বাংলাদেশি আহমেদ হোসেনকে গ্রেপ্তার: তিন দশকেও মেলেনি গ্রিনকার্ড by ইব্রাহীম চৌধুরী
স্ত্রী–সন্তানসহ আহমেদ হোসেন |
নিউইয়র্কে
বাংলাদেশি জনসমাজের পরিচিত ও প্রিয়মুখ আহমেদ হোসেন বাবুকে ইমিগ্রেশন পুলিশ
গ্রেপ্তার করেছে। প্রায় তিন দশকের প্রবাস জীবনে তিনি ইমিগ্রেশন নিয়ে
জটিলতায় ছিলেন। ১৮ জুন বুধবার ইমিগ্রেশন আদালতে গেলে আইস পুলিশ তাঁকে
গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের ডিপোর্টেরশন অর্ডার বা বহিস্কারের
আদেশ ছিল।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহমেদ হোসেনকে নিউজার্সির ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ এই বাংলাদেশির সঙ্গে তাঁর পরিবারকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। দুই কিশোর সন্তান নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী তুহিন সেলিনা আখতার। জানিয়েছেন, কিশোর ছেলে (১৫) কিছুটা জানলেও মেয়ে শান্তির (৯) বাবার গ্রেপ্তার সম্পর্কে এখনো কিছু জানা বা বোঝার মতো জ্ঞান হয়নি।
এক সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহমেদ হোসেনের(৫৮) দেশের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। তাঁর পরিবার ঢাকার মিরপুরে থাকেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে ১৯৯১ সালের দিকে তিনি আমেরিকায় আসেন। আমেরিকার নানা ইমিগ্রেশন কর্মসূচির ফাঁদে পড়ে তাঁর গ্রিনকার্ড হয়নি। উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার হয়েছে। মার্কিন নাগরিক সেলিনা আখতারকে বিয়ে করলেও আইনি জটিলতায় তাঁর গ্রিনকার্ড প্রাপ্তি দুরূহ হয়ে উঠে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশে যেতে পারছেন না আহমেদ হোসেন। অনেক স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াতেন। কবিতা লেখা ছাড়াও চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করেন তিনি। নিউইয়র্কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখা যায়। একসময় তাঁকে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এক সময় তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য বিভাগেও কাজ করেন। সম্প্রতি তাঁকে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে আমেরিকা ছাড়ার চূড়ান্ত নোটিশ দিলে তিনি এখানকার কাজকর্ম গুটিয়ে নেন। আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি কানাডায় অভিবাসনের চেষ্টায় ছিলেন।
এরই মধ্যে আইনজীবীর পরামর্শে ডিপোর্টেশন প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে আহমেদ হোসেন আবার আদালতে গেলে গ্রেপ্তারের মুখে পড়েন। গত সপ্তাহেই বাবু জানিয়েছিলেন, প্রায় সব আইনজীবীই পরামর্শ দিয়েছেন আমেরিকায় তাঁর ইমিগ্রেশন হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। ডিপোর্টেশন আদেশ প্রত্যাহারের একাধিক উদ্যোগ আদালত প্রত্যাখ্যানের পর নতুন করে আর সুযোগ নেই ।
আহমেদ হোসেনের স্ত্রী তুহিন সেলিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯ জুন বুধবার আদালতে যাওয়ার আগে তিনি কাউকে জানাননি। কেন, কার পরামর্শে গেলেন তাও জানা যায়নি। আইনজীবীদের ব্যয়বহুল অপপরামর্শের বলি হলেন কি না, সেটি এখন প্রশ্ন।’
আহমেদ হোসেন এমনিতেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করেছেন। সদ্য সমাপ্ত নিউইয়র্ক বইমেলায় যোগ দিয়েছেন। নিজের লেখা বই বিক্রি করেছেন। নিজের অস্থিরতা নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক কবিতার কিছু লাইন ছিল এ রকম...
‘আমি তাজ্জব হয়ে জীবনের তারামৃগ খুঁজি আর।
চোখের কার্নিশে লোহিতসাগর লোনাজল নিয়ে।
আমার প্রিয় জন্মভূমি তোমাকে দেখি...।’
কুইন্সের উডহ্যাভেন এলাকায় নিজের বাড়িতে থাকতেন আহমেদ হোসে। সন্তানদের দেখভাল, বাড়ির মর্টগেজ, ভাড়াটে সামাল দেওয়া—সবকিছু তিনি নিজেই করতেন বলে তাঁর স্ত্রী জানালেন। ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর তিনি ফোন করে তাঁর ওষুধ পাঠানোর কথা জানান। তাঁকে আর কোন যোগাযোগও করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনজীবীর কাছে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ডিটেনশন সেন্টারে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগহীন আহমেদ হোসেনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলেই জানান তাঁর স্ত্রী।
নিউইয়র্কে ইমিগ্রেশন নিয়ে কর্মরত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর বলেন, আহমেদ হোসেন তাঁর সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করে পরামর্শ চেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তাঁকে পরামর্শ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন খুব সতর্ক চলাফেরা করেন এবং তাঁর ডিপোর্টেশন আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই বলেও তাঁরা পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এখন তাঁর কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তারের পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে এখন আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপে কোন সুফলের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, যাদের নামে কোন ডিপোর্টেশন অর্ডার আছে, তাদের চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে। ইমিগ্রেশনের জন্য আমেরিকার বর্তমান বাস্তবতা খুব অনুকুল নয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহমেদ হোসেনকে নিউজার্সির ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ এই বাংলাদেশির সঙ্গে তাঁর পরিবারকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। দুই কিশোর সন্তান নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী তুহিন সেলিনা আখতার। জানিয়েছেন, কিশোর ছেলে (১৫) কিছুটা জানলেও মেয়ে শান্তির (৯) বাবার গ্রেপ্তার সম্পর্কে এখনো কিছু জানা বা বোঝার মতো জ্ঞান হয়নি।
এক সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহমেদ হোসেনের(৫৮) দেশের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। তাঁর পরিবার ঢাকার মিরপুরে থাকেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে ১৯৯১ সালের দিকে তিনি আমেরিকায় আসেন। আমেরিকার নানা ইমিগ্রেশন কর্মসূচির ফাঁদে পড়ে তাঁর গ্রিনকার্ড হয়নি। উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার হয়েছে। মার্কিন নাগরিক সেলিনা আখতারকে বিয়ে করলেও আইনি জটিলতায় তাঁর গ্রিনকার্ড প্রাপ্তি দুরূহ হয়ে উঠে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশে যেতে পারছেন না আহমেদ হোসেন। অনেক স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াতেন। কবিতা লেখা ছাড়াও চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করেন তিনি। নিউইয়র্কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখা যায়। একসময় তাঁকে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এক সময় তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য বিভাগেও কাজ করেন। সম্প্রতি তাঁকে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে আমেরিকা ছাড়ার চূড়ান্ত নোটিশ দিলে তিনি এখানকার কাজকর্ম গুটিয়ে নেন। আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি কানাডায় অভিবাসনের চেষ্টায় ছিলেন।
এরই মধ্যে আইনজীবীর পরামর্শে ডিপোর্টেশন প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে আহমেদ হোসেন আবার আদালতে গেলে গ্রেপ্তারের মুখে পড়েন। গত সপ্তাহেই বাবু জানিয়েছিলেন, প্রায় সব আইনজীবীই পরামর্শ দিয়েছেন আমেরিকায় তাঁর ইমিগ্রেশন হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। ডিপোর্টেশন আদেশ প্রত্যাহারের একাধিক উদ্যোগ আদালত প্রত্যাখ্যানের পর নতুন করে আর সুযোগ নেই ।
আহমেদ হোসেনের স্ত্রী তুহিন সেলিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯ জুন বুধবার আদালতে যাওয়ার আগে তিনি কাউকে জানাননি। কেন, কার পরামর্শে গেলেন তাও জানা যায়নি। আইনজীবীদের ব্যয়বহুল অপপরামর্শের বলি হলেন কি না, সেটি এখন প্রশ্ন।’
আহমেদ হোসেন এমনিতেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করেছেন। সদ্য সমাপ্ত নিউইয়র্ক বইমেলায় যোগ দিয়েছেন। নিজের লেখা বই বিক্রি করেছেন। নিজের অস্থিরতা নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক কবিতার কিছু লাইন ছিল এ রকম...
‘আমি তাজ্জব হয়ে জীবনের তারামৃগ খুঁজি আর।
চোখের কার্নিশে লোহিতসাগর লোনাজল নিয়ে।
আমার প্রিয় জন্মভূমি তোমাকে দেখি...।’
কুইন্সের উডহ্যাভেন এলাকায় নিজের বাড়িতে থাকতেন আহমেদ হোসে। সন্তানদের দেখভাল, বাড়ির মর্টগেজ, ভাড়াটে সামাল দেওয়া—সবকিছু তিনি নিজেই করতেন বলে তাঁর স্ত্রী জানালেন। ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর তিনি ফোন করে তাঁর ওষুধ পাঠানোর কথা জানান। তাঁকে আর কোন যোগাযোগও করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনজীবীর কাছে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ডিটেনশন সেন্টারে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগহীন আহমেদ হোসেনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলেই জানান তাঁর স্ত্রী।
নিউইয়র্কে ইমিগ্রেশন নিয়ে কর্মরত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর বলেন, আহমেদ হোসেন তাঁর সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করে পরামর্শ চেয়েছিলেন। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তাঁকে পরামর্শ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন খুব সতর্ক চলাফেরা করেন এবং তাঁর ডিপোর্টেশন আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই বলেও তাঁরা পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এখন তাঁর কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তারের পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে এখন আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপে কোন সুফলের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, যাদের নামে কোন ডিপোর্টেশন অর্ডার আছে, তাদের চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে। ইমিগ্রেশনের জন্য আমেরিকার বর্তমান বাস্তবতা খুব অনুকুল নয়।
No comments