সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেনি by হাফিজ মাহমুদ
পরিবহন
শ্রমিক-মালিকদের দৌরাত্ম ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে ঘটেছে একের এক সড়ক দুর্ঘটনা। রীতিমতো হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি
হয়েছিল সড়ক ব্যবস্থাপনায়। চলতি বছরের আগস্টের শুরুতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই
শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজপথে নেমে এসেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা দেশব্যাপী শুরু করেছিল টানা আন্দোলন। এমন উত্তপ্ত
পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। হঠাৎ করেই
রাজধানীতে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয় পুলিশ। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসে ১৭টি নির্দেশনা। সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন
আইন। সর্বশেষ সেপ্টেস্বর মাসব্যাপী ডিএমপির ট্রাফিক সচেতনতা দিবস পালন।
সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউটস, বিএনসিসি সদস্যদের পুলিশের কাজে সহযোগিতা। এরই মধ্যে ডিএমপির ট্রাফিক সচেতনতা দিবসও শেষ হতে চলছে। এরপরেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় ফিটনেসবিহীন বাসের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কর্মকর্তা। একই সময়ে ফার্মগেটে চলন্ত বাসে উঠতে গেলে পা পিছলে বাসের নিচে চলে যান এক নারী। যাত্রীদের চিৎকারে চালক ব্রেক কষে বাস থামালে প্রাণে রক্ষা পায় ওই নারী। গতকাল সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এবং সাধারণ মানুষ, পথচারী, চালক-চালকের সহকারী, পরিবহন মালিকদের ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে রাজধানীর সড়কের নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। কিছু পয়েন্টে পরিবহনকে আইন মানতে দেখা গেলেও অধিকাংশ স্থানে দেখা গেছে তাদের বিশৃঙ্খলার চিত্র।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে লক্ষ্য করা গেছে সড়কে ভিন্ন চিত্র। পূর্বের থেকে এখানে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। নির্দিষ্ট সিগন্যাল ছাড়া গাড়ি থামছে না। পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছে। কেউ সড়ক থেকে যেতে চাইলে তাদের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়ে ফুটপাথ-ওভারব্রিজ দিয়ে চলতে বাধ্য করাচ্ছে। এখানে ট্রাফিক পুলিশের চারজন সদস্য একজন সার্জেন্ট ও একজন ইন্সপেক্টর কাজ করছেন। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪০ জন। এত কিছুর পরও এখানে অনেক গাড়ি চলছে বেপরোয়া। পুলিশ দেখলেই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাছাড়া যাত্রী তুলছে-নামাচ্ছে যত্রতত্র। এখানে কথা হয় স্কাউট সদস্য আল-আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন-কানুন মেনে চলতে সচেতন করি। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের আহ্বান জানাই। অনেকেই আমাদের কথা শুনে সড়কে চলেন না। তবে কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তারপরও আমরা মনে করি মানুষ আগের থেকে এখন অনেক সতর্ক। তারা আইন মানছেন।
১০ নম্বর গোলচত্বরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন মো. নিজামুদ্দিন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ট্রাফিকের জনবল কম। সড়কের অবস্থাও খারাপ। এ কারণে আমরা সফল হচ্ছি না। যেখানে একটা ক্রসিং দিয়ে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি বাস যেতে পারে, সেখানে ২০ থেকে ২৫টি বাস একসঙ্গে চলে আসে। এ কারণে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরছে না। তবে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ঠিক হয়েছে। এছাড়া গাড়ির চালক-তার সহকারীরাও দিন দিন সতর্ক হচ্ছে। কারণ পুলিশ কোনভাবেই ছাড় দিচ্ছে না। পুলিশের কঠোর মনোভাবের কারণে তারা সড়কে আগের থেকে বেশি নিয়ম মানছে। তিনি আরো বলেন, বৈধ কাগজ থাকার পরও প্রায় প্রতিটি গাড়ির ও তার চালকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেই।
তবে মিরপুর ১০ নম্বরের চিত্র সড়কের অন্য কোথাও তেমন চোখে পড়েনি। যেসব জায়গায় পুলিশ রয়েছে শুধু সেখানেই চালক এবং তার সহকারীরা কিছুটা সতর্ক রয়েছে। বাকি সড়কে আগের অবস্থাই তারা যাত্রী উঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। তারপরে নির্দিষ্ট স্টপেজেও গাড়ি থামছে না। যেখানে স্টপেজ তার থেকে এক দুইশ গজ আগে-পরে গাড়ি থামছে। লোকজনও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। আর নির্দিষ্ট স্টপেজে দেখা যায় রিকশা কিংবা অন্যান্য যানবাহন থামাতে। রাজধানীর কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড। এখানে ডিএমপির নির্দিষ্ট বাস স্টপেজের সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজের সামনে। অথচ বাস থামছে তার অনেক সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচে। কোনো বাসই থামছে না নির্দিষ্ট স্টপেজে। এখানে পুলিশ থাকলে তারা দেখেও দেখছে না। একই চিত্র দেখা গেছে শ্যামলী, শিশুমেলা, কলেজগেটসহ রাজধানীর অধিকাংশ বাস স্টপেজে। ডিএমপির ঠিক করে দেয়া নির্দিষ্ট স্টপেজে কেউ গাড়ি থামাচ্ছে না। এখানে প্রজাপতি পরিবহনের চালক মতিউর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা আইন মানতে চেষ্টা করি। যাত্রীরা নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড়ায় না। যে কারণে আমরা নিয়ম মানতে পারি না। এছাড়া নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রী নামাতে গেলেই তারা চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। বলেন, এত দূরে নিচ্ছেন কেন? আবার যেখানে স্টপেজ দেয়া সেখান থেকে যাত্রীও পাই না। একই কথা বলেন, নিউ ভিশন বাসের চালকের সহকারী নান্টু মিয়া। তিনি বলেন, আমরা যাত্রী তুলে দরজা বন্ধ করে দিতে চাই। যাত্রীরা অনেক সময় ঝগড়া করে দরজা খোলা রাখে। অন্যদিকে নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রী পাই না বলেও দরজা খোলা রাখতে হয়। এরপরে আমাদের তো পুলিশ ছাড়েই না। একটু ভুল করলেই মামলা দেয়। তারা দেখে না ওইদিন আর কোন মামলা দিয়েছে কিনা। একই দিনে পুলিশ একটি গাড়িকে একাধিক মামলা দিলে আমরা কই যাবো।
তবে বাস মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করলে বাকিটা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার। কোনো এক পক্ষ যদি সহযোগিতা না করে তাহলে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা ফিরানো সম্ভব না। তারপরও তারা পরিবহন শ্রমিক, গাড়ি চালক ও সহকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একটা অনিয়ম যাতে দীর্ঘদিন না চলতে পারে সে চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে মাঠে আমাদের চারটি টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। অধিকাংশ পরিবহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরাতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে ঢাকায় যেসব বাস চুক্তিভিত্তিক চালাতো তা বাতিল হয়েছে। তিনি জানান, চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো বন্ধ না করায় পাঁচটি কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করেছেন। আর ঢাকায় বাসগুলো কাউন্টার পদ্ধতিতে চলাচলের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের কাছে এজন্য চিঠিও দিয়েছেন। এ পরিবহন মালিক নেতা আরো বলেন, দুর্ঘটনার জন্য কেবলমাত্র পরিবহন চালকরা দায়ী নয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সাধারণ মানুষও দায়ী। তারা ঠিকভাবে সড়কে ব্যবহার করেন না।
এছাড়া সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডিএমপি কমিশনার এ মাসকে ট্রাফিক সচেতনতার মাস ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ঢাকার সড়কে ১২১টি বাস স্টপেজ, ৪০টি চেক পোস্ট এবং নিরাপদ সড়কের জন্য জেব্রা ক্রসিংসহ বিভিন্ন বিষয় সাধারণ মানুষকে অবহিত করেন। এ সময় তিনি হেলমেটবিহীন কেউ মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না বলেও ঘোষণা দেন। এছাড়া লেগুনা, হিউম্যান হলারসহ সব অবৈধ যানবাহনও বন্ধের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে কিছু সড়কে লেগুনা চলতেও দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে জেব্রা ক্রসিং চিহ্ন এবং সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। ঘোষিত ট্রাফিক সচেতনতা মাসের শেষদিকে এসে সড়কে শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপদের সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে ঢাকার ট্রাফিকের অনেকটা কাজ হয়েছে। আমরা বেশিরভাগ ঠিক করতে পেরেছি। ঢাকা শহরে ভালো বাস সার্ভিস চালু করতে পারলে শৃঙ্খলাটা আরো দ্রুত ফিরতো। আমরা বাস স্টপেজ নিয়ে কাজ করছি। যদিও এটা এখনো তারা মানছে না। আশা করি এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, লক্কড়ঝক্কর বাসগুলো তুলে দেয়া হবে। আমরা আগের অবস্থায় কঠোর আছি। সড়কে আইনশৃঙ্খলার জন্য আমরা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখছি। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনি হাজার মামলা হয়। আর বিশেষ অভিযানের সময় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মামলা হয়। শুধু মামলা দিয়ে নয়, অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে সেগুলো সমাধানের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে হবে।
সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউটস, বিএনসিসি সদস্যদের পুলিশের কাজে সহযোগিতা। এরই মধ্যে ডিএমপির ট্রাফিক সচেতনতা দিবসও শেষ হতে চলছে। এরপরেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় ফিটনেসবিহীন বাসের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কর্মকর্তা। একই সময়ে ফার্মগেটে চলন্ত বাসে উঠতে গেলে পা পিছলে বাসের নিচে চলে যান এক নারী। যাত্রীদের চিৎকারে চালক ব্রেক কষে বাস থামালে প্রাণে রক্ষা পায় ওই নারী। গতকাল সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এবং সাধারণ মানুষ, পথচারী, চালক-চালকের সহকারী, পরিবহন মালিকদের ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে রাজধানীর সড়কের নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। কিছু পয়েন্টে পরিবহনকে আইন মানতে দেখা গেলেও অধিকাংশ স্থানে দেখা গেছে তাদের বিশৃঙ্খলার চিত্র।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে লক্ষ্য করা গেছে সড়কে ভিন্ন চিত্র। পূর্বের থেকে এখানে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। নির্দিষ্ট সিগন্যাল ছাড়া গাড়ি থামছে না। পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছে। কেউ সড়ক থেকে যেতে চাইলে তাদের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়ে ফুটপাথ-ওভারব্রিজ দিয়ে চলতে বাধ্য করাচ্ছে। এখানে ট্রাফিক পুলিশের চারজন সদস্য একজন সার্জেন্ট ও একজন ইন্সপেক্টর কাজ করছেন। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪০ জন। এত কিছুর পরও এখানে অনেক গাড়ি চলছে বেপরোয়া। পুলিশ দেখলেই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাছাড়া যাত্রী তুলছে-নামাচ্ছে যত্রতত্র। এখানে কথা হয় স্কাউট সদস্য আল-আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন-কানুন মেনে চলতে সচেতন করি। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের আহ্বান জানাই। অনেকেই আমাদের কথা শুনে সড়কে চলেন না। তবে কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তারপরও আমরা মনে করি মানুষ আগের থেকে এখন অনেক সতর্ক। তারা আইন মানছেন।
১০ নম্বর গোলচত্বরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন মো. নিজামুদ্দিন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ট্রাফিকের জনবল কম। সড়কের অবস্থাও খারাপ। এ কারণে আমরা সফল হচ্ছি না। যেখানে একটা ক্রসিং দিয়ে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি বাস যেতে পারে, সেখানে ২০ থেকে ২৫টি বাস একসঙ্গে চলে আসে। এ কারণে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরছে না। তবে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ঠিক হয়েছে। এছাড়া গাড়ির চালক-তার সহকারীরাও দিন দিন সতর্ক হচ্ছে। কারণ পুলিশ কোনভাবেই ছাড় দিচ্ছে না। পুলিশের কঠোর মনোভাবের কারণে তারা সড়কে আগের থেকে বেশি নিয়ম মানছে। তিনি আরো বলেন, বৈধ কাগজ থাকার পরও প্রায় প্রতিটি গাড়ির ও তার চালকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেই।
তবে মিরপুর ১০ নম্বরের চিত্র সড়কের অন্য কোথাও তেমন চোখে পড়েনি। যেসব জায়গায় পুলিশ রয়েছে শুধু সেখানেই চালক এবং তার সহকারীরা কিছুটা সতর্ক রয়েছে। বাকি সড়কে আগের অবস্থাই তারা যাত্রী উঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। তারপরে নির্দিষ্ট স্টপেজেও গাড়ি থামছে না। যেখানে স্টপেজ তার থেকে এক দুইশ গজ আগে-পরে গাড়ি থামছে। লোকজনও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। আর নির্দিষ্ট স্টপেজে দেখা যায় রিকশা কিংবা অন্যান্য যানবাহন থামাতে। রাজধানীর কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড। এখানে ডিএমপির নির্দিষ্ট বাস স্টপেজের সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজের সামনে। অথচ বাস থামছে তার অনেক সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচে। কোনো বাসই থামছে না নির্দিষ্ট স্টপেজে। এখানে পুলিশ থাকলে তারা দেখেও দেখছে না। একই চিত্র দেখা গেছে শ্যামলী, শিশুমেলা, কলেজগেটসহ রাজধানীর অধিকাংশ বাস স্টপেজে। ডিএমপির ঠিক করে দেয়া নির্দিষ্ট স্টপেজে কেউ গাড়ি থামাচ্ছে না। এখানে প্রজাপতি পরিবহনের চালক মতিউর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা আইন মানতে চেষ্টা করি। যাত্রীরা নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড়ায় না। যে কারণে আমরা নিয়ম মানতে পারি না। এছাড়া নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রী নামাতে গেলেই তারা চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। বলেন, এত দূরে নিচ্ছেন কেন? আবার যেখানে স্টপেজ দেয়া সেখান থেকে যাত্রীও পাই না। একই কথা বলেন, নিউ ভিশন বাসের চালকের সহকারী নান্টু মিয়া। তিনি বলেন, আমরা যাত্রী তুলে দরজা বন্ধ করে দিতে চাই। যাত্রীরা অনেক সময় ঝগড়া করে দরজা খোলা রাখে। অন্যদিকে নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রী পাই না বলেও দরজা খোলা রাখতে হয়। এরপরে আমাদের তো পুলিশ ছাড়েই না। একটু ভুল করলেই মামলা দেয়। তারা দেখে না ওইদিন আর কোন মামলা দিয়েছে কিনা। একই দিনে পুলিশ একটি গাড়িকে একাধিক মামলা দিলে আমরা কই যাবো।
তবে বাস মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করলে বাকিটা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার। কোনো এক পক্ষ যদি সহযোগিতা না করে তাহলে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা ফিরানো সম্ভব না। তারপরও তারা পরিবহন শ্রমিক, গাড়ি চালক ও সহকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একটা অনিয়ম যাতে দীর্ঘদিন না চলতে পারে সে চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে মাঠে আমাদের চারটি টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। অধিকাংশ পরিবহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরাতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে ঢাকায় যেসব বাস চুক্তিভিত্তিক চালাতো তা বাতিল হয়েছে। তিনি জানান, চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো বন্ধ না করায় পাঁচটি কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করেছেন। আর ঢাকায় বাসগুলো কাউন্টার পদ্ধতিতে চলাচলের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের কাছে এজন্য চিঠিও দিয়েছেন। এ পরিবহন মালিক নেতা আরো বলেন, দুর্ঘটনার জন্য কেবলমাত্র পরিবহন চালকরা দায়ী নয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সাধারণ মানুষও দায়ী। তারা ঠিকভাবে সড়কে ব্যবহার করেন না।
এছাড়া সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডিএমপি কমিশনার এ মাসকে ট্রাফিক সচেতনতার মাস ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ঢাকার সড়কে ১২১টি বাস স্টপেজ, ৪০টি চেক পোস্ট এবং নিরাপদ সড়কের জন্য জেব্রা ক্রসিংসহ বিভিন্ন বিষয় সাধারণ মানুষকে অবহিত করেন। এ সময় তিনি হেলমেটবিহীন কেউ মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না বলেও ঘোষণা দেন। এছাড়া লেগুনা, হিউম্যান হলারসহ সব অবৈধ যানবাহনও বন্ধের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে কিছু সড়কে লেগুনা চলতেও দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে জেব্রা ক্রসিং চিহ্ন এবং সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। ঘোষিত ট্রাফিক সচেতনতা মাসের শেষদিকে এসে সড়কে শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপদের সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে ঢাকার ট্রাফিকের অনেকটা কাজ হয়েছে। আমরা বেশিরভাগ ঠিক করতে পেরেছি। ঢাকা শহরে ভালো বাস সার্ভিস চালু করতে পারলে শৃঙ্খলাটা আরো দ্রুত ফিরতো। আমরা বাস স্টপেজ নিয়ে কাজ করছি। যদিও এটা এখনো তারা মানছে না। আশা করি এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, লক্কড়ঝক্কর বাসগুলো তুলে দেয়া হবে। আমরা আগের অবস্থায় কঠোর আছি। সড়কে আইনশৃঙ্খলার জন্য আমরা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখছি। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনি হাজার মামলা হয়। আর বিশেষ অভিযানের সময় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মামলা হয়। শুধু মামলা দিয়ে নয়, অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে সেগুলো সমাধানের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে হবে।
No comments