাইরাসরোধী ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি নিয়ে এসেছেন। বহু রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কাজে লাগবে বলে আমরা আশা করছি।’
নিজের গবেষণা নিয়ে বেশ আশাবাদী হেমায়েত উল্লাহ। অন্য যেকোনো ভাইরাসরোধী ওষুধের চেয়ে এটি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, ‘ভাইরাসজনিত রোগের প্রচলিত ওষুধগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট ভাইরাসটিকেই আক্রমণ করে। ফলে ভাইরাসটির পক্ষেও ওই ওষুধের সঙ্গে লড়াইয়ের শক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়। কারণ, সে জানে ওষুধটি কী করে কাজ করে। কিন্তু আমাদের পদ্ধতিতে ওষুধটি কাজ করবে পোষক–দেহের প্রোটিনকে নিয়ে। র্যাক-১ প্রোটিনের সঙ্গে ভাইরাসের যোগাযোগ বন্ধ করাই এর লক্ষ্য। ফলে ভাইরাসটির পক্ষে এ ওষুধের ক্রিয়াপদ্ধতি বোঝাটা প্রায় অসম্ভব।’
হেমায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এ পদ্ধতির প্রয়োগে একটি কার্যকর ওষুধ তৈরি সম্ভব হলে তা শুধু একটি ভাইরাস নয়, বরং অনেক ভাইরাসকেই প্রতিহত করতে পারবে। এখনো এটি প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। কোনো প্রাণীর দেহে প্রয়োগের পরই এর কার্যকারিতা ভালোভাবে বোঝা যাবে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যেই একটি সফল ভাইরাসরোধী ওষুধ নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হেমায়েত উল্লাহ বর্তমানে আমেরিকার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। সেখানেই একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা পান এমন এক পথের, যা শুধু ডেঙ্গু নয়, অনেক ভাইরাসজনিত রোগের ওষুধ তৈরির দিশা দিচ্ছে।
বিজ্ঞানী হেমায়েত উল্লাহর আবিষ্কৃত এ নতুন পথ এরই মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত ১৪ মে এ সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধটি অঙ্কোটার্গেট জার্নালের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম (টিভি চ্যানেল) ফক্স ফাইভের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর সাক্ষাৎকার।
বিষয়টি নিয়ে ড. হেমায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা হলো ই–মেইলের মাধ্যমে। তাঁর ভাষায়, ‘গবেষণাগারে আমরা একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন নিয়ে কাজ করছিলাম। পরে আবিষ্কার করি, এই একই প্রোটিন বহু ক্ষতিকর ভাইরাস পোষক–দেহে নিজের বিস্তৃতির জন্য ব্যবহার করে। মানুষের দেহেও এ প্রোটিন রয়েছে, যাকে ব্যবহার করে বহু ভাইরাস। বিষয়টি বোঝার পর আমরা এই প্রোটিনের কার্যক্রম প্রতিহত করতে একটি ওষুধ তৈরি করি, যাতে এটি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। গবেষণার প্রথম ধাপে আমরা সফল হয়েছি।’
ভাইরাসজনিত রোগের প্রচলিত ওষুধের একটি বড় সংকট হচ্ছে, এগুলো কিছু কিছু পোষক–দেহে অকার্যকর হয়ে যায়। বিষয়টি অনেকটা শত্রুর শক্তি বিচারে নিজের শক্তি বৃদ্ধির মতো। ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কোনো একটি ওষুধ তৈরির জন্য মানুষ যেমন ভাইরাসটি পর্যবেক্ষণ করে, তেমনি ভাইরাসটিও বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ওষুধের কাজের ধরন। নিজেকে অভিযোজিত করে ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে ওঠে ভাইরাসটি। ফলে অনেক সময়ই দেখা যায়, একসময় কার্যকর বিবেচিত হলেও পরে একই ভাইরাস দমনে ওষুধটি আর কাজ করছে না। এখানেই বিরাট ব্যতিক্রম হেমায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণালব্ধ পথটি। কারণ, এটি ভাইরাসকে নিয়ে নয়, পোষক–দেহের সেই বিভীষণকে নিয়ে কাজ করে, যা ঘরে বসেই ঘর ভাঙার কাজ করে।
হেমায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় কাজ করেছেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের দুই গবেষক কি ট্যাং ও সার্গেই নেখাই। তাঁরা রিসেপ্টর ফর অ্যাকটিভেটেড সি কিন্যাজ ওয়ান (র্যাক-১) নামের বিশেষ এ প্রোটিনের সন্ধান পান। এ প্রোটিন বেশ কিছু ভাইরাসকে বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এসব ভাইরাসের মধ্যে হেপাটাইটিস সি (এইচসিভি), পোলিও, ড্রোসোফিলা সি (ডিসিভি), ডেঙ্গু, ক্রিকেট প্যারালাইসিস, হারপেস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-১ (এইচএসভি-১) উল্লেখযোগ্য। গবেষকেরা এই র্যাক-১ প্রোটিনকে কার্যক্রম সীমায়িত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন।
হেমায়েত উল্লাহ ও তাঁর দল অ্যরাবিডোপসিস গণভুক্ত একটি গাছে র্যাক-১ প্রোটিনের অস্তিত্ব পায়। এই প্রোটিন নিয়েই তাঁরা কাজ শুরু করেন। প্রোটিনটির কাঠামো বিশ্লেষণ করে এর কার্যক্রম প্রতিহতের জন্য তাঁরা কিছু রাসায়নিকের ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা এইচএসভি-১ ভাইরাসকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ ক্ষেত্রে তাঁরা সাফল্য পান। তাঁরা এমন একটি যৌগ তৈরি করেছেন, যা ভাইরাসের সঙ্গে পোষক–দেহের র্যাক-১ প্রোটিনের যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করবে।
হেমায়েত উল্লাহ ও তাঁর দলের এ গবেষণালব্ধ ফলাফলকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা অ্যান্থনি কি উথের ভাষায়, ‘ড. (হেমায়েত) উল্লাহ ও তাঁর দল ভাইরাসরোধী ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি নিয়ে এসেছেন। বহু রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কাজে লাগবে বলে আমরা আশা করছি।’
নিজের গবেষণা নিয়ে বেশ আশাবাদী হেমায়েত উল্লাহ। অন্য যেকোনো ভাইরাসরোধী ওষুধের চেয়ে এটি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, ‘ভাইরাসজনিত রোগের প্রচলিত ওষুধগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট ভাইরাসটিকেই আক্রমণ করে। ফলে ভাইরাসটির পক্ষেও ওই ওষুধের সঙ্গে লড়াইয়ের শক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়। কারণ, সে জানে ওষুধটি কী করে কাজ করে। কিন্তু আমাদের পদ্ধতিতে ওষুধটি কাজ করবে পোষক–দেহের প্রোটিনকে নিয়ে। র্যাক-১ প্রোটিনের সঙ্গে ভাইরাসের যোগাযোগ বন্ধ করাই এর লক্ষ্য। ফলে ভাইরাসটির পক্ষে এ ওষুধের ক্রিয়াপদ্ধতি বোঝাটা প্রায় অসম্ভব।’
হেমায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এ পদ্ধতির প্রয়োগে একটি কার্যকর ওষুধ তৈরি সম্ভব হলে তা শুধু একটি ভাইরাস নয়, বরং অনেক ভাইরাসকেই প্রতিহত করতে পারবে। এখনো এটি প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। কোনো প্রাণীর দেহে প্রয়োগের পরই এর কার্যকারিতা ভালোভাবে বোঝা যাবে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যেই একটি সফল ভাইরাসরোধী ওষুধ নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
আমেরিকার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেমায়েত উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত |
No comments